মুক্তি ,ভক্তি ও ষড়রিপু এবং মানব জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব:ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উপায়।

মানবদেহমহিমা  
জ্ঞানিনঃ মতিঃ — মানবদেহঃ মন্দিরসমঃ।  
তস্য তৃষু দিশাসু অস্তি স্বর্গ মুক্তি মোক্ষদ্বারম্।  
অন্যতোऽস্য অধোগতিঃ নরকোऽথ শ্মশানম্।  
ধন্যং হি মানবীয়ং জন্ম, দেবযোনিভ্যঃ শ্রেষ্ঠতরম্॥


পৃথিবীতে সৃষ্ট প্রাণীর মধ্যে মানুষই সর্বশ্রেষ্ঠ । এই  শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের পেছনে মানুষের মধ্যে যে বিষয়গুলো সদা-সর্বদা ক্রিয়াশীল তা হলো তার বিবেক, বুদ্ধি, বিচক্ষণতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা।

1.বিবেক- হলো মানুষের অন্তর্নিহীত শক্তি যার দ্বারা ন্যায়, অন্যায়, ভালোমন্দ,  ধর্ম,অধর্ম বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা অর্জিত হয়।

2.বুদ্ধি -হলো মানুষের বিচার শক্তি  বা বোধশক্তি যার দ্বারা আমরা পেয়ে থাকি  জীবন ও জগতে সংগঠিত যাবতীয় ক্রিয়াকলাপে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিজ্ঞানসম্মত ক্ষমতা ও দক্ষতা ।

3.বিচক্ষণতা হলো মানুষের দূরদর্শীতা যার মাধ্যমে মানুষ জীবনে আগত ও অনাগত বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে সর্বত্র সাবলীল ও সফল করে তুলতে সক্ষম হয়।

4.আত্মনিয়ন্ত্রণ- হলো মানুষের সংযমন যার দ্বারা মানুষ তার জীবনের সর্বত্র সংযত,সুসংবদ্ধ ও শৃঙ্খলিত জীবন অনুধাবনে সক্ষম হয়।

कामः क्रोधः लोभो मोहः मदः मत्सरश्च वा।
एषां संयम एव हि आत्मसंयम उच्यते॥
एष आत्मसंयमः गीता-उपनिषदोः कृतेः।
चित्तशुद्धिर्नाम चैव आत्मविजय इति च॥
मानवदेहमहिमा
ज्ञानिनः मतिः — मानवदेहः मन्दिरसमः।
तस्य त्रिषु दिशासु अस्ति स्वर्ग मुक्ति मोक्षद्वारम् ।
अन्यतोऽस्य अधोगतिः नरकोऽथ श्मशानम्।
धन्यं हि मानवीयं जन्म, देवयोनिभ्यः श्रेष्ठतरम्॥


সুন্দর ও আদর্শ জীবন গঠনের উল্লেখিত সূচকগুলো যার কারণে প্রায়ই বাধাপ্রাপ্ত ও শ্বাসরুদ্ধ হয় তার নাম হলো ষড়রিপু । এই ষড়রিপু আমাদের মনকে অনিয়ন্ত্রত করে এবং অনিয়ন্ত্রত মন আমাদের কুপথে চালনা করে। মন কে নিয়ন্ত্রণ করার শ্রেষ্ট উপায় হল ভগবান শ্রী নারায়ণের চরণের ধ্যান  এবং ঐকান্তিক ভক্তি । 
The Eternal Truth

O wise one, still thy wandering mind,
And hearken to this truth divine:
By the Supreme Will all worlds arise,
This cosmic play, His grand design.

As day gives place to silent night,
And night to dawn’s returning light,
So ages roll in ceaseless flow,
Each bearing deeds the Lord bestows.

In every life the lines are cast 
Of joy, of grief, of birth, of past;
No mortal hand can twist or break
The law divine that none forsake.

What fate has written shall be done,
By none reversed, by none undone;
Then why lament, O noble heart,
For what was marked ere life’s first start?

Alone you came through nature’s gate,
Alone shall leave when ends your fate;
Friends and kin, companions dear,
Walk with you only while you’re here.

Therefore arise with steadfast soul,
Perform thy work, fulfill thy role;
Seek not reward, nor fruit, nor gain,
In God’s own joy dissolve thy pain.

Offer each act, each word, each breath,
Unto the Lord who governs death;
Thus tranquil, pure, and duty-bound,
Let peace within thy heart be found.

