কলি যুগের অবসান/সমাপ্তি ও কল্কি অবতার - সত্য যুগের পুনঃপ্রতিষ্ঠা- সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ।


চার যুগের সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ:- 
হে ভক্ত বৎসল প্রভু ,হে প্রভু নারায়ণ ,আপনিই এই সৃষ্টির  স্রষ্টা এবং আপনি ই আদি এবং আপনিই অন্ত। আপনিই যুগ পরিবর্তক দেবতা। আপনারেই ইচ্ছায় যুগ পরিবর্তনের প্রাক্কালে  আপনার প্রিয় ভক্তদের রক্ষা, পরিত্রাণ ও  কল্যাণের জন্য যুগ পরিবর্তন ও তার লক্ষণ  ও এই  কলিযুগের অন্তে  আপনার  অবতারের কথা বর্ণনা করিলাম,ভুল ত্রুটি মার্জনা করিবেন। 

নারায়ণ নারায়ণ জয় জয় গোবিন্দ হরে।

★ ১.সত্য যুগ
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সত্য যুগ হলো, চার যুগের প্রথম যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ ও কলি যুগ।
মৎস্য অবতার


বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষে তৃতীয়া তিথিতে রবিবারে সত্যযুগের উৎপত্তি।  এই যুগে ভগবান ৪ টি রূপে অবতার নিয়েছিলেন । 1. মৎস্য (মাছ), 2.কুর্ম (কচ্ছপ), 3.বরাহ (শুকর), 4. নরসিংহ (সংস্কৃত: नरसिंह, বানানান্তরে নৃসিংহ-মানুষ ও সিংহের সমন্বিত রূপ)।

কুর্ম অবতার

 বরাহ অবতার

 এই যুগে শুধু পুণ্য ছিল,পাপ ছিল না। প্রাণ ছিল মজ্জায়। মৃত্যু ছিল ইচ্ছাধীন। এই যুগে সোনার পাত্র ব্যবহার করা হত।  এই যুগে মানুষের সমস্ত ইচ্ছাই  পূর্ণ হত।
নরসিংহ অবতার
★২ ত্রেতা যুগ:-
 ত্রেতা যুগ হলো হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, চার যুগের দ্বিতীয় যুগ। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে সোমবারে ত্রেতা যুগের উৎপত্তি। এই যুগে পালনকর্তা বিষ্ণুর অবতার যথাক্রমে পরশুরাম এবং রাম।
বামন অবতার

পরশুরাম অবতার
রাম অবতার

এই যুগে পুণ্য ছিল তিন ভাগ, পাপ এক ভাগ। এই যুগে প্রাণ ছিল অস্থিতে। রূপার পাত্র ব্যবহার করা হত।এই যুগে মানুষের  ইচ্ছা পূর্ণ করতে যজ্ঞ  করতে হত। 
★৩ দ্বাপর যুগ
শ্রীকৃষ্ণ অবতার
দ্বাপর যুগ হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী,চার যুগের তৃতীয় যুগ। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে বৃহস্পতিবারে দ্বাপর যুগের উৎপত্তি।  এই যুগে পালনকর্তা বিষ্ণুর অবতার  শ্রীকৃষ্ণ । এই ভগবান শ্রী কৃষ্ণই  হলেন ধরাতলে অবতীর্ণ শ্রী হরি বিষ্ণুর  অবতার  গুলির মধ্যে ১৬ কলাতে পূর্ণ ও  পরম ব্রহ্মের অবতার। এই যুগে পুণ্য অর্ধেক, পাপ অর্ধেক। এই যুগে প্রাণ ছিল রক্তে। তামার পাত্র ব্যবহার করা হত।এই যুগে মানুষের  ইচ্ছা পূর্ণ করতে  কঠিন যজ্ঞ  করতে হত।
রাজা পরীক্ষিতের মুকুটে কলি  যুগের  প্রবেশ। এরপর থেকেই কলির
প্রভাবে বাড়তে লাগল রাজা পরীক্ষিতের দুর্বুদ্ধি।



★৪ কলি যুগ
কলি যুগ ,আক্ষরিকভাবে “কলির যুগ”কলহের যুগ ,বা “পাপের যুগ” হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের শেষ যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো- সত্য যুগ,ত্রেতা যুগ, ও দ্বাপর যুগ। সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যাখ্যা কর্তা দের মতে সনাতন (হিন্দু )ধর্মের চারটি স্তম্ভ ,নন্দীর চারটি পা  সত্য ,দয়া ,তপ  ও দানের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এই কলিযুগে  নন্দীর দান রুপী পা টি স্রেফ বিদ্যমান তাই  কলি যুগে পুণ্য এক ভাগ,পাপ তিন ভাগ এবং দান  করাই হবে কলি যুগের প্রধান ধৰ্ম। 
কলি কে  ?
কলির বাবার নাম ছিল  ক্রোধ এবং মায়ের নাম ছিল হিংসা। তাঁর দাদুর নাম ছিল দম্ভ,  তাঁর দাদুর বাবা ছিলেন অধর্ম। অধর্মের  স্ত্রী ছিলেন  মিথ্যা। কলি হলেন অধর্ম  এবং তার স্ত্রী মিথ্যার  প্রপৌত্র। অধর্ম মূলত ব্রহ্মার পিঠ থেকে নির্গত খুব অন্ধকার এবং মারাত্মক পাপী বস্তু থেকে (মলিন পাতক) উৎপন্ন হয়েছিলেন।
কলি যুগের সূচনা।
বেদব্যাস রচিত বিষ্ণু পুরানে বলা হয়েছে যে কৃষ্ণের পৃথিবী ত্যাগ করে স্বর্গারোহণের সময় থেকে পৃথিবীতে কলি যুগের সূচনা।
তিথি:-মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পুর্ণিমা তিথিতে শুক্রবারে কলিযুগের সূচনা হয়েছে। 
কলি যুগের সময় পরিমাণ:-
প্রাচীন শাস্ত্র অনুযায়ী কলি যুগের আয়ু ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বছর । এখানে এটি উল্লেখ করা অত্যন্ত আবশ্যক যেমন কলি যুগে  মানুষের আয়ু  বলা হয়েছে ১০০বছর ,কিন্তু বেশির ভাগ লোক ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচেন না ,অনেকেই আবার অল্প বয়সেই  মারা যান ,সেই রকম কলি যুগের আয়ু ভোগ ,কলি যুগের পাপ ,পুন্য ,কর্ম ও ধৰ্ম অনুসারে হবে,কলি যুগের  আগে ত্রেতা ও দ্বাপর এই দুইটি যুগের কেউই  তাঁদের পূর্ন আয়ু ভোগ করতে পারেনি। পঞ্চ সখা রচিত পুস্তক ভবিষ্য মালিকা অনুসারে কলি যুগের  আয়ু ভোগ হবে মাত্র পাঁচ হাজার বছর (৫০০০ বৎসর )।

