সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ও কল্কি অবতার।


কল্কি অবতার

চার যুগের সময় পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্যসমূহ:- 
হে প্রভু ,হে নারায়ণ ,আপনিই অনন্ত ,আপনিই এই সৃষ্টির  স্রষ্টা এবং আপনি ই আদি এবং আপনিই অন্ত। সমুদ্রের অগণিত  ঢেউ এর মতো আপনার অগণিত অবতার। আপনি ই যুগ পরিবর্তক দেবতা। আপনারাই ইচ্ছায় সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর ,কলি এই চার যুগের সময় ,পরিমাণ,  বৈশিষ্ট্যসমূহ ও আপনার প্রমুখ  অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ও তার লক্ষণ   ও কলিযুগে আপনার কল্কি অবতারের কথা বর্ণনা করিলাম,ভুল ত্রুটি মার্জনা করিবেন। আপনার শ্রী চরণে অনন্ত কোটি বার প্রণাম। 🙏
★ ১.সত্য যুগ
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সত্য যুগ হলো, চার যুগের প্রথম যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ ও কলি যুগ।
মৎস্য অবতার


বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষে তৃতীয়া তিথিতে রবিবারে সত্যযুগের উৎপত্তি। এই যুগের আয়ু বা পরিমাণ ছিল  ১৭,২৮,০০০ বছর। এই যুগে ভগবান ৪ টি রূপে অবতার নিয়েছিলেন । 1. মৎস্য (মাছ), 2.কুর্ম (কচ্ছপ), 3.বরাহ (শুকর), 4. নরসিংহ (সংস্কৃত: नरसिंह, বানানান্তরে নৃসিংহ-মানুষ ও সিংহের সমন্বিত রূপ)।


কুর্ম অবতার

 বরাহ অবতার


 এই যুগে শুধু পুণ্য ছিল,পাপ ছিল না। প্রাণ ছিল মজ্জায়। মৃত্যু ছিল ইচ্ছাধীন। এই যুগে সোনার পাত্র ব্যবহার করা হত।  এই যুগে মানুষের সমস্ত ইচ্ছাই  পূর্ণ হত।
নরসিংহ অবতার
★২ ত্রেতা যুগ:-
 ত্রেতা যুগ হলো হিন্দুধর্ম অনুযায়ী, চার যুগের দ্বিতীয় যুগ। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে সোমবারে ত্রেতা যুগের উৎপত্তি। এই যুগের আয়ু বা পরিমাণ ছিল  ১২,৯৬,০০০ বছর।  এই যুগে পালনকর্তা বিষ্ণুর তিন অবতার যথাক্রমে বামন, পরশুরাম এবং রাম।


বামন অবতার

পরশুরাম অবতার


প্রভু - রাম
রাম অবতার

এই যুগে পুণ্য ছিল তিন ভাগ, পাপ এক ভাগ। এই যুগে প্রাণ ছিল অস্থিতে। রূপার পাত্র ব্যবহার করা হত।এই যুগে মানুষের  ইচ্ছা পূর্ণ করতে যজ্ঞ  করতে হত। 
★৩ দ্বাপর যুগ
শ্রীকৃষ্ণ অবতার
  দ্বাপর যুগ হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী,চার যুগের তৃতীয় যুগ। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ পক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে বৃহস্পতিবারে দ্বাপর যুগের উৎপত্তি। এই যুগের আয়ু বা পরিমাণ ছিল ৮,৬৪,০০০ বছর। এই যুগে পালনকর্তা বিষ্ণুর অবতার  শ্রীকৃষ্ণ । এই ভগবান শ্রী কৃষ্ণই  হলেন ধরাতলে অবতীর্ণ শ্রী হরি বিষ্ণুর  অবতার  গুলির মধ্যে ১৬ কলাতে পূর্ণ ও  পরম ব্রহ্মের অবতার। এই যুগে পুণ্য অর্ধেক, পাপ অর্ধেক। এই যুগে প্রাণ ছিল রক্তে। তামার পাত্র ব্যবহার করা হত।এই যুগে মানুষের  ইচ্ছা পূর্ণ করতে  কঠিন যজ্ঞ  করতে হত।
রাজা পরীক্ষিতের মুকুটে কলি  যুগের  প্রবেশ। এরপর থেকেই কলির
প্রভাবে বাড়তে লাগল রাজা পরীক্ষিতের দুর্বুদ্ধি।