Surrender all to Love supreme,
Whose will upholds the cosmic dream;
And he who walks this path alone,
Shall find the Lord,  and be His own.
মানবজীবনস্য উত্তম মার্গঃ  

সত্য, শান্তি, দয়া, তপো ভাগবত ধর্মমার্গঃ।  
মানবানাং জীবনস্য সর্ব উত্তম মার্গঃ॥  

নিষ্কামকর্মধর্মো মোক্ষস্য অচ্যুতো মার্গঃ।  
এতে দ্বাবপি উত্তমমার্গৌ, মার্গেষু শ্রেষ্ঠ মার্গঃ॥


 শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে ষড়রিপুকে এই সংসার সাগরের জল জন্তু হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এই সংসার সাগরে  ভক্তি একটি নৌকা আর শ্রী হরি হলেন পারাপারের কান্ডারী কিন্তু এই ষড়রিপু না আমাদের  নৌকার কাছে আস্তে দেয়, না মিলতে দেয় সংসার সাগর পারাপারের কান্ডারীর সাথে
তাই মানুষ কে এই  ষড়রিপু কে জানা ,চেনা ও এর থেকে  মুক্তির উপায় জানা একান্ত প্রয়োজন।

ষড়রিপু কি ?:-
ষড়র অর্থ ছয় ও  রিপুর অর্থ কণ্টক অথবা শত্রু ,অর্থাৎ ষড়রিপুর অর্থ হলো ছয়টি শত্রু। মানব জীবনে কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ(অহংকার) ও মাৎসর্য্য (হিংসা ) কে ষড়রিপু বলা হয়  । এই ষড়রিপুর  আশ্রয় স্থল হল ,মনই  এর ধারক ও বাহক।  তাই  এই ষড়রিপু থেকে বাঁচার উপায়  হল মনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা  ও মন পরিষ্কার রাখা। 


ষড় রিপুর প্রথম রিপু হলো কাম।
কাম রিপু(lust)- কাম শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো কামনা,বাসনা,আসঙ্গ লিপ্সা ইত্যাদি । কাম শব্দের অর্থ যেমন কামনা, আবার মনে যে ভাবের উদয় হলে নারী পুরুষের প্রতি ও পুরুষ নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয় তাকেও বলে কাম ।


কাম শব্দ যার আভিধানিক অর্থ  যৌন সম্ভোগের ইচ্ছা ,জীবের বংশ বিস্তারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তাই এই  কামশক্তি মানুষের জন্য অপরিহার্য। কামশক্তি নেই সম্ভবত এমন কোন প্রাণীই পৃথিবীতে নেই। এই শক্তি ব্যতিরেকে একজন মানুষ গতানুগতিক রীতিতে  অপূর্ণ মানুষ বলে বিবেচিত হয়। সুতরাং,প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই  থাকা দরকার নিয়ন্ত্রিত কামশক্তি। এই নিয়ন্ত্রিত কামশক্তি যখন অনিয়ন্ত্রিত,বেপরোয়া ও বেসামাল হয়ে যায় তখনই তা হয়ে যায় শত্রু। অনিয়ন্ত্রিত কামশক্তি জন্ম দেয় পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনে অবিশ্বাস,কলংক,শোক,সন্তাপ,অপমান,নিন্দা,লাঞ্ছনা এবং ভৎসনা।

মানুষ যদি কাম রিপুর (যৌন সম্ভোগের ইচ্ছার) বশীভূত হয়ে কাম রিপুর দাসত্ব করে তাহলে  সে চরিত্রহীন হয় এবং  জ্ঞান শুন্য হয়ে অমানুষে পরিণত হয় ও পরে ধর্মহীন হয়ে সে পাষণ্ড হয় এবং সে   সমাজে- অসামাজিক এবং অপ্রাকৃতিক কাজ করে এবং  সমাজ কে কলুষিত বা দূষিত করে শুধু তাই নয় সে তাঁর  ইহলোক এবং পরলোক ও খারাপ করে নেয় । 

ষড়রিপুর মধ্যে কাম রিপু-ই সর্বাপেক্ষা দুর্জয় রিপু। কাম রিপু পঠন - পাঠন,কাজকর্ম , ঈশ্বরের পূজা ,উপাসনা, ইত্যাদি কাজে বাধা প্রদান করে ।


অন্যদিকে কাম শব্দের অর্থ কামনাঃ- মনে কামনার উদয় হলে ইন্দ্রিয় ,মন ,প্রাণ ,দেহ ,ধর্ম ,ধৈর্য্য,বুদ্ধি ,লজ্জা,শ্রী ,তেজঃ ,স্মৃতি ও সত্যের বিনাশ ঘটে। ভাগবত পুরাণ ,সপ্তম স্কন্ধ ,দশম অধ্যায়।

কামনার দ্বারা মানুষ জীবনে বেঁচে থাকার শক্তি পায়, কামনা আছে বলেই মানুষ মানুষকে ভালবাসে, ঘর বাঁধে, সংসারধর্ম পালন করে। কামনাকে নির্মূল করা জটিল তবে নিয়ন্ত্রণ সহজ এবং সংসারী লোকেদের পক্ষে  কামনা কে নিয়ন্ত্রণ করাই শ্রেয়। 

কাম রিপু থেকে মুক্তির উপায় 
কাম (যৌন সম্ভোগের ইচ্ছা) সর্বপ্রথম ইন্দ্রিয়ে প্রবিষ্ট হয়ে মন ও বুদ্ধিকে মোহিত করে এবং এর দ্বারা মানুষকে মোহিত করে। মন,বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়গুলো হচ্ছে এর আবাসস্থল বা অবলম্বন। তাই প্রথমে ইন্দ্রিয়গুলোকে নিজের বশে এনে এই কাম রুপী শত্রুকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আত্মজ্ঞান অর্জন কাম রিপুকে বশীভূত করতে পারে 

কাম রিপু থেকে মুক্তির অন্য একটি উপায়  হল সৎ ,বুদ্ধিমান,উত্তম চরিত্রসম্পন্ন ,ধার্মিক ও নির্ভীক এর সাথে বিবাহঃ। ভগবান শ্রী হরির ঐকান্তিক ভক্তি, লীলাকীর্তন শ্রবণ ,চিন্তন ,মনন ,পঠন (গীতা ,শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ )ও সাধু সংগ গ্রহণ কাম রিপু থেকে মুক্তির অন্য একটি উপায়। জীবনে যারা এই  কামশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তারাই জীবনে সুখ,সমৃদ্ধি,মান,সম্মান লাভ করে,তারাই পৌছাতে পারে সফলতার শীর্ষে।

ষড় রিপুর দ্বিতীয় রিপু হলো ক্রোধ
ক্রোধ রিপুঃ(anger)- 
ক্রোধ শব্দের অর্থ হলো রোষ,দ্বেষ,চোট,ক্ষিপ্ততা,প্রকোপ,উষ্মা,গর্জন করা,উন্মাদনা,কোপ,প্রতিশোধ নেবার আবেগ প্রভৃতি । ক্রোধ  দুই প্রকারঃ- রাগ এবং অনুরাগ। 

রাগ:-মানুষ রাগের বশীভূত হয়ে অতিতুচ্ছ বিষয় নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে, যার ফলশ্রুতিতে সে তার নিজের জীবনে, সংসারে, সমাজে অশান্তি বয়ে আনে। তাই রাগ  কে সম্বরণ করে ধৈর্য্য ধারণ করাই  জ্ঞানীর পরিচয়। রাগ হচ্ছে ধ্বংসাত্মক বা ক্ষতিকারক  আর অনুরাগ হচ্ছে সৃজনশীল ও কোন মহৎ উদ্দেশ্য বা সাধনা বাস্তবায়নের সোপান স্বরূপ।

অনুরাগ:- অনুরাগ হলো বাস্তব বা কাল্পনিক কোনাে বস্তু বা অবস্থার প্রতি এক বিশেষ  অনুভূতি যা ব্যক্তিকে কিছু করতে অনুপ্রাণিত করে। কোন মহৎ কাজে  সফল হতে হলে  তার জন্য অনুরাগ থাকতেই  হবে, অনুরাগ না থাকলে  বিপথগামী রিপু ও ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করা যায় না। মানুষ তার জীবনে রাগের বশবর্তী হয়ে যত কাজ করে তার সামান্যতম যদি অনুরাগের সাথে মহৎ উদ্দেশ্য গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের  চেষ্টা করে তাহলে সে মহৎ কাজে  সিদ্ধিলাভ করে। অনুরাগের একটি ভালো উদাহরণ হলো কালিদাসের কাহিনী । পূর্বে  মূর্খ কালিদাস এই  অনুরাগের জন্যই  কবিত্বশক্তি অর্জন করেন এবং মহাকবি হন এবং  রাজা বিক্রমাদিত্যের  সভায় তিনি  নবরত্ন হিসাবে বিশেষায়িত হন ।
 
ক্রোধ  রিপু থেকে মুক্তির উপায় 
ক্রোধ খুবই দুর্জয় রিপু, ক্রোধ রিপুকে বশীভূত করতে না পারলে জীবনের কোন কাজেই সফলতা আসে না । ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তার মধ্যে শিষ্টাচার,ভদ্রতা,আত্মপ্রতিষ্ঠা বাড়ে এবং সে সহজে বিদ্যা অর্জন করতে পারে ক্রোধ রিপুকে বশীভূত করতে হলে ধৈর্য্য, সহনশীলতা ও ক্ষমা গুণের অধিকারী হতে হয়। আত্মজ্ঞান অর্জন ক্রোধ রিপুকে বশীভূত করতে পারে ভগবান শ্রী হরির ঐকান্তিক ভক্তি, লীলাকীর্তন শ্রবণ ,চিন্তন ,মনন ,পঠন (গীতা ,শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ) ও সাধু সংগ গ্রহণ ক্রোধ রিপুকে বশীভূত করতে পারে। 

ষড় রিপুর তৃতীয় রিপু হলো লোভ

লোভ রিপুঃ(greed)- অতৃপ্ত রসনাকে তৃপ্ত করার ও অপ্রাপ্তি বস্তুকে প্রাপ্তির প্রবল ইচ্ছার নাম লোভ। মানুষ যখন লোভের বশীভূত হয়ে পড়ে তখন তার মানবতা,বিবেক, বিচক্ষণতা,আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা  সৎ বুদ্ধি  লোপ পায়। সে স্বপ্নচারী হয়ে স্বপ্নের সংসারের  রাজা হয়ে  লোভান্ধ হয়। তখনই সে লোভের নরকে নিক্ষিপ্ত  হয়ে যায় এবং সমস্ত  বিপদ ও ভয়াল সর্বনাশ তাকে ঘিরে ফেলে। 

লোভ রিপু থেকে মুক্তির উপায় 

লোভ খুবই দুর্দমনীয় রিপু, অতিরিক্ত লোভের কারণে মানুষ বিবেকহীন হয়ে মনুষ্যত্ব, ধর্ম-কর্ম হারিয়ে ফেলে। লোভ রিপুকে বশীভূত করতে হলে একান্তভাবে আত্মসংযমী হতে হবে, সংযম অভ্যাস দ্বারা  হিতাহিত বোধকে জাগ্রত করে লোভ রিপুকে বশীভূত করা যায়। ভগবান শ্রী হরির ঐকান্তিক ভক্তি, লীলাকীর্তন শ্রবণ ,চিন্তন ,মনন ,পঠন (গীতা ,শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ) ও সাধু সংগ গ্রহণ এই রিপুকে বশীভূত করতে পারে। ।
নিত্যং পাঠ্যতে গীতা-ভাগবতম্।
মুক্তিমোক্ষপ্রদাতে এতদ্ দ্বয়ম্॥

গীতা–ভাগবতম  মুখ্য উদ্দেশ্যঃ ।  
গীতা শিক্ষয়ত্যেব নিত্যশঃ নিঃস্বার্থকর্মাণি।  
স্বাতন্ত্র্যবুদ্ধিজাতানি ধর্মকার্যাণি পাবনানি॥  

ভাগবতম্ হি প্রেমার্থং দত্তং মানব রূপিণাম্।  
শুদ্ধয়ত্যেব কর্মাণি হৃদয়ং চ হরিপ্রিয়ে॥  

উভে পাবযত  সত্ত্বং জীবনস্য  রহস্যত ।  
কর্মৈব পূজ্যতে নিত্যং প্রেমৈব মোক্ষ উচ্যতে॥

 


ষড় রিপুর চতুর্থ  রিপু হলো মোহ 
মোহ রিপুঃ(attachment)- স্বপ্ন কে সত্যি ,অবাস্তবকে বাস্তব মনে করে এবং ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য ক্ষণস্থায়ী কিছু কিছু বিষয়ের উপর ভ্রান্তধারণা পোষন করে তাতে মোহিত হয়ে থাকার নামই মোহ। যেমন  অর্থ-সম্পদের মোহ, রূপের মোহ, পূরুষের স্ত্রীতে মোহ, নারীর পূরুষের উপর  মোহ,সংসারের মোহ, নেশার মোহ ইত্যাদি।


মোহ শব্দটি অজ্ঞানতা, অবিদ্যা, মুর্খতা, মূঢ়তা, নির্বুদ্ধিতা, ভ্রান্তি, মুগ্ধতা, মায়া, ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মোহ ষড় রিপুর মধ্যে এটি অন্যতম একটি রিপু। কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ ও মাৎসর্য এ সবকটির উপর মোহ প্রভাব খাঁটিয়ে থাকে। অর্থাৎ মোহ দোষে দূষিত ব্যক্তি বাকি পাঁচটি রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাকে যে কোন রিপু অতি সহজেই গ্রাস করতে পারে। 

মোহ রিপু থেকে মুক্তির উপায় 
আত্মজ্ঞান,জ্ঞানীজনের উপদেশ,সৎসঙ্গ, সৎগুরু ও সাধুসঙ্গ ছাড়া মোহ রিপু থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। মানুষ মোহের বশবর্তী হয়ে যখন তার জীবন অতিবাহিত করে,তখন যদি সে কোন ভাবে তার মনে সামন্যতম অংশে  সে মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালবাসা ও ঈশ্বরকে পাওয়ার মোহ সৃষ্টি করতে পারে,তাহলে সে ধীরে ধীরে মোহ রিপু থেকে মুক্তি পায় এবং মানব জীবনে আসে  পরম শান্তি

 ভগবান শ্রী হরির ঐকান্তিক ভক্তি, লীলাকীর্তন শ্রবণ ,চিন্তন ,মনন ,পঠন (গীতা ,শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ )ও সাধু সংগ গ্রহণ এই রিপুকে বশীভূত করতে পারে। 

ষড় রিপুর পঞ্চম রিপু হলো মদ বা অহংকার
 অহংকার রিপু (arrogance/vanity)মদ রিপুঃ- 
অহংকার হলো দম্ভ, গর্ব,দর্প,মদ্য, প্রমত্ততা, বিহবল ভাব ইত্যাদি। অহংকার রিপু হচ্ছে কাম-ক্রোধ-লোভের অতি মাত্রায় বহিঃ প্রকাশ।  অহংকার মানুষকে তার প্রকৃত অবস্থা থেকে বিকৃত করে দেয় এবং তার আসল রূপটি লোপ পায়।

 অহংকারী  মানুষদের অধিকাংশই আত্মশ্লাঘায় ভোগে। এই আত্মশ্লাঘা (নিজের প্রশংসা) তার নিজের মধ্যে নিহিত আত্মবোধ বা আত্মদৃষ্টিকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে সে পৃথিবীর সবকিছুই তুচ্ছ মনে করে ধরাকে সরাজ্ঞান করে থাকে। অহংকার জীবনের অর্জিত বা সঞ্চিত যাবতীয় সম্পদকে চোখের নিমেষে  ধ্বংস করে দিতে পারে।

কথায় বলে- অহংকার পতনের মূল। অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় যে, মানুষ অনেক সাধনা করে, ত্যাগ করে যা কিছু অর্জন করে তা সে অহংকারের কারণে ধরে রাখতে পারে না। তার অহংকার ধীরে ধীরে তাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অহংকারী  মানুষ আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য খুব বেশি পীড়াপীড়ি করে থাকে। সর্বত্রই চায় তার সর্বোচ্চ সাফল্য এবং তাতে আত্মঅহংকারে স্ফীত হয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার প্রাণান্ত চেষ্টায় বিভোর-বিহবল হয়ে পড়ে। ফলে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি তো পায়ই না; উপরন্তু হীন ও ক্ষুদ্র বলেই স্বীকৃতি পায়। 

অহংকার রিপুর বশবর্তী মানুষের সাধারণত ইশ্বরে ভক্তি থাকে না, তার অতিদ্রুত  মতিভ্রম  ঘটে ।

প্রতিজ্ঞাদোষ – নীতি-শ্লোক

সম্পূর্ণঃ সংসারঃ জগন্নাথস্য অধীনঃ।
অস্মিন্ ভবতঃ প্রতিজ্ঞা ন উচিতম্।
প্রতিজ্ঞা কেবলং জীবস্য একঃ অহংকারঃ।
এতৎ সদা সর্বত্র অহিতকারি বর্জনীয়ম্॥

অহংকার 
রিপু থেকে মুক্তির উপায় 

অহংকার রিপু থেকে মুক্তি পেতে হলে আত্মজ্ঞান,ইশ্বরে ভক্তি এবং বিশ্বাস প্রয়োজন। মনের  মধ্যে ভাবা দরকার আমি জীবনে যা কিছু পেয়েছি  তাহা সব ভগবানের কৃপায়।  সমাজের উচুতলার ধনী লোকের দিকে নজর না দিয়ে, গরীব-দুঃখী ও শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধীদের দিকে গভীরভাবে মনযোগ নিবিষ্ট করলে ক্রমে-ক্রমে অহংকার রিপু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়া অহংকার রিপু থেকে মুক্তি পেতে হলে  আমাদের বিশুদ্ধ (আত্ম তত্ব) জ্ঞান কে বাড়াতে হবে কারণ প্রকৃত বা বিশুদ্ধ (আত্ম তত্ব) জ্ঞান যত  বাড়বে  অহংকার তত  কমবে এবং  অসম্পূর্ণ বা অপ্রকৃত জ্ঞান (নকল জ্ঞান)  যত  বাড়বে  অহংকার তত  বাড়বে। 

ভগবান শ্রী হরির, ঐকান্তিক ভক্তি, লীলাকীর্তন শ্রবণ ,চিন্তন ,মনন ,পঠন (গীতা ,শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ )ও সাধু সংগ গ্রহণ এই রিপুকে বশীভূত করতে পারে।


 

ষড় রিপুর ষষ্ঠ রিপু হলো মাৎসর্য বা হিংসা
হিংসা রিপুঃ(envy/jealousy)-(মাৎসর্য্য রিপু)

ছবি-ডাঃ পার্থ প্রতিম।
 
হিংসার আভিধানিক অর্থ হলো ধ্বংসাত্মক ঈর্ষা,দ্বেষ,অনিষ্ট,পরশ্রীকাতরতা,বধ,হনন ইত্যাদি। কোনো পরিচিত বা নিকটজনের প্রশংসা শুনলে যদি যন্ত্রণা অনুভূত হয় এবং নিন্দা শুনলে যদি আনন্দ হয়। তাই হল ঈর্ষা এবং  ধ্বংসাত্মক ঈর্ষা হল হিংসা।

 হিংসার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো পরশ্রীকাতরতা। পরশ্রীকাতরতা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে চরম অশান্তি ডেকে আনে। পরশ্রীকাতরতার তিনটি দিক রয়েছে।
 
এক-অন্যের ভাল কিছু দেখলে তার গা জ্বলে যাওয়া।
 
দুই -অপর কেউ ভাল কিছু করলে তার বিরোধিতা করা কিংবা ভাল কাজটির নেতিবাচক দিকগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে অন্যের সামনে হাজির করা।
 
তিন-বেঁকে বসা /অমান্য করা(উর্ধ্বতন এর বেলায় ): ঘৃণা করা  /অবজ্ঞা করা (অধস্তনদের বেলায়) ।
 
হিংসা রিপুর বশবর্তী মানুষের মন হিংসার আগুনে  দাউ দাউ করে প্রতিনিয়ত জ্বলতে থাকে। অন্যের ভাল সহ্য করতে না পারা এবং অতি আপন জনকেও অযথা সন্দেহের চোখে দেখা হিংসা রিপুর কাজ।

 হিংসা রিপুর বশবর্তী মানুষ অন্যের ভাল সহ্য করতে না পারার কারণে অপরের দুঃখে আনন্দিত হয়, অপরের আনন্দে হিংসা হয় এবং মনেমনে অপরের অনিষ্ট চিন্তা করে, কুট-কৌশলে অপরের ক্ষতি সাধন করে। হিংসা রিপুর বশবর্তী মানুষ মায়াবী কাল সাপের মতো। 


হিংসা রিপুর বশবর্তী মানুষ এতই কুটিল স্বভাবের হয় যে, সে অতি আপন জনের ভালও সহ্য করতে পারে না এবং তার ক্ষতি সাধন করতে দ্বিধাবোধ করে না। হিংসা রিপুর বশবর্তী মানুষের ধর্মে কর্মে বিশ্বাস থাকে না । 
ছবি-ডাঃ পার্থ প্রতিম।

হিংসা রিপু থেকে মুক্তির উপায়  
আত্মজ্ঞান,জ্ঞানীজনের এবং সৎগুরুর উপদেশ,সৎসঙ্গ ও সাধু সঙ্গ ব্যতিত হিংসা (মাৎসর্য্য) রিপু কোন ভাবেই বশীভূত হয় না। ভগবান শ্রী হরির লীলাকীর্তন শ্রবণ ,চিন্তন ,মনন ,পঠন (গীতা ,শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ )ও সাধু সংগ গ্রহণ এই রিপুকে বশীভূত করতে পারে। ।

ঈর্ষা ও হিংসা:-
 আভিধানিক অর্থে 'ঈর্ষা' আর 'হিংসা' প্রায় সমার্থক হলেও শব্দ দুটির প্রায়োগিক অর্থে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। ঈর্ষা ও হিংসা প্রায় একই রকমের  আবেগ, তবে হিংসাকে বলা হয় ঈর্ষার চরম পর্যায় বা ঈর্ষার চরম  বহিঃপ্রকাশ।
 অর্থ, বিত্ত ,বুদ্ধি ,মেধা,রূপ ও  সৌন্দর্য  ইত্যাদি  থেকেই যাবতীয় ঈর্ষার উৎপত্তি । নিজের যা আছে তাকে রক্ষা করার চেষ্টা থেকেও ঈর্ষার জন্ম হয়,আবার তুলনা থেকে ঈর্ষার জন্ম হয় কিছু হারানোর আশঙ্কায় অস্বাভাবিক এবং অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া হলো ঈর্ষা, আর এই প্রতিক্রিয়া যখন মনে অন্যের ক্ষতি করার ইচ্ছে তৈরী করে, তখন তা হলো ধ্বংসাত্মক ঈর্ষা বা হিংসা। 

ঈর্ষা থেকে মুক্তির উপায় । 

ঈর্ষা থেকে মুক্তির জন্য সুস্থ সমাজ, সমবণ্টন ও সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন। চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সমতা রাখাটাও জরুরি।এছাড়া নিজের বোধ,বিবেচনা,বুদ্ধি দিয়ে বাস্তবের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারলে ঈর্ষাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। 
এছাড়া
ষড়রিপুর প্রভাব,ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন  করার জন্য আমাদের মন কে শান্ত ও পরিষ্কার রাখতে হবে, তার কারণ মন হলো জলের মতো ,মনে খারাপ চিন্তা এলে মন নর্দমার মতো নোংরা হয়ে যায় ,কিন্তু যদি মনে ভালো চিন্তা আসে তাহলে সেটি গঙ্গা জলের মতো পবিত্র হয়ে যায়। ভগবান শ্রী হরির , ঐকান্তিক ভক্তি, লীলাকীর্তন শ্রবণ ,চিন্তন ,মনন ,পঠন (গীতা ,শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ )ও সাধু সংগ গ্রহণ এই রিপুকে বশীভূত করতে পারে।

মনকে পরিষ্কার ও শান্ত  রাখার সামান্য উপায় 
নিষ্কামভাবমহিমা।
নিষ্কামকর্ম পাপং নাশয়তি,
নিষ্কামধর্মঃ প্রভোর্মনসি জয়তি।

নিষ্কামস্য জীবনে নৈব বন্ধনম্,
নিষ্কামভাবঃ পরমং তু সাধনম্॥

মানব জীবন এবং ষড়রিপু
মানব জীবন বড়ই বিচিত্র ।  আমাদের জীবনে চলার পথে ষড়রিপু প্রতিনিয়ত ক্রিয়াশীল। প্রতিটি মুহূর্ত আমাদেরকে ষড়রিপুর মুখোমুখি হতে হয়। জ্ঞানী মানুষ ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করে মনকে শুদ্ধ করে এবং তার মাধ্যমে দেহ শুদ্ধ করে ঈশ্বরের  আশীর্বাদ নিয়ে  মানব থেকে মহামানব হয়ে যাচ্ছেন অথচ অজ্ঞানী মানুষ  হাবুডুবু খাচ্ছেন ষড়রিপুর ভয়াল গ্রাসে। আর এই অজ্ঞানী মানুষ গুলি যখন  পৌঁছান তাঁদের  জীবনের  অন্তিম  পর্যায়ে এবং  জীবনের শেষ  অঙ্কটি  মেলাতে  চেষ্টা  করেন ,তখন তারা ভাবেন জীবন  অঙ্ক টা কে  মেলাতে  গিয়ে  কে পেলাম শুধু  শূন্য  দিয়ে ভরে  গেলাম। 

তাই আমাদেরকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ভাবতে হবে, নিরীক্ষণ করতে হবে জগত ,জীবন ও সত্য কে। আমাদের মনে রাখতে হবে   শ্রীমদ্ভাগবতের মহান উপদেশ:-  সংকল্প ত্যাগ করলে কামনা কে জয় করা যায়। অর্থ কে অনর্থ মনে করে লোভ কে জয় করা যায়। তত্ত্ব বিচারের দ্বারা ভয় কে জয় করা যায়। অধ্যাত্ম জ্ঞানের দ্বারা শোক ও মোহ কে জয় করা যায়। সাধু সঙ্গ  দ্বারা অহংকার কে জয় করা যায়। মন ,প্রাণ ,শরীর কে নিশ্চেষ্ট (চেষ্টাহীন) করে হিংসা কে জয় করা যায়।


আমাদের  চাইতে হবে সত্য কে, আর মনে রাখতে হবে,আমাদের মানব জীবনের  প্রধান উদ্দেশ্য অর্থ উপার্জন এবং ভোগবিলাস নয় এর প্রধান  উদ্দেশ্য হল মুক্তি অর্থাৎ জন্ম  মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি তাই আমাদের  মনে রাখতে হবে ''কাজ করো বুদ্ধি দিয়ে,জীবন যাপন করো শুদ্ধি দিয়ে''।


আমাদের  মনে রাখতে হবে আমাদের  শরীর একটি ভাড়া ঘরের মতো ,সময় হলেই আমাদের এই শরীর কে ছেড়ে অন্য শরীরের আশ্রয় নিতে হবে  এটাই পরম সত্য। অথচ মানুষের মনের মধ্যে  মধ্যে লুকিয়ে থাকা ষড়রিপুর মধ্যে  মোহ রিপু মানুষকে  এই সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং  কাম-ক্রোধ-লোভ -মদ (অহংকার)-মাৎসর্য্য (হিংসা ) এই পাঁচ টি  রিপু মানুষকে অধোগামী করে এবং প্রবল আকার ধারণ করলে মানুষকে  নরকে নিক্ষেপ করে।  তাই মানব জীবনের আসল  উদ্দেশ্য প্রাপ্তির জন্য ষড়রিপুর উপর নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক যার জন্য ,মানব জীবনে অটুট সংযম, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও কঠোর পরিশ্রম (সাধনার ) প্রয়োজন। সংযম সাধনার মাধ্যমেই ষড়রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। 

আমাদের ধর্মগ্রন্থ  ও  জীবন দর্শন গুলোর  অন্যতম উপদেশ হলো:- কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যকে  নিয়ন্ত্রণ , জীবনে সুখ, শান্তি, মহৎ কার্য সম্পাদন, সৃজনশীলতা এবং মানব জীবনের চরম উদ্দেশ্য ঈশ্বর প্রাপ্তি ।

 আসুন আমরা সবাই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যকে নিয়ন্ত্রণ করি এবং  জীবনে সুখ, শান্তি, মহৎ কার্য সম্পাদন, সৃজনশীলতা এবং মানব জীবনের চরম উদ্দেশ্য ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য  প্রয়াস করি এবং  মন কে শান্ত রাখার জন্য ঈশ্বরের শ্রী চরণ যুগল কে স্মরণ করে  সুমধুর  নাম সংকীর্তন শ্রবণ করি। 


ষড়রিপুর উপর পূর্ণ  নিয়ন্ত্রণ। 
ষড়রিপুর উপর পূর্ণ  নিয়ন্ত্রণ পাওয়া খুবই জটিল। মহর্ষি  বিশ্বামিত্র অনেক বছর তপস্যা করেও ষড়রিপুর উপর পূর্ণ  নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে   অপ্সরা  মেনকা র প্রেমে পড়েছিলেন।  ষড়রিপুর উপর পূর্ণ  নিয়ন্ত্রণ একমাত্র শ্রী হরির চরণ কমল এর ধ্যান এর মাধ্যমে ই  সম্ভব। মহারাজ অম্বরীষ শ্রী হরির চরণ কমল এর ধ্যান এর মাধ্যমে ই  মহর্ষি  দুর্বাশার ক্রোধ থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। শ্রী হরির ঐকান্তিক ভক্তি,  চরণ কমল এর ধ্যান করেই হাজার হাজার মহান আত্মা, প্রভুর সান্নিধ্য লাভ করেছেন এবং  জন্ম চক্র থেকে মুক্তি পেয়েছেন। 

ভক্ত-দেব–অসুর–মানব–স্বভাব–বিবেচনम्

কার্যকালে নমস্কারঃ, কাৰ্যে সমাপ্তে তিরস্কারঃ।
স্বার্থে তু দেবতাজ্ঞানम्, অস্বার্থে তু অবজ্ঞানम्॥

অর্থদাতে স্নেহঃ অনুরাগঃ, অর্থহীনে নিঃশব্দত্যাগঃ।
এবমেব মানবস্য স্বভাবঃ, গুরুকৃপয়া প্রস্ফুরতি সুভাবঃ॥

সুরাসুর এতদ্ দ্বয়ং স্বভাবতঃ প্রায়ঃ সমানভাবম্।
ভক্তস্তয়োর্মধ্য শ্রেয়ঃ, নিষ্কামকর্মধর্মং করোতি ধ্রুবম্॥


লেখকের মন্তব্য:-
এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন  তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। 

রচনাকারস্য জ্ঞানোদয়ঃ

রচনাকারস্ব  প্রথমারচনে প্রাদুর্ভবতি তস্য প্রারম্ভিকং জ্ঞানম্।
রচনাকারস্য প্রত্যেকরচনে বর্ধতে তস্য শুদ্ধং জ্ঞানম্।
এবঁ  শনৈঃ শনৈর্ রচনাকারস্য জ্ঞানং ভবতি সুদর্শনম্।
রচনাকারস্য অন্তিমরচনে প্রকটতে তস্য শ্রেষ্ঠং জ্ঞানম্।
नाहं ज्ञानी न च विद्वान् ।
मम सर्वं श्रीजगन्नाथस्य दानम्॥

লেখক পরিচিতি:- প্রবীর  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।

ভীম একাদশী ও দক্ষিণ বঙ্গের ভৈম-একাদশীর ব্রত পালন।

আত্মা ও মৃত্যু। মৃত্যুর পরে কি হয় ও আত্মার শান্তির জন্য কি করতে হয় ? আত্মার সাথে কি ভাবে যোগাযোগ করবেন ? পুনর্জন্মের বৃত্তান্ত -আত্মা ও গর্ভাধান ,পূর্বজন্মের কথা /বৃত্তান্ত কি ভাবে জানবেন ?