পঞ্চসখা কারা ?
পঞ্চসখা (=পাঁচ বন্ধু) এঁরা প্রত্যেক যুগে ভগবানের লীলায় অংশ গ্রহণ করতে ধরা তলে জন্ম গ্রহণ করেন। এঁরা কলিযুগের মধ্য যুগে উৎকল প্রদেশে (ওড়িশা) জন্ম গ্রহণ করেছিলেন।  এঁদের নাম হল বলরাম দাস, জগন্নাথ দাস, অচ্যুতানন্দ দাস, যশোবন্ত দাস, সিসু অনন্ত দাস ।  

কলি যুগের আয়ু কম হওয়ার প্রধান কারণ। 
ভবিষ্য মালিকা অনুসারে  কলি যুগের  মানুষ  এমন  অজস্র  পাপ করবেন যার সীমা পরিসীমা থাকবেনা। যার ফলে কলি যুগের আয়ু কম হয়ে যাবে। 

সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ;-(প্রতিযুগে “সন্ধ্যা” ও “সন্ধ্যাংশ” থাকে। দুই যুগের. সন্ধিকেই “সন্ধ্যা” বলে। যুগ আরম্ভ হইবার অব্যবহিত পূৰ্ব্বকালকে “সন্ধ্যা” বলে এবং যুগের শেষ অংশকে “সন্ধ্যাংশ” বলে। (দিবসের যেরূপ প্রাতঃসন্ধ্যা ও সায়ং সন্ধ্যা , যুগের সেইরূপ সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ।)
মানুষের আয়ুকাল
মনু সংহিতায় বলা হয়েছে  কলি যুগে মানুষের পরমায়ু ১০০ বছর।
কলি যুগের লক্ষণ
বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী ব্রহ্ম সত্যযুগে সৃষ্টি করেন এবং কলিতে সৃষ্টির সংহার করেন। ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস এই চার প্রকার আশ্রমকে  চতুরাশ্রম বলা হয়। কলি যুগে এই চতুরাশ্রম প্রথা টি সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ,যার ফলে নানা প্রকার সামাজিক ব্যাধি দেখা যাবে।  কলি যুগে মানুষের আয়ু প্রায় একশ  বছর । মানুষের শরীরের দৈর্ঘ্য নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত । প্রাণ অন্নে। তীর্থ গঙ্গা। এই যুগে  বিদ্যমান সবকিছুর  আকার ,আকৃতি, অবয়ব,হবে  ছোট । কলিযুগের মানুষরা ,ধৰ্ম ,নীতি ,নিয়ম ,অনেক কিছু জানবেন কিন্তু তাঁর মূলতত্ত্ব /আসল তত্ত্ব, জানবেন না। যার ফলে কলিযুগের মানুষদের ধৰ্ম ,নীতি ,নিয়ম ,চরিত্র হবে সংকীর্ণ।


কলিযুগে ধর্ম ।
ধর্মগ্রন্থ অনুসারে দান করাই হবে কলিযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ  ধর্ম ।মনু সংহিতায় বলা হয়েছে যে সত্যযুগে তপস্যা,ত্রেতায়ুগে জ্ঞান,দ্বাপরযুগে যজ্ঞ এবং কলিতে দানই প্রধান হবে । কৃষ্ণযজুর্বেদে ভগবান ব্রহ্মা, মহর্ষি নারদ কে বলেছেন  কলি যুগে " হরে রাম, হরে কৃষ্ণ মন্ত্র"  কলি  যুগের প্রভাব  থেকে মানুষ কে রক্ষা করবে।
 রামায়ণের  শেষ খন্ডে লেখা আছে  ভগবান শ্রী রামচন্দ্র মর্তলোক  থেকে স্বর্গলোক যাবার সময় বজরংবলী হনুমান কে বলেছিলেন  কলিযুগে হরিনাম সংকীর্তন ই হবে মোক্ষ প্রাপ্তির উপায়। চৈতন্য মহাপ্রভু ও জগৎ গুরু আদি শঙ্করাচার্য সেই একই কথা বলেছেন ।
 
কলি কালের মহামন্ত্র -হরে রাম ,হরে কৃষ্ণ।
নাম সংকীর্তনং যস্য সর্ব পাপ প্রণাশনম। 

আদি শঙ্করাচার্য 


কলি যুগের অবসান।
"কলি যুগের অবসান" অর্থাৎকলি যুগের  শেষ, সমাপ্তি, অন্ত। সনাতন হিন্দু ধর্মে চারটি যুগের চক্র রয়েছে: সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ, এবং কলি যুগ। কলি যুগকে শেষ যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা অশান্তি, দুর্নীতি, এবং পাপের যুগ হিসেবে পরিচিত।

হিন্দু পুরাণ ও শাস্ত্র  মতে, কলি যুগের শেষে, ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার কল্কি প্রাকট্য হবেন  এবং কলি যুগের অবসান ঘটাবেন । এই অবতার পৃথিবীতে এসে পাপ এবং অন্যায়ের অবসান ঘটাবেন  এবং পুনরায় সত্য যুগের সূচনা করবেন । এটি একধরনের নৈতিক পুনর্জাগরণ ও শুদ্ধিকরণের যুগ হবে, যেখানে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে।