কলি কে ছিলেন ?
কলির বাবার নাম ছিল  ক্রোধ এবং মায়ের নাম ছিল হিংসা। তাঁর দাদুর নাম ছিল দম্ভ,  তাঁর দাদুর বাবা ছিলেন অধর্ম। অধর্মের  স্ত্রী ছিলেন  মিথ্যা। কলি হলেন অধর্ম  এবং তার স্ত্রী মিথ্যার  প্রপৌত্র। অধর্ম মূলত ব্রহ্মার পিঠ থেকে নির্গত খুব অন্ধকার এবং মারাত্মক পাপী বস্তু থেকে (মলিন পাতক) উৎপন্ন হয়েছিলেন।
★৪ কলি যুগ
কলি যুগ ,আক্ষরিকভাবে “কলির যুগ”কলহের যুগ ,বা “পাপের যুগ” হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, চার যুগের শেষ যুগ। অন্য যুগ গুলো হলো- সত্য যুগ,ত্রেতা যুগ, ও দ্বাপর যুগ। সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যাখ্যা কর্তা দের মতে সনাতন (হিন্দু )ধর্মের চারটি স্তম্ভ ,নন্দীর চারটি পা  সত্য ,দয়া ,তপ  ও দানের উপর দাঁড়িয়ে আছে। এই কলিযুগে  নন্দীর দান রুপী পা টি স্রেফ বিদ্যমান তাই  কলি যুগে পুণ্য এক ভাগ,পাপ তিন ভাগ এবং দান  করাই হবে কলি যুগের প্রধান ধৰ্ম। নন্দী হলেন পবিত্রতার প্রতীক তাই সমস্ত যুগে সনাতন ধর্মীদের সর্বদা দেহ ও  মনের পবিত্রতা বজায় রাখতে হয় কিন্তু কলি যুগের বেশির ভাগ মানুষ দেহ ও  মনের পবিত্রতা বজায় রাখতে পারবেন না । কলি যুগে ধর্ম সংকোচিত। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত,মানুষ পাপে অনুরক্ত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। এই যুগে মানুষের  ইচ্ছা পূর্ণ করা প্রায় অসম্ভব । 
কলি যুগের সূচনা।
বেদব্যাস রচিত বিষ্ণু পুরানে বলা হয়েছে যে কৃষ্ণের পৃথিবী ত্যাগ করে স্বর্গারোহণের সময় থেকে পৃথিবীতে কলি যুগের সূচনা।
তিথি:-মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের পুর্ণিমা তিথিতে শুক্রবারে কলিযুগের সূচনা হয়েছে। 
কলি যুগের সময় পরিমাণ:-
প্রাচীন শাস্ত্র অনুযায়ী কলি যুগের আয়ু ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বছর । এখানে এটি উল্লেখ করা অত্যন্ত আবশ্যক যেমন কলি যুগে  মানুষের আয়ু  বলা হয়েছে ১০০বছর ,কিন্তু বেশির ভাগ লোক ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচেন না ,অনেকেই আবার অল্প বয়সেই  মারা যান ,সেই রকম কলি যুগের আয়ু ভোগ ,কলি যুগের পাপ ,পুন্য ,কর্ম ও ধৰ্ম অনুসারে হবে,কলি যুগের  আগে ত্রেতা ও দ্বাপর এই দুইটি যুগের কেউই  তাঁদের পূর্ন আয়ু ভোগ করতে পারেনি।
কলি যুগের আয়ু কম হওয়ার প্রধান কারণ। 
কলি যুগে মানুষ  গঙ্গা এবং পবিত্র জায়গায়  উলঙ্গ অবস্থায় স্নান করবেন। মিথ্যা কথা বলবেন। ব্রাহ্মণরা  অসৎ সঙ্গ ধরবেন ,অনুচিত কর্ম ও ধৰ্ম অনুযায়ী কাজ করবেন না । কলি যুগে মানুষ বন্ধুর সাথে ছল ,কপট করবেন। কলি যুগের বেশির ভাগ  মানুষ ,মদ মাছ মাংস ইত্যাদি  খাবার খাবেন এবং অসৎ ভাবে ধন  উপার্জন করবেন। কলি যুগে গো হত্যা হবে,ভাইয়ে, ভাইয়ে  ও বোনে , বোনে শত্রুতা হবে ,দানের অপব্যবহার হবে। বিধবা কে কষ্ট দেওয়া হবে এবং শোষণ করা হবে।,জীবদের  হত্যা ও উৎপীড়ণ হবে ,ভ্রূণ হত্যা হবে ,স্ত্রী উৎপীড়ন ও স্ত্রী হত্যা হবে ,অতিথির সেবা  হবে না ,ভাই ও ভাগিনীর মধ্যে ঝগড়া,হত্যা ,মারপিট  হবে।মাতা পিতার হত্যা ও উৎপীড়ণ হবে। কলি যুগে অনৈতিক বিবাহ ও বিবাহ পূর্ব ও বিবাহোত্তর অবৈধ সম্পর্ক হবে ,ঘরে ঘরে  তুলসীর ও নারায়ণের পূজা হবে না। যার ফলে কলি যুগের আয়ু কম হয়ে যাবে। 

সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ;-(প্রতিযুগে “সন্ধ্যা” ও “সন্ধ্যাংশ” থাকে। দুই যুগের. সন্ধিকেই “সন্ধ্যা” বলে। যুগ আরম্ভ হইবার অব্যবহিত পূৰ্ব্বকালকে “সন্ধ্যা” বলে এবং যুগের শেষ অংশকে “সন্ধ্যাংশ” বলে। (দিবসের যেরূপ প্রাতঃসন্ধ্যা ও সায়ং সন্ধ্যা , যুগের সেইরূপ সন্ধ্যা ও সন্ধ্যাংশ।)
মানুষের আয়ুকাল
মনু সংহিতায় বলা হয়েছে  কলি যুগে মানুষের পরমায়ু ১০০ বছর।
কলি যুগের লক্ষণ
বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী ব্রহ্ম সত্যযুগে সৃষ্টি করেন এবং কলিতে সৃষ্টির সংহার করেন। ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস এই চার প্রকার আশ্রমকে  চতুরাশ্রম বলা হয়। কলি যুগে এই চতুরাশ্রম প্রথা টি সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ,যার ফলে নানা প্রকার সামাজিক ব্যাধি দেখা যাবে।  কলি যুগে মানুষের আয়ু প্রায় একশ  বছর । মানুষের শরীরের দৈর্ঘ্য নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত । প্রাণ অন্নে। তীর্থ গঙ্গা। এই যুগে  বিদ্যমান সবকিছুর  আকার ,আকৃতি, অবয়ব,হবে  ছোট । কলিযুগের মানুষরা ,ধৰ্ম ,নীতি ,নিয়ম ,অনেক কিছু জানবেন কিন্তু তাঁর মূলতত্ত্ব /আসল তত্ত্ব, জানবেন না। যার ফলে কলিযুগের মানুষদের ধৰ্ম ,নীতি ,নিয়ম ,চরিত্র হবে সংকীর্ণ।

কলিযুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ:-
☯ এই যুগে মানুষ মেশিনের সাহায্যে নতুন নিত্য আবিষ্কার করবে।নতুন ইতিহাস তৈরি করবে,অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করবে। অমরত্বের সন্ধানে মানুষ অমরত্বের কাছাকাছি পৌঁছাবো। মানুষ  মেশিনের সাহায্যে গ্রহ  এবং মহাকাশে গ্যালাক্সির মধ্যে   ভ্রমণ করবে,অনেক অজানাকে জানবে। মানুষ এবং মেশিন খুব বেশি শক্তিশালী হবে। কলি যুগে  চতুরাশ্রম প্রথা টি সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ,যার ফলে নানা প্রকার সামাজিক ব্যাধি দেখা যাবে। 
কলিযুগের মানব সম্পর্কে  ঋষি মার্কণ্ডেয়র  বক্তব্য :-
☯কলিযুগের মানুষের প্রধান গুন হবে - লোভ এবং ক্রোধ ।
☯কলিযুগে মানুষ খোলাখুলিভাবে একে অপরকে ঘৃণা প্রদর্শন করবে। ধর্মের জ্ঞানহীনতা(অজ্ঞতা) ঘটবে।
☯কলিযুগে মানুষ মানুষকে সামান্য ঝগড়া,বকাবকি ও বিবাদের জন্যে খুন করবে এবং এর জন্য অপরাধবোধ হবে না।
☯কলিযুগে লালসা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে এবং যৌন সংসর্গকে জীবনের কেন্দ্রীয় প্রয়োজন হিসাবে দেখা হবে।
☯কলিযুগে পাপ দ্রুত বৃদ্ধি হবে । মানুষ মাদকদ্রব্য ও ওষুধের আসক্ত হয়ে উঠবে।
☯ ব্রাহ্মণরা  জ্ঞানবান্,বিচক্ষণ,হতে পারবেন না ,তারা সম্মান,শ্রদ্ধা হারাবেন, ক্ষত্রিয়রা সাহসী হবেন না,ব্যবসায়ী বনিকরা ন্যায়সঙ্গত লেনদেন ভুলে,অসাধু  হবেন ।
কলিযুগের শাসকের বৈশিষ্ট্যসমূহ:-
ঋষি মার্কণ্ডেয়র মতে কলিযুগের শাসকরা ন্যায়বিরূদ্ধ,নিয়মবিরূদ্ধ,নিয়মশৃঙ্খলাহীন এবং অযৌক্তিক হয়ে উঠবেন এবং তারা অন্যায়ভাবে কর আদায় করবেন। শাসকেরা তাদের প্রজাদের রক্ষা করার দায়িত্ব এবং আধ্যাত্মিকতাকে বজায় রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না এছাড়া তাদের মধ্যে অনেকেই সৎ, নিষ্ঠাবান ও  কর্তব্য পরায়ণ  হবেন না। তাদের মধ্যে বেশির  ভাগ লোক নিজের স্বার্থ রক্ষার  জন্য ব্যক্তি, সমাজ এবং  বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবেন।
কলিযুগে ধর্ম ।
ধর্মগ্রন্থ অনুসারে দান করাই হবে কলিযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ  ধর্ম ।মনু সংহিতায় বলা হয়েছে যে সত্যযুগে তপস্যা,ত্রেতায়ুগে জ্ঞান,দ্বাপরযুগে যজ্ঞ এবং কলিতে দানই প্রধান হবে । কৃষ্ণ যজুর্বেদে ভগবান ব্রহ্মা, মহর্ষি নারদ কে বলেছেন  কলি যুগে "হরে কৃষ্ণ ,হরে রাম মন্ত্র"  কলি  যুগের প্রভাব  থেকে মানুষ কে রক্ষা করবে।
 রামায়ণের  শেষ খন্ডে লেখা আছে  ভগবান শ্রী রামচন্দ্র মর্তলোক  থেকে স্বর্গলোক যাবার সময় বজরংবলী হনুমান কে বলেছিলেন  কলিযুগে হরিনাম সংকীর্তন ই হবে মোক্ষ প্রাপ্তির উপায়। চৈতন্য মহাপ্রভু ও জগৎ গুরু আদি শঙ্করাচার্য সেই একই কথা বলেছেন । 
ভগবান শ্রী রামচন্দ্র ।

কলি কালের মহামন্ত্র -হরে রাম ,হরে কৃষ্ণ। 
নাম সংকীর্তনং যস্য সর্ব পাপ প্রণাশনম।
 

কলিযুগের মানুষের বৈশিষ্ট্যসমূহ:-
☯কলিযুগের  বেশির ভাগ মানুষেরা তিনভাগ অধর্ম ও একভাগ  ধর্ম পালন করবেন ।
☯কলিযুগের মানুষের ইন্দ্রিয় প্রবৃত্তি হবে অতিশয় কুৎসিত এবং তাদের অন্তকরণ অতিশয় অপবিত্র হবে যার ফলে কলিযুগের বেশির ভাগ মানুষ না তার আত্মা কে জানতে পারবেন ,না পরমাত্মা কে জানতে পারবেন এবং এই নশ্বর পৃথিবীকে তারা সবকিছু ভাববেন।

☯হিংসা,ছলনা,মিথ্যা,আলস্য,নিদ্রা,দুঃখ,শোক ,ভয়,দীনতা প্রভৃতি  হবে কলি যুগের বৈশিষ্ট। কলিকালে পাষন্ড,আচারহীন,দুশ্চরিত্র,মিথ্যাবাদী,অপরাধী,ভাঁওতাবাজ (ধাপ্পাবাজ,ধূর্ত,প্রতারণাকারী)ইত্যাদি লোকের প্রভাব অত্যন্ত বাড়বে এবং এরা দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন এবং সজ্জনের হানি লক্ষিত হবে। সহজ ,সরল,ধার্মিক ও অসমর্থ মানুষরা ধনহীন হয়ে নিরন্তর কষ্ট,যন্ত্রণা,দুঃখ,কষ্ট ভোগ করবেন। কলি যুগের বেশির ভাগ শাসক  মুখে এক,কাজে আরেক হবেন।  

☯বিষ্ণু পুরাণ মতে কম ধনের অধিকারী হয়ে মানুষ এ যুগে ধনের বেশী গর্ব করবেন । ধর্মের জন্য অর্থ খরচ করবেন না। কলিযুগে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই  সৎ ,পরোপকারী,পুণ্যবান ও মহান ব্যক্তিরা স্বল্পায়ু হবেন যেমন জগৎ গুরু আদি শঙ্করাচার্য মাত্র ৩২ বছর বয়সে প্রয়াত হন।(স্বামী বিবেকানন্দ-৩৯ বছর)।

আদি শঙ্করাচার্য 


☯কলিকালে মানুষের ধর্মগ্রন্থের প্রতি  আর্কষন থাকবে না। কলিযুগের মানুষের অহংকার /দাম্ভিকতা / ঔদ্ধত্য চরম আকার ধারণ করবে এবং পাপ ও পাপীদের রাজত্ব হবে। কলি যুগে পাপীরা পয়সা দিয়ে না স্রেফ তাদের পাপ কে ঢাকা দিবেন পরন্তু পুণ্যাত্মা দের পাপী সাবস্ত্য করবেন। কলি যুগে পাপীরা পাপ করেও নিজেদের পুণ্যবান ভাববেন। এমন কি এদের অনেকেই বলবেন পাপ ,পুণ্য বলে কিছু নেই এসব মিথ্যা  এবং এরা এদের অনুগামীও  তৈরি করবেন। কলি যুগে কলির  অনুগামীদের (পাপীদের) স্বভাব হবে খ্যাপা কুকুরের মতো।কলিকালে মানুষ বৃদ্ধ,বয়স্ক ব্যক্তি,গুরু,শিক্ষক,মাতা  পিতার  অসম্মান ,অবজ্ঞা ও অবহেলা করবেন। 


☯কলি যুগে আসল ও নকল  ধৰ্মগুরু দের মধ্যে পার্থক্য করা খুব জটিল কাজ হয়ে দাঁড়াবে, অনেক ভণ্ড  ব্যক্তি ধৰ্মগুরু হয়ে ভণ্ডামি করে সহজ,সরল,ধার্মিক,গরিব মানুষদের ঠকাবেন। কলিযুগে দিব্য জ্ঞানীরা দূর্লভ হবেন। কলিযুগের বেশির ভাগ চিকিৎসকদের সেবা ভাব কম অর্থ উপার্জন ভাব প্রবল হবে।
☯কলি যুগে শিক্ষা ব্যবসাতে পরিণত হবে। ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে হিংসা ,ঈর্ষা ও দ্বেষযুক্ত  অসুস্থ  প্রতিযোগিতা হবে। 
☯কলিযুগের মানুষেরা বেদ অধ্যয়ন করবেন না। মানুষ অশাস্ত্রীয় তপস্যা করবেন ।
☯কলিযুগে মাতা পিতা এবং  সন্তান সন্ততির মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিম্নকোটির হবে। কলি যুগের অন্তিম কালে পুত্র এবং কন্যা  পিতৃ এবং মাতৃ হত্যা  এবং পিতা এবং মাতা  পুত্র এবং কন্যাকে হত্যা করতে কুন্ঠিত হবেন না ।কলিকালে মানুষ,নিজ ভাই ও ভগিনীর সাথে অভিঘাতী,প্রতিদ্বন্দ্বী,বিরোধী ও  শত্রু ভাব পোষন করবেন। কলি যুগের অন্তিম কালে পুত্র ,কন্যা কামান্ধ হয়ে পিতা ,মাতার অবাধ্য হবেন ও তাদের পরামর্শ ছাড়াই বিবাহ করবেন এবং পরে অবহেলা করবেন ও প্রয়োজনে হত্যা করতেও  কুন্ঠিত হবেন না। কলি যুগের অন্তিম কালে পিতা ,মাতাদের ও অন্তঃকরণ হবে অতিশয় অপবিত্র তারা পুত্রবধূ দের আপন করতে  পারবেন না ,পুত্রবধূ দের সহ্য করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করবেন এবং আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করবেন অথবা পুত্রবধূ কে হত্যা করবেন। এই পাপের পরিমান এত বেশী হবে যে  এতে কলি যুগের আয়ু কম হয়ে যাবে। 
☯কলিযুগের প্রধান গুন হচ্ছে কিছু মানুষ কম পরিশ্রমে বেশী অর্থ  অর্জন করবেন এবং কিছু মানুষ বেশী পরিশ্রমে কম অর্থ  অর্জন করবেন এবং কলিযুগের মানুষেরা অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জন করতে অভিলাষী হবেন।যার ফলশ্রুতিতে এই অর্থই অনর্থের কারণ হয়ে দাড়াবে। 

☯কলিযুগে মানুষের বৃহৎ সংসার এবং একসঙ্গে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন সমবায়ে একটি প্রসারিত পরিবার নষ্ট  হয়ে যাবে । আত্মীয়তার পরিবর্তে দেওয়া ,নেওয়ার সম্পর্ক টি প্রাধান্য লাভ করবে এবং গড়ে উঠবে  পিতা মাতা ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের কেন্দ্র করে  একটি  সংকীর্ণ এবং যান্ত্রিক পরিবার । 
☯কলিযুগে মানুষ বৈদিক ক্রিয়া,আচার সমূহ করবেন না । মানুষ স্নান না করে ভোজন করবে । গৃহস্থেরা হোমাদি করবেন না এবং উচিত দানসমূহও প্রদান করবেন না।
☯কলি যুগের মানুষ পূজায় খরচ কম করবেন কিন্তু পূজার জাকজমক ,আনন্দ ফুর্তি তে বেশি খরচ করবেন।


☯কলিযুগে মানুষের ভালোবাসা হবে স্বার্থ ও অর্থকেন্দ্রিক।
☯কলিযুগে ধর্মানুসারে খুব কম মানুষই বিবাহিত থাকবেন। বিবাহবহির্ভূত বা বিবাহোত্তর  প্রেম,ভালোবাসা,যৌন সম্পর্ক প্রবল আকার ধারণ করবে। কলি যুগে বিবাহের নীতি নিয়ম ও বৈবাহিক  সম্পর্ক ও  হবে বিচিত্র ধরনের।কলি যুগে মানুষের  সমকামিতা ও সমলিঙ্গ বিবাহ হবে।
☯কলিযুগে মানুষ ধর্মের জন্য ব্যয় না করে কেবল গৃহাদি নির্মাণে অর্থ ব্যয় করবেন।
☯কলিযুগে মানুষ অন্যের  সু‌খে দুঃখী এবং অন্যের দুঃখে সুখী  হবেন। 
☯কলিযুগে মানুষ পরকালের চিন্তা না করে কেবল অর্থ উর্পাজনের চিন্তাতেই নিরন্তর নিমগ্ন থাকবেন ।


 ☯কলিযুগে স্ত্রীলোকদের অনেকেই নিজেকে অত্যন্ত সুন্দরী বলে মনে করবেন ও বিলাস উপকরণে অতিশয় অনুরাগিণী হবেন। এছাড়া অনেকেই স্বেচ্ছাচারিণী,সর্বভোজী ও বহু ভোজনশীল হবেন ,পতিকে  অবহেলা করবেন এবং যার তার সাথে বন্ধুত্ব করবেন, নিজের দেহ পোষণে ব্যস্ত থাকবেন এবং নিরন্তর কঠোর ও মিথ্যা বাক্য বলবেন। 
☯কলিযুগের পুরুষগণ মদ,মাংস,মহিলা,মায়া এবং টাকা পয়সা-ধনসম্পদের   প্রতি খুব বেশী আকৃষ্ট হবেন।কলিযুগের পুরুষ ও নারীগণ অঙ্গপ্রদর্শন করবেন । অবিবাহিত পুরুষ ও নারীগণ একসাথে বসবাস করবেন ।
☯ কলিযুগের মানুষ একটি দেশ থেকে কাজের এবং খাদ্য সন্ধানে জন্য অন্য দেশে চলে যাবেন।
☯কলি যুগের বেশির ভাগ মানুষ নির্দয়ী হবেন  প্রচুর ধন সম্পত্তি  থাকার পরেও এরা ক্ষুদার্ত কে অন্নদান ,বস্ত্রহীন কে  বস্ত্রদান করবেন না।
☯.কলি যুগের বেশির ভাগ মানুষের ইচ্ছা (আকাঙ্খা) হবে ছলে বলে কৌশলে  ধন সম্পত্তি অর্জন ও অন্যায় ও অবিচার,যৌনাচার ও ব্যাভিচার। ধর্ম,পাপ ,পুন্য এগুলি তাদের কাছে হবে অর্থ হীন ও মিথ্যা,ঈশ্বর তাদের কাছে হবেন শ্রেফ এক কল্পনা ও কাহিনী মাত্র।
☯কলি যুগের অন্তিম কালে  কলিযুগের মানুষ মৃত দেহ নিয়ে শোক প্রকাশের জায়গায় আনন্দ ফুর্তি  করবেন।
☯কলিযুগে চৌর্যবৃত্তি,ঠগবৃত্তি প্রবল আকার ধারণ করবে এবং রক্ষকরাই  ভক্ষক হবেন।
☯ কলিযুগে মানুষের হিংস্রতা এত বেশি প্রকট আকার ধারণ করবে, যার জন্য মানুষ আর পশুতে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। কলি যুগে মানুষ পশু ,পাখির উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার ও দুর্ব্যবহার করবে ,প্রকৃতি কে দোহন  করবে। মানুষের অত্যাচারে যখন পশু পাখি ত্রাহিমাম করবে তখন কলিযুগের পতন হবে। 
পশু হত্যা বন্ধ করতে প্রভুর-বুদ্ধ অবতার 

কলি যুগের অবসানের /পতনের লক্ষন। 
জগন্নাথ সংস্কৃতির জ্ঞাতা ও বিখ্যাত  ভাগবত কথা বাচক পণ্ডিত কাশীনাথ মিশ্রের মতে হিন্দু শাস্ত্রে বর্ণিত  নিম্ন লিখিত ১৩টি লক্ষন যখন কলি যুগের মধ্যে  দেখা যাবে ,তখন কলিযুগের পতন হবে। ভক্তরা এই ১৩টি লক্ষন দেখে বুঝতে পারবেন কলি যুগের পতন শুরু হয়ে গেছে।  
১.ধর্ম অত্যন্ত সংকোচিত হবে - ধর্মান্ধতা বাড়বে ,এক ধর্ম থেকে আলাদা হয়ে পৃথক ধর্মের সৃষ্টি হবে।
২.ঘরে ঘরে পরম পিতা শ্রী হরি বিষ্ণুর পূজা হবে না। বিভিন্ন লোক  বিভিন্ন দেব দেবীর পূজা  করবেন। 
৩.ঘরে ঘরে তুলসী দেবীর পূজা হবে না।
৪.বেশির ভাগ লোক সূর্যদেব কে জল অর্পণ করবেন না। 
৫.বেশির ভাগ মানুষ অকৃতজ্ঞ হবেন।
৬.বেশির ভাগ মানুষ তপ বিরোহিত (তপস্যা করবেন না ) হবেন।
৭.বেশির ভাগ মানুষ মিথ্যাবাদী হবেন। 
৮.বেশির ভাগ মানুষ ধর্ম থেকে অনেক দূরে চলে যাবেন।
৯.বেশির ভাগ মানুষ নারীর  বশে বশীভূত হবেন ও নারীর  কথায় চলবেন। 
১০.অযোগ্য ও অকর্মন্য লোক উচ্চ পদে অধিষ্টিত হবেন /থাকবেন। 
১১.বেশির ভাগ ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন ,লোভী  ও জ্ঞান হীন হবেন এবং এঁদের অনেকেই স্বধর্ম বিরোধী ও কুলাচার বিরোধী হবেন এবং মান সম্মান হারাবেন।
১২.বেশির ভাগ শাসক স্বার্থ পর হবেন ,অর্থাৎ স্রেফ নিজের স্বার্থ দেখবেন।
১৩.পৃথিবী মাতা তাঁর  উর্বরতা শক্তি হারাবেন।

ॐ(ओ३म्) मंत्र॥

কলি যুগে কলির অনুগামী মানুষের অত্যাচারে  যখন  সাধারণ ,সহজ, সরল  মানুষ  ও পশু ,পাখি ত্রাহিমাম করবে,তখন ভক্ত বৎসল  শ্রী হরি  নারায়ণ ভগবান কল্কি রূপে পৃথিবীতে অবতারