আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।

আরতি বা আরাত্রিক:-
আরতির অর্থ হল-পূর্ণ প্রেম। দেবতার প্রতিকৃতির সম্মুখে প্রদীপ, জলপূর্ণ শঙ্খ, বস্ত্র, পুষ্প এবং চামরাদি আবর্তনে দেবতাকে প্রীত ও সংবর্ধিত করবার যে অনুষ্ঠান তাকেই আরতি বা আরাত্রিক বলে।আরাত্রিকের অপর নাম 'নীরাজন', প্রচলিত ভাষায় বলে আরতি। দেবদেবীর আরতি  করলে,দেবদেবীর পূজার  মধ্যে যদি কোন ত্রুটি থেকে যায় তাহা দূর হয় এবং পূজা  ফলবতী  হয়। 
আরতির মাহাত্ম্য/মহিমা প্রসঙ্গে শাস্ত্রে আছে:-
" মন্ত্রহীনং ক্রিয়াহীনং যৎকৃতং পূজনং হরেঃ।
সর্বং সম্পূর্ণতামেতি কৃতে নীরাজনে শিবে।।"
(হরিভক্তিবিলাস)
 অর্থাৎ দেবদেবীর আরতি  করলে, যে কোন পূজা তা মন্ত্রবর্জিত হোক আর ক্রিয়াবর্জিত হোক, ফলবতী হবেই। যে ব্যক্তি নীরাজন দ্বারা শ্রীভগবানের পূজা করেন ,তিনি ইহলোক এবং পরলোক উভয় লোকে থেকেই  মুক্তিপ্রাপ্ত হন।

 যিনি শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম ধারী ভগবান বিষ্ণুর আরাত্রিক ভক্তিচিত্তে দর্শন করেন, তিনি তাঁর পরম পদ লাভ করেন।
আচমন, প্রাণায়াম, বিভিন্ন প্রকার শুদ্ধি এবং ন্যাসাদি যে-অর্থে পূজার অঙ্গীভূত অবশ্য করণীয় অনুষ্ঠান, আরতি ঠিক সেই অর্থে পূজাঙ্গীভূত অবশ্য করণীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে পড়ে না কিন্তু আরতি  একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সাংকেতিক/প্রতীকী পূজার  মধ্যে পড়ে । 
ভগবান কল্কির মহামন্ত্র

ভারত এবং বাংলাদেশের মন্দিরের আরতি  এবং তার সময় সূচি। 
1.মঙ্গল আরতি – সকাল-04:30AM-থেকে সকাল-06:300 AM
2. শৃঙ্গার  আরতি – সকাল-07:15AM-থেকে সকাল-0830 AM 
3.পুষ্প আরতি –সকাল- 08:30AM-থেকে সকাল-09:300 AM 
4.ভোগ আরতি- দুপুর-1200 PM-থেকে  দুপুর-12.59 PM 
5.উত্থাপন  আরতি .বিকাল-04:00 PM-থেকে বিকাল-04.30 PM
6.সন্ধ্যা আরতি – সন্ধ্যা-06:O0PM-থেকে সন্ধ্যা-0700 PM 
7.শয়ন আরতি – রাত্রি-08:00 PM-থেকে রাত্রি-0830 PM
গৃহস্থের আরতি  কখন করা হয় / আরতি করার সময় -
 ১.সমস্ত দেব দেবীর পূজার শেষে। 
 ২.সন্ধ্যায় সন্ধ্যা  আরতি- সূর্য অস্ত যাবার পরে ,সাধারণত আকাশে তারা দেখা দেওয়ার পর।
সমস্ত সনাতন ধর্মালম্বী (হিন্দু ধর্মালম্বী ) গৃহস্থের বাড়িতে সকালে সূর্য উদয়ের আগে মঙ্গল  আরতি করণীয়,কিন্তু গৃহস্থের বাড়িতে সাধারণত প্রতিদিন সন্ধ্যায় সন্ধ্যা আরতিই করা হয়,সকালের   মঙ্গল  আরতি করা হয় না।


সন্ধ্যা আরতি। 
ভগবান শ্রী হরির ইচ্ছায় ব্রহ্মদেব দেবী সন্ধ্যা কে সৃষ্টি করেন। দেবী সন্ধ্যা ছিলেন  এক মহান তপস্বী । এই সন্ধ্যাই হলেন  প্রথম বৈদিক  নারী ,যিনি  মানব কল্যাণের জন্য ভগবান শ্রী হরির কাছে বর প্রার্থনা করেছিলেন । ওনার নামে নামকরণ করা হয় : প্রাত  সন্ধ্যা এবং সায়ং  সন্ধ্যা । 
আরতি করার নিয়ম
প্রথমে ঘৃতের দীপমালা(আরতির জন্য প্রদীপ), তারপর জলপূর্ণ শঙ্খ, তারপর বিশুদ্ধ বস্ত্র, পরে আম্রপল্লব/ অশত্থপল্লব ইত্যাদি এবং সর্বশেষে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম দ্বারা নীরাজন করনীয়।তবে পল্লবাদির পরিবর্তে বিল্বপত্র, পুষ্প এবং কর্পূর-দীপ ও ধূপাদি এবং পরে চামর দ্বারা আরতি করাও বিধিসম্মত।
আরতি করার নিয়ম হলো প্রথমে দীপমালা প্রজ্জলিত করে তাকে সম্মুখে একটি ত্রিকোন মন্ডলের উপর স্থাপন করে অর্চনার দ্বারা দেবতাকে নিবেদন করতে হয়। দীপ বহুশিখাযুক্ত ও অযুগ্ম অর্থাৎ এক, তিন, পাঁচ ইত্যাদি বিষম সংখ্যায় হবে।
দীপমালা অর্চনা বা নিবেদন করার পর তা ডান হাতে উঠিয়ে বাঁ হাতে ঘন্টা বাজাতে বাজাতে মূলমন্ত্র জপ অথবা দেবতার স্তোত্র পাঠ করতে করতে আরতি  করতে হয়।
 আরতিতে ধূপের ব্যবহার। 
প্রাচীন কাল থেকে আমাদের দেশে ঘরে ধুপ-ধুনো জ্বালানোর প্রথা প্রচলিত। প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, ধূপকাঠি জ্বালানো বাড়িতে ইতিবাচকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এটি পরিবারের সকল সদস্যের জীবনে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করে। আমাদের হিন্দুধর্মে (সনাতন) বলা হয় যে বাঁশ জ্বালালে পরিবারের অকল্যাণ হয় । সেইজন্য  আরতিতে বাঁশ কাঠি দিয়ে তৈরি ধুপ না জ্বালিয়ে  বাঁশকাঠি বর্জিত ধুপ অথবা ধুনো (ধুনা) প্রয়োগ করলেই ভালো হয়।
-
Dipajyotiḥ parabrahma dipajyoti janārdana।
Dipo haratu me pāpaṃ dīpajyoti namo'stute॥


প্রদীপ/দীপমালা ঘোরাবার   বিধি:- 
প্রদীপ (দিয়া)অথবা দীপমালা(জ্বলন্ত প্রদীপের পঙ্কতি ,যেমন পঞ্চপ্রদীপ) দেবতার শ্রীচরণে চারবার, নাভিদেশে দুইবার, মুখমন্ডলে একবার এবং সর্বাঙ্গে সাতবার ঘোরাতে হয়। 

আরতি/আরাত্রিক- পূজার উপাচার  - প্রদীপ,জলপূর্ণ শঙ্খ,বস্ত্র,পুষ্প এবং চামর।
আরতির দীপ, শঙ্খস্থিত জল, পুষ্প ইত্যাদি যেমন পঞ্চভূতের প্রতীক, সেগুলি আবার  প্রপঞ্চের(অলীক, মায়া)  ও প্রতীক।যেমন দীপ রূপের, শঙ্খস্থিত জল রসের, পুষ্প গন্ধের, চামর-বীজন (বাতাস দেওয়া; পাখা চামর ইত্যাদি যা দ্বারা বাতাস দেওয়া ) স্পর্শের এবং ঘন্টাধ্বনি শব্দের প্রতীক। আরতি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ভক্ত এগুলি একে একে দেবতাকে উৎসর্গ করে, নিজেকে ও তাঁর চরণে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেন।
বিভিন্ন উপাচার দিয়ে আরতি না করে অনেক সময় শুধুমাত্র প্রদীপ দিয়েও আরতি করা হয়। তবে  প্রদীপ দেবতার শ্রীচরণে চারবার, নাভিদেশে দুইবার, মুখমন্ডলে একবার এবং সর্বাঙ্গে সাতবার ঘোরাতে হয়আরতি  কি ভাবে  করবেন দেখুন এবং আরতি করার মন্ত্র  গুলি ও শুনুন 

এখন লক্ষনীয় যে, আরতি যে ভাব নিয়ে আর যে উপাচারেই করা হোক না কেন, দেবতার চরণে আত্মনিবেদনেই আরতির সমাপ্তি। অনেক সময় আমরা  পূজার শেষে  যে ভগবানের পূজা করছি ,তাঁর  আরতি না জানার জন্য  আমরা তাঁর  আরতি করতে পারিনি , সেই পরিস্থিতিতে, ভগবান নারায়ণের আরতি  করুন,কারণ ইনিই  পরমাত্মা ,পরমব্রহ্ম , আমরা যে কোন ভগবানের পূজা করি না  কেন , সমস্ত পূজা এঁর কাছে যায়। শুনুন পণ্ডিত শ্রদ্ধা রাম (শর্মা)  ফিল্লউরির  লেখা ভারতের  সর্বাধিক  জনপ্রিয়  ওঁম  জয়   জগদীশ  হরে আরতি টি ।


অতি সংক্ষেপে গৃহস্থের সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম।
সন্ধ্যাকালে প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ির প্রত্যেক ঘরে রাখা ভগবানের ফটো ,মূর্তি ,ঘরের  তুলসী গাছ, তৎসঙ্গে বাড়ির গৃহদেবতাকেও প্রদীপ দেখান ও প্রণাম করুন ,এছাড়া  পৃথিবী, গোমাতা ,আকাশ ,বাতাস ,গ্রহ ,নক্ষত্র দের ও প্রদীপ দেখান ও প্রণাম করুন এর পর লক্ষ্মী নারায়ণ,শিব দূর্গা ,গণেশ ও দেবী সরস্বতী কে পাশাপাশি রেখে তাদের একসাথে বারি বারি ,ধুপ ও প্রদীপ দেখান এর পর লোকাচার / কুলাচার অনুসারে ঘন্টি ও  শঙ্খ  বাজান এবং ভগবানদের  প্রণাম করুন। শেষে ভগবান কল্কি কে প্রণাম করুন নিম্ন লিখিত মন্ত্রে। 

ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় কল্কি দেবায় নমো নমঃ।।
শঙ্খ ধ্বনি


লেখকের মন্তব্য:-এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন  তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। ডকুমেন্টারি প্রমাণ এবং তথ্যের উৎস  ছাড়া এই বিষয়ে যে কোনও মন্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং  অসাধু বলে গণ্য করা হবে এবং মুছে ফেলা হবে। 
সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক। 🙏হে প্রভু আমাকে শুধু জ্ঞান দাও ,ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏












 







 আমি এই আর্টিকেল টি আমার এক মাত্র 
ছেলে ৺>আকাশের< জন্য উৎসর্গ করিলাম।

Appreciation Mail of  Jeremie Lumbroso
 lecturer Princeton University. USA



 লেখক পরিচিতি:-প্রবীর মহান্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ও কল্কি অবতার।

ষড়রিপু এবং মানব জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব:ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উপায়।