কলি যুগের অবসানের /পতনের লক্ষন। 
জগন্নাথ সংস্কৃতির জ্ঞাতা ও বিখ্যাত  ভাগবত কথা বাচকদের  মতে হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত  নিম্ন লিখিত ১৩টি লক্ষন যখন কলি যুগের মধ্যে  দেখা যাবে ,তখন কলিযুগের পতন হবে। ভক্তরা এই ১৩টি লক্ষন দেখে বুঝতে পারবেন কলি যুগের পতন শুরু হয়ে গেছে।  
১.ধর্ম অত্যন্ত সংকোচিত হবে - ধর্মান্ধতা বাড়বে ,এক ধর্ম থেকে আলাদা হয়ে পৃথক ধর্মের সৃষ্টি হবে।
২.ঘরে ঘরে  শ্রী হরি বিষ্ণুর পূজা হবে না। বিভিন্ন লোক  বিভিন্ন দেব দেবীর পূজা  করবেন। 
৩.ঘরে ঘরে তুলসী দেবীর পূজা হবে না।
৪.বেশির ভাগ লোক সূর্যদেব কে জল অর্পণ করবেন না। 
৫.বেশির ভাগ মানুষ অকৃতজ্ঞ হবেন।
৬.বেশির ভাগ মানুষ তপ বিরোহিত (তপস্যা করবেন না ) হবেন।
৭.বেশির ভাগ মানুষ মিথ্যাবাদী হবেন। 
৮.বেশির ভাগ মানুষ ধর্ম থেকে অনেক দূরে চলে যাবেন।
৯.বেশির ভাগ মানুষ নারীর  বশে বশীভূত হবেন ও নারীর  কথায় চলবেন। 
১০.অযোগ্য ও অকর্মন্য লোক উচ্চ পদে অধিষ্টিত হবেন /থাকবেন। 
১১.বেশির ভাগ ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন ,লোভী  ও জ্ঞান হীন হবেন এবং এঁদের অনেকেই স্বধর্ম বিরোধী ও কুলাচার বিরোধী হবেন এবং মান সম্মান হারাবেন।
১২.বেশির ভাগ শাসক স্বার্থ পর হবেন ,অর্থাৎ স্রেফ নিজের স্বার্থ দেখবেন।
১৩.পৃথিবী মাতা তাঁর  উর্বরতা শক্তি হারাবেন।

কলি যুগে কলির অনুগামী মানুষের অত্যাচারে  যখন  সাধারণ ,সহজ, সরল  মানুষ  ও পশু ,পাখি ত্রাহিমাম করবে,তখন ভক্ত বৎসল  শ্রী হরি  নারায়ণ ভগবান কল্কি রূপে পৃথিবীতে অবতারিত হবেন।ভগবান শ্রী বিষ্ণুর দশম অবতার ভগবান শ্রী কল্কি 64টি কলায়  পূর্ণ হবেন । 
কলি যুগে  ভগবান কল্কি তাঁর লীলা করবেন কিন্তু কলি যুগের মানুষ তাঁকে চিনতে পারবেন না,কেবল তাঁর ভক্তরাই তাঁকে চিনতে পারবেন। 

 শ্রী মহা বিষ্ণুর ষোড়শ (১৬) নাম স্তোত্রম।

🔱৷৷কলি যুগে কল্কি অবতার৷৷🔱

 কল্কি অবতার:-
কলিযুগের অন্তে মানে শেষের দিকে কলিযুগের অবতার রুপে অবতারিত হবেন  ভগবান কল্কি ।
ভগবান শ্রী বিষ্ণুর দশম অবতার ভগবান শ্রী কল্কি 64টি কলায়  পূর্ণ হবেন ।
ভারতীয় রাজ্য উড়িষ্যার গজপতি জেলায় অবস্থিত মহেন্দ্র গিরি পর্বতে অদৃশ্য রূপে বিদ্যমান ভগবান পরশুরাম হবেন ভগবান বিষ্ণুর শেষ অবতার ভগবান কল্কির গুরু। ভগবান কল্কি তাঁর  ভাই বলরাম কে সঙ্গে নিয়ে  কলি যুগ ও তাঁর শক্তি কে পরাজিত করে, যুগ পরিবর্তন করবেন ও সত্য যুগের সূচনা করবেন এবং পশু,পাখি,গাছ,পালা,নদ,নদী ইত্যাদিদের অধিকার ফিরিয়ে দিবেন এবং মানুষ কে এদের সম্মান করার শিক্ষা দিবেন এবং পৃথিবীতে ধর্ম,ন্যায়,সুখ ,শান্তি ইত্যাদি ফিরিয়ে আনবেন।

যুগ পরিবর্তন কে বা কারা  জানতে পারবেন ?
জ্ঞানী ডাক্তাররা যেমন রোগ ধরতে পারেন ,তেমনই জ্ঞানী ভক্তরাই প্রথমে যুগ পরিবর্তন কে বুঝতে/জানতে  পারবেন। জিজ্ঞাসু ভক্তরা কিছু সময় পরে জানতে পারবেন ।
ভক্তদের প্রকার।
শ্রীমদ ভাগবতে  চার  প্রকারের  ভক্তর  কথা বলা হয়েছে 
১)আর্ত ভক্ত ২)অর্থাথী ভক্ত ৩) জিজ্ঞাসু ভক্ত এবং ৪) জ্ঞানী ভক্ত।
(জ্ঞানী ভক্ত তাঁরা, যাঁরা ভগবত জ্ঞান অর্জন করে মায়ার আবরণ সরাতে সক্ষম হয়েছেন। )
 
ভক্তরা কিভাবে যুগ পরিবর্তন কে জানতে পারবেন ?
জগন্নাথ সংস্কৃতির  জ্ঞাতা ও  ভবিষ্য মালিকা প্রচারক ,পরিব্রাজক প্রমোদ কুমার প্রুস্তি , শ্রী পুলিন বিহারী পন্ডা ,সাধু জগদীশ বাবা ,কানু বাবা ,প্রহ্লাদ নায়ক এবং শ্রী কাশীনাথ মিশ্রের মতে, ভক্তরা নিম্ন লিখিত লক্ষণ (পূর্বাভাস ) গুলি দেখে  যুগ পরিবর্তন কে জানতে পারবেন ।
১.যুগ পরিবর্তনের সময়  গ্রহ ও নক্ষত্রের অবস্থানের পরিবর্তন হবে যার ফলে পূজা ,পার্বন গুলির তিথিতে খুব বেশি  পরিবর্তন হবে। 
২.যুদ্ধ,সশস্ত্র সংঘর্ষ হবে। মানুষের মধ্যে ,গৃহ যুদ্ধ ,আন্দোলন ,ও বিদ্রোহ করার ও করানোর প্রবনতা প্রবল হবে।  বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক দেশের সাথে অন্য দেশের সম্পর্ক চিন্তাজনক হবে। অনেক দেশ একে অপরের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধ করবেন।  কুকুর ,বিড়াল এবং অন্য পশু ,পাখির অশুভ আওয়াজ শুনতে পাওয়া যাবে। শৃগালীরা অসময়ে  চিৎকার করবে। গায় গরুর অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাবে। মানুষ ও পশু পাখির আচরণের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে । (নোস্ত্রদাম ও পঞ্চ সখা-শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরান)


৩.আকাশে দেব ধ্বজ দেখা যাবে। বায়ু মণ্ডল অত্যাধিক দূষিত হবে। ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে প্রকৃতির  মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। যেমন  সমুদ্রের বিক্ষিপ্ততা বাড়বে,সূর্যের তাপ বাড়বে, কোথাও অতি বৃষ্টি হবে। কোথাও অনাবৃষ্টি হবে, কোথাও কোথাও দুর্ভিক্ষ হবে। ঋতু চক্র পরিবর্তন হবে। চারি দিকে ধোঁয়া ধোঁয়া লাগবে /মনে হবে। 
৪.একই পক্ষে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ হবে। আকাশে ধুম কেতুর আবির্ভাব হবে । আগ্নেয়গিরি তে বার বার বিস্ফোরণ হবে। 

৫.অকাল মৃত্যুর সংখ্যা (বিশেষ করে কিশোর ও অবিবাহিত যুবক) অনেক বেশি হবে। বেশীর মানুষ খুব বেশি অশুভ স্বপ্ন দেখবেন। 
৬.যুগ পরিবর্তক দেবতার (ভগবানের) অবতার রূপে জন্ম নেওয়ার কথা কানে আসবে।
৭.১৩ দিনে পক্ষ হবে এবং মীন শনি যোগ হবে। চারিদিকে  সাম্প্রদায়িক হিংসা ,জাতি হিংসা ও যুদ্ধ হবে। 
৮.গ্রামে গঞ্জে, রাত্রে অপরিচিত পশু অথবা পাখির(কাল ) ডাক শোনা যাবে। 
৯.আকাশের রং বিচিত্র ধরনের হবে। উল্কাবৃষ্টিতে আলোকিত হবে আকাশ। 

১০.বার বার নিম্ন তীব্রতার ভূমি কম্প হবে এবং ভূমি কম্প হচ্ছে এই রকম অনুভব হবে।
১১.সূর্য ,চন্দ্র ,গ্রহ ,ও তারার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। সূর্য ,চন্দ্রের চারিদিক মণ্ডলাকার ধারণ করবে। 
১২.বার বার মহামারী হবে।
১৩.ধর্মস্থল গুলিতে বার বার অশুভ সংকেত দেখতে পাওয়া যাবে।

যুগ পরিবর্তনের সময় কি কি ঘটনা ঘটবে ?
১.যুগ পরিবর্তনের সময় বার বার  উচ্চ তীব্রতার ভূমি কম্প হবে । 
২.মানুষ ও পশু পাখির মধ্যে আতঙ্ক  লক্ষ্য করা যাবে। যেমন বার বার কুকুর ,বিড়াল এবং অন্য পশু ,পাখির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যাবে। রাত্রে পেঁচা ,কাক ও কপোত দের অস্তিরতা দেখা যাবে। শৃগালীরা অসময়ে  চিৎকার করবে। গায় গরুর অস্থিরতা বাড়বে।   
৩.সমুদ্রের বিক্ষিপ্ততা বাড়বে এবং সুনামি আসবে এবং অতি বৃষ্টি হবে ও জল প্রলয় হবে।
৪.ভয়ঙ্কর আকৃতির কালো মেঘে গর্জনের সাথে বার বার বজ্রপাত হবে।
৫.অগ্নি (তাপ, উষ্ণতা) প্রলয় ও বায়ু  প্রলয় হবে।
৬.নতুন নতুন রোগ আসবে,মহামারী হবে।
৭.অনেক পশু ,পাখি লুপ্ত হয়ে যাবে,বার বার মানুষ ও পশু ,পাখির আর্তনাদ কানে আসবে। 
৮.উল্কা পিন্ড পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে ভয়ঙ্কর বিনাশ করবে। সাত দিন সাত রাত অন্ধকার হবে। 
৯.যুগ পরিবর্তক দেবতার লীলার আবির্ভাব হবে।
১০. ঐ যুগের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ টি ঐ সময় হবে। 
১১.অবিশ্বাস্য,ও অকল্পনীয় ঘটনা ঘটার কথা কানে আসবে।


কলিযুগ কখন এবং কিভাবে শেষ হবে? 

আজকাল সনাতন হিন্দু ধর্মের কিছু লোকদের মনে কয়েকটি  প্রশ্ন ভয়ঙ্কর ভাবে  আলোড়ন সৃষ্টি করেছে , কলি যুগ কি শেষ হয়ে গেছে ? আমরা কি এখন কলি যুগ ও সত্য যুগের মাঝখানে যুগ সন্ধি ক্ষনে  আছি ?  আমরা কি কলি যুগের ধ্বংস লীলার মোহনায় দাড়িয়ে আছি ? ২০২৫ সাল থেকে কি কলি যুগের ধংস লীলা শুরু হবে ? ২০৩২  সাল থেকে কি আদ্যসত্য যুগের আগমন শুরু হবে ? এর মুখ্য কারণ আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে (তাল পাতায় লেখা ) পঞ্চ সখা রচিত পুস্তক ভবিষ্য মালিকা ,যেখানে এই রকম কিছু কথা বলা হয়েছে  ও তার ইঙ্গিত/ইশারা/সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কিছু প্রতিষ্টিত সোশ্যাল মিডিয়াতে বারংবার যুগ পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে । 
কৃষ্ণ, বলরাম  পঞ্চ সখা

শ্রীমদ ভাগবত মহাপুরাণে বলা হয়েছে যখন "यदा चन्द्रश्च सूर्यश्च तथा तिष्यबृहस्पती । एकराशौ समेष्यन्ति भविष्यति तदा कृतम् ॥"  হবে  তখন  যুগ  সন্ধ্যা  শুরু হবে। অনেকের মতে  মতে ১৯৪২-১৯৪৩ সালে গ্রহ পরিস্থিতি   এই রকম হয়েছিল তাই কলি যুগ শেষ হয়ে গেছে এখন  যুগ সন্ধ্যা  চলছে  এবং ২০৩২ সালে কলি যুগের প্রভাব শেষ হয়ে যাবে। 

পঞ্চ সখা রচিত -তালপাতার উপর লেখা পুস্তক ভবিষ্য মালিকা-
 প্রদর্শনকারী -ভবিষ্য মালিকা প্রচারক-শ্রী সত্য  ভঞ্জ
। 

অনেকের মতে কলি যুগের সমাপ্তির সময়কাল এখনো আসেনি তার  কারণ ,প্রাচীন শাস্ত্র অনুযায়ী  কলি যুগের বয়স ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বৎসর ,কিন্তু পঞ্চ সখা রচিত পুস্তক ভবিষ্য মালিকার মতে  বিভিন্ন পাপের ফলে  কলি যুগের বয়স প্রায়  ৪ লক্ষ ২৭ হাজার বছর কম হয়ে গেছে। যেমন গঙ্গা এবং পবিত্র জায়গায়  উলঙ্গ অবস্থায় স্নান করার জন্য ১২ হাজার বছর ,মিথ্যা কথা বলার জন্য ৫ হাজার বছর, ব্রাহ্মণদের অসৎ সঙ্গ,অনুচিত কর্ম ,ধৰ্ম অনুযায়ী কাজ না করার জন্য ৩০ হাজার বছর ,বন্ধুর সাথে ছল ,কপটতার জন্য ৬ হাজার বছর ,মদ মাছ মাংস ইত্যাদি  খাবার জন্য ৮ হাজার বছর ,অন্যের ধন অসৎ ভাবে নেওয়ার জন্য ১০ হাজার বছর,গো হত্যার জন্য  ১ লক্ষ বছর , ভাইয়ের সাথে শত্রুতা করার জন্য  ৪০ হাজার বছর,দানের অপব্যবহার করার জন্য ১৪ হাজার বছর,বিধবা কে কষ্ট দেওয়া,শোষণ করার জন্য ২৪ হাজার বছর,জীব হত্যার জন্য ও উৎপীড়ণ করার জন্য ১১হাজার বছর,ভ্রূণ হত্যার জন্য ৭ হাজার বছর,স্ত্রী হত্যার জন্য ৩২ হাজার বছর,অতিথির সেবা না করার জন্য ৬ হাজার বছর,ভাই ও ভাগিনীর সাথে ঝগড়া,হত্যা ,মারপিট করার জন্য ৪০ হাজার বছর,বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য ৪০হাজার বছর,মাতা পিতার হত্যা ও উৎপীড়ণ করার জন্য ৩ হাজার বছর,অনৈতিক বিবাহ ও বিবাহ পূর্ব ও বিবাহোত্তর অবৈধ সম্পর্ক ইত্যাদির জন্য ১২হাজার বছর,ঘরে নারায়ণের পূজা না করানোর জন্য ১৭হাজার বছর,ঘরে তুলসীর  পূজা না করানোর জন্য ৫হাজার বছর,মোট  ৪ লক্ষ ২৭ হাজার বছর। তাই ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বছর থেকে  ৪ লক্ষ ২৭ হাজার বছর বিয়োগ করলে থাকে ৫ হাজার বছর। বর্তমানে কলি যুগের বয়স ৫হাজার ১২৫ বছর।

यदा चन्द्रश्च सूर्यश्च तथा तिष्यबृहस्पती । एकराशौ समेष्यन्ति भविष्यति तदा कृतम् ॥ শ্রীমদ ভাগবত মহাপুরাণ
 
এইসব তথ্যের ভিত্তিতে  অনেকেই বলছেন  কলিযুগের অন্ত শুরু হয়ে গেছে এবং ভগবান কল্কি ধরাতলে জন্ম নিয়ে নিয়েছেন এবং শীগ্রই  তাঁর লীলা শুরু হবে।  প্রভু কল্কি আদ্যসত্য যুগের প্রতিষ্ঠা করবেন এবং ২০৩২  খ্রিস্টাব্দ থেকে অনন্ত যুগ (আদ্যসত্য) যুগ  শুরু হবে।

(অনন্ত যুগ )আদ্যসত্য যুগ।
অনন্ত যুগ (আদ্যসত্য) যুগ মানে সত্য যুগ শুরু হওয়ার আগেকার সময় ।  ভবিষ্য মালিকা গবেষক শ্রী পুলিন বিহারী পন্ডা ,সাধু জগদীশ, পরিব্রাজক প্রমোদ কুমার প্রুস্তি ,কানু বাবা ,প্রহ্লাদ নায়ক এবং শ্রী কাশীনাথ মিশ্রের মতে  কলিযুগের চরম অবসান কাল শুরু হবে ২০২৫  খ্রিস্টাব্দ থেকে , এই  লীলা ২০৩০- ২০৩১ সাল  পর্যন্ত চলবে এবং  ২০৩২ সালে (অনন্ত যুগ )আদ্য সত্য যুগের সূর্য উদয় হবে। আদ্যসত্য যুগের অবধি হবে ১০০৯ সাল ,এই সময় প্রভুর ভক্তরা প্রভুর সান্নিধ্য অনুভব করবেন এবং অনন্ত সুখ ,শান্তি অনুভব করবেন। 
 

ভক্তরা কিভাবে  জানতে পারবেন  যে আদ্যসত্য যুগ আসছে ?
আদ্যসত্য যুগের আগমনের  লক্ষন। 
১.ধর্ম প্রসারিত হতে শুরু করবে।  
২.ঘরে ঘরে শ্রী হরি বিষ্ণুর পূজা শুরু হবে । 
৩.ঘরে ঘরে তুলসী দেবীর পূজা শুরু হবে ।
৪.প্রচুর লোক সূর্য দেব কে জল অর্পণ করতে শুরু করবেন । 
৫.মানুষ সত্য ,দয়া ,তপ , দান ও পবিত্রতার অনুগামী ও আস্থাবান হতে শুরু করবেন।
৬.ভক্তরা যুগ পরিবর্তক দেবতার পূজা ও আরাধনা শুরু করবেন। 
যুগ পরিবর্তক দেবতা ভগবান কল্কি কে তাঁর ভক্তরা কিভাবে চিনবেন ?
 প্রভু কে তাঁর ভক্তরা চিনতে পারবেন  প্রভুর শরীরে বিদ্যমান  অসংখ্য চিহ্ন যেমন শঙ্খ চিহ্ন, চক্র চিহ্ন, চন্দ্রচিহ্ন, গদাচিহ্ন,মৎস্য চিহ্ন,তীর চিহ্ন,বজ্র চিহ্ন ইত্যাদি  দেখে । 
যুগ পরিবর্তক দেবতা প্রভু কল্কি  কোথায় কবে জন্ম গ্রহণ করেছেন ? 
প্রভুর ভক্তদের কথা অনুসারে প্রভু কল্কি ধরাতলে জন্ম নিয়ে নিয়েছেন, শ্রী হরি বিষ্ণুর নাম যশ করেন এমন একটি উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে।  কিন্তু প্রশ্ন অনেকের মনে, প্রভু কল্কি  কোথায় এবং  কবে জন্ম গ্রহণ করেছেন ইত্যাদি ? 
প্রভুর ভক্ত দের মধ্যে অনেকেই বলছেন প্রভুর  জন্ম হয়েছে  ২০০৫ সালে  এবং প্রভুর  জন্ম স্থান বিরজা ক্ষেত্র  জাজপুর। উড়িষ্যার বেশীর ভাগ ভক্তদের মতে  প্রভু কল্কি বিরজা ক্ষেত্র জাজপুরে জন্ম গ্রহণ করেছেন, তবে কোন সালে এবং কোন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছেন সেটা তারা জানেন না এবং জানতেও চান না কারণ তারা  প্রভুর লীলায়  হস্তক্ষেপ করতে চান না ,আবার এঁদের  মধ্যে অনেকেই বলছেন তারা অনেক কিছু  শুনেছেন কিন্তু বলতে পারবেন না কারণ তারা  প্রভুর লীলায়  হস্তক্ষেপ করতে চান না। 
বহু সংখ্যক ভক্তদের মতে প্রভুর জন্ম স্থান: গ্রাম -সম্ভূত সম্ভল  (Sambhut Sambhal) বিরজা (গিরিজা) ক্ষেত্র জাজপুর । জন্মের সময় -দুপুর/দিনের মধ্যভাগ, ভক্ত দের মধ্যে অনেকেই বলছেন প্রভুর শরীরে ,শঙ্খ ,অর্ধ গদা, পদ্ম ,চক্র  ,বজ্র,ও তীর  চিহ্ন  বিদ্যমান।
শ্রী হরির পদ চিহ্ন
সনকাদি ঋষিদের এক অলৌকিক 
মন্ত্র
 হরি স্মরণম ।
প্রভু কল্কির  নাম। 
ভক্তরা প্রভু কল্কিকে , মাধব ,জগন্নাথ,কল্কি ,কল্কিরাম ইত্যাদি নামে স্মরণ করবেন। 
বলরাম অবতার এবং কল্কি লীলা । 
প্রত্যেক যুগে  ভগবান তাঁর  ভাই কে সঙ্গে  নিয়ে আসেন,শুন্য পুঁথি ও ভবিষ্য মালিকা অনুসারে কলি যুগেও প্রভু কল্কির সাথে প্রভু বলরাম পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন।  শূন্য বাণী, শূন্য পুঁথি ও ভবিষ্য মালিকা অনুসারে প্রভু বলরাম  জন্ম গ্রহণ করে গুপ্ত ভাবে আছেন ,ভবিষ্য মালিকার  মতে স্রেফ ১৩ জন তাঁর ব্যাপারে জানেন এবং প্রভু বলভদ্র, প্রভু কল্কির আদেশের অপেক্ষা করছেন। 
প্রভু বলভদ্রর  নাম। 
ভক্তরা প্রভু বলভদ্রকে ,অনন্ত, বলভদ্র , অনন্ত কেশরী  ইত্যাদি নামে স্মরণ করবেন।
বলরাম  কে ভক্তরা  কিভাবে চিনবেন ?
তাঁর  শরীরে শেষ নাগের (প্রতিকৃতি) চিহ্ন থাকবে এবং  শুন্য পুঁথি অনুযায়ী তিনি শ্রী হরির কৃপায়  মৃত্যু কে জয় করবেন অর্থাৎতাঁর আত্মা  দেহ ত্যাগ করার পরেও পুনঃ তাঁর শরীরে প্রবেশ করবে।
প্রভু কল্কি কাদের সঙ্গে নিয়ে কল্কি লীলা করবেন। 
ভবিষ্য মালিকা অনুসারে প্রভু কল্কি তাঁর ভাই (বলভদ্র)অনন্ত কল্কি লীলার প্রমুখ চরিত্র। প্রভু কল্কির লীলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে অংশ গ্রহণ কারীদের তালিকা। 
(1).প্রভু কল্কি ও প্রভু অনন্ত (2).পঞ্চ সখা (3).দ্বাদশ গোপাল ,(4).ষোল সর্দার (16 মণ্ডল প্রধান )  (5)  ৫৬ভক্ত ও ৬৬ প্রধান/বাহিনী পতি,(6).২৫৬ ভবিষ্য মালিকা ভক্ত/ধৰ্ম প্রচারক,(7). ১,১০০ ভক্ত ,(8).৩,০০০ ভক্ত  (9).১২,০০০ ভক্ত, (10)  লক্ষ ভক্ত,(11) কোটি ভক্ত। 
প্রভু কল্কি  কখন তাঁর লীলা শুরু করবেন ? 
বেশ কিছু প্রতিষ্টিত সোশ্যাল মিডিয়ার মতে ,প্রভু কল্কি ২০২৫ থেকে  ২০২৭ এর মধ্যে তাঁর প্রকাশ/প্রকটিকরণ লীলা করবেন। (Info Grade:B-2).
কৃষ্ণ বলরাম কীর্তন


কলি যুগ থেকে আদ্য সত্য যুগে যাবার পথ। 
বিখ্যাত  ভাগবত কথা বাচক কাশীনাথ মিশ্র এবং ভবিষ্য মালিকা গবেষক শ্রী পুলিন বিহারী পন্ডা,সাধু জগদীশ বাবা, পরিব্রাজক প্রমোদ কুমার প্রুস্তি ,কানু বাবা ,প্রহ্লাদ নায়ক ও প্রভুর অন্য সেবকদের মতে  কলির  প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে ও যুগ পরিবর্তনের সন্ধি কালে কলি যুগ থেকে আদ্য সত্য যুগে যাবার জন্য মানুষ কে  মদ ,মাংস ও সমস্ত প্রকার নেশা ত্যাগ করতে হবে,নিরামিষ খাবার খেতে হবে , ব্রহ্ম একাক্ষর  মন্ত্র /প্রণব মন্ত্র ওঁ জপ্ করতে হবে। 

ওঁ মন্ত্র জপ একটি অত্যন্ত প্রাচীন পদ্ধতি, যা শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই মন্ত্রটি সঠিকভাবে উচ্চারণ ও মনোযোগ সহকারে ধ্যান করলে তা গভীর শান্তি ও শক্তি প্রদান করে।

"ওঁ" বা "অ-উ-ম" শব্দটি মূলত তিনটি ধ্বনির সংমিশ্রণ— "অ" (সৃষ্টি), "উ" (রক্ষা), এবং "ম" (লয়), যা ব্রহ্মাণ্ডের মূল সত্ত্বাকে প্রকাশ করে। সঠিক নিয়ম ও মনোযোগ সহকারে এই মন্ত্র জপ করলে তা শরীর, মন এবং আত্মার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে এবং ধীরে ধীরে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন ঘটায়।

এছাড়া ভগবান ব্রহ্মা, মহর্ষি নারদ কে বলেছেন  কলি যুগে " হরে রাম, হরে কৃষ্ণ মন্ত্র"  কলি  যুগের প্রভাব  থেকে মানুষ কে রক্ষা করবে।
 রামায়ণের  শেষ খন্ডে লেখা আছে  ভগবান শ্রী রামচন্দ্র মর্তলোক  থেকে স্বর্গলোক যাবার সময় বজরংবলী হনুমান কে বলেছিলেন  কলিযুগে হরিনাম সংকীর্তন ই হবে মোক্ষ প্রাপ্তির উপায়। চৈতন্য মহাপ্রভু ও জগৎ গুরু আদি শঙ্করাচার্য সেই একই কথা বলেছেন । তাই সময় পেলেই  হরে কৃষ্ণ, হরে রাম, মন্ত্র"জপ করুন।



এছাড়া নবধা ভক্তি অর্থাৎ ৯ প্রকারের ভক্তির  যে কোন একটি অথবা তার অধিক পালন করতে হবে। 

শ্রবণং কীর্তনং বিষ্ণোঃ স্মরণং পাদ সেবনম্।
অর্চনং বন্দনং দাস্যং সখ্যমাত্মনিবেদনম্।।

এর অর্থ শ্রবণ,.কীর্তন,ভগবান বিষ্ণু কে স্মরণঃ,পদসেবন,অর্চন(অর্চনা),বন্দন(স্তুতি, প্রণাম, স্তব),দাসত্ব (ঈশ্বরের সেবা করা),সখাত্ব এবং আত্মনিবেদন।এই ৯টি বা ৯ প্রকারের  ভক্তি কে বলা হয় নবধা ভক্তি।

 নবধা ভক্তি কি ভাবে করতে হবে। 
শ্রীমদ্ভাগবত মহা পুরান পাঠ করতে হবে। এছাড়া রোজ সকাল ,দুপুর ,সন্ধ্যায় শ্রী হরি বিষ্ণুর  স্তুতি শ্রবণ অথবা পঠন,অথবা নাম স্মরণ করতে হবে। এগুলি করলে মানুষের মধ্যে ধৈর্য্য,ক্ষমা ,বহিরিন্দ্রিয় সংযম ,চুরি না করা ,দেহ ও মনের পবিত্রতা ,মন সংযম ,শাস্ত্র জ্ঞান ,সত্য বিদ্যা ,সত্য আচরণ ,ক্রোধ বর্জন এই দশ টি গুন মানুষের  মধ্যে একত্রীভূত/সঞ্চিত হবে এবং ধীরে ধীরে কলি যুগের মানুষ পবিত্র হয়ে আদ্য সত্য যুগের ধর্ম, সত্য ,দয়া ,তপ, দান এই চারটি অংশ পরিপূর্ণ হয়ে  আদ্য সত্য যুগের মানুষে রূপান্তরিত হবেন ।
শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরান 



শ্রী হরি বিষ্ণুর ১০ অবতারের স্তুতি শ্রবণ অথবা পঠন,অথবা নাম স্মরণ করার সময়  ও শ্রী হরি বিষ্ণুর রূপ গুলি মনে কল্পনা করতে হবে এবং এটি মন্দিরের আরতির  সময় সূচির  মধ্যে করতে পারলে ভালো হয় ,তবে অসুবিধা থাকলে যখন সময় পাবেন তখন ই  করতে পারেন।


ভারত এবং বাংলাদেশের মন্দিরের আরতি  এবং তার সময় সূচি। 
1.মঙ্গল আরতি – সকাল-04:30AM-থেকে সকাল-06:300 AM.[সূর্য উঠার আগে]
2.ভোগ আরতি- দুপুর-1200 PM-থেকে  দুপুর-12.59 PM
3.সন্ধ্যা আরতি – সন্ধ্যা-06:O0PM-থেকে সন্ধ্যা-0700 PM [সূর্য অস্ত যাবার পর ,আকাশে তারা দৃশ্যমান হওয়ার সময়। ]

সনাতন হিন্দু ধর্মে ''ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ'' (সংস্কৃত: धर्मो रक्षति रक्षितः) একটি অতি জনপ্রিয় সংস্কৃত বাক্যাংশ এবং যেটি  মনুসংহিতা (শ্লোক ৮.১৫) ও মহাভারতে উল্লিখিত। এটির অর্থ হলো "ধর্ম তাদের রক্ষা করে যারা ধর্ম কে  রক্ষা করে। তাই যুগ পরিবর্তনের সন্ধি কালে মানুষ কে ধর্ম রক্ষা করতে হবে ,ধর্মের পথে চলতে হবে তাহলে ধর্মই মানুষ কে রক্ষা  করবে। পঞ্চ সখার মধ্যে অন্যতম শ্রী জগন্নাথ দাস বলেছেন নিম্নোক্ত ৩২ অক্ষরের মন্ত্র টি জপ্ করে মানুষ সমস্ত বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাবেন। রাম হরে, কৃষ্ণ হরে, রাম হরে, কৃষ্ণ হরে, রাম হরে, কৃষ্ণ হরে, অনন্ত মাধব হরে।
শ্রী কল্কি নাম সংকীর্তন/মন্ত্র


ভবিষ্য মালিকা সত্য হওয়ার এবং যুগ পরিবর্তন হওয়ার  চান্স কত পার্সেন্ট?

জগন্নাথ মহা প্রভুর কিছু  ভক্তদের  মতে যুগ পরিবর্তন হওয়ার চান্স ১০০%,এটি কে পরিবর্তন করার ক্ষমতা মহা প্রভু  জগন্নাথ  ছাড়া আর অন্য কারোর নেই। ভবিষ্য মালিকা গবেষেক ও প্রচারকদের মতে ভবিষ্য মালিকা ১০০%  সত্য ,তাই   যুগ পরিবর্তন হচ্ছে এটাও সত্য। তবে অনেকের মতে ভবিষ্য মালিকা  মিথ্যা। আবার  অনেকের মতে না যুগ পরিবর্তন হবে ,না ঈশ্বরের নাম নিলে কিছু হবে।

যাঁরা ভগবানকে গভীর শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস করেন, তাঁরা এই পরিস্থিতিতে কিছুটা সংশয়ে আছেন এবং ভাবছেন ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে। তাঁদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই—যুগ পরিবর্তন হোক বা না হোক, ঈশ্বরের নাম গ্রহণে কোনো ক্ষতি নেই। বরং এতে শুধু পুন্য অর্জন হয় না, হরি নাম মনকে শান্তি দেয় এবং মনোবলও বৃদ্ধি করে। সেইজন্য  ঈশ্বরের নাম ও কীর্তি  স্মরণ,মনন ও চিন্তন করুন এবং  যুগ পরিবর্তন টা  অন্য কোন চিন্তা না করে প্রভুর উপর ছেড়ে দিন। ।

অনেকেই আবার বলেন  কর্মই পরম ধৰ্ম ,এই কথা টি সত্য কিন্তু এই পথ টি অত্যন্ত জটিল কারণ ছান্দোগ্যোপনিষদ্‌ অনুসারে যে সমস্ত মানুষ তাঁদের আবিষ্কৃত (কোন নতুন ধরনের জিনিস,যন্ত্র বা বিষয় তৈরী,প্রযুক্তি উদ্ভাবন,প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি) জ্ঞান/বিদ্যার  দ্বারা  জীব তথা  মানব কল্যান করেন তাঁরা সর্বোৎকৃষ্ট/প্রথম শ্রেণীর ধার্মিক এবং তাঁদের  মৃত্যুর পর তাঁরা  দেব লোকে ব্রাহ্মণ (জ্ঞানী )পদ লাভ করেন। তাই বলা হয়  কর্মই পরম ধৰ্ম,স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্ত কর্ম পরম ধর্ম নয় । সেই জন্য সাধারণ মানুষের পুন্য অর্জন ও ঈশ্বর প্রাপ্তির  সবচেয়ে সহজ ,সরল উপায় হল প্রভুর নাম  স্মরণ,মনন ও চিন্তন যার জন্য দরকার সামান্য একটু ইচ্ছা ও সময়। 

এবার আসুন মন কে শান্ত করার জন্য  শোনা যাক  অতি প্রিয় ভক্তি গীত অচ্যুতম কেশবম কৃষ্ণ দামোদরম।। রাম নারায়ণম জানকী বল্লভম।।
অচ্যুতম কেশবম কৃষ্ণ দামোদরম


লেখকের মন্তব্য:-এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন  তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। 

সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক। 🙏🙏সবাই বলুন- আনন্দে একবার -হরি -হরি। 
শুনুন ধর্মনিষ্ঠ মহান কৃষ্ণ ভক্ত সচি কুমার দাসের 
কন্ঠে গাওয়া সুমুধুর হরিনাম সংকীর্তন।     




লেখক পরিচিতি:- প্রবীর  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।
Comment of Author:-
This article has been penned under the divine inspiration of Lord Jagannath. If anybody or any organization doesn't agree with any content of this article, he or they may mention it in the comments with documentary evidence and it will be corrected. Any comments in this regard without documentary evidence and source of Information will be treated as mala fide.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।

শ্রী শ্রী মা ষষ্ঠীদেবীর পূজা এবং তাঁর ধ্যান মন্ত্র,প্রণাম মন্ত্র ও ব্রত পালন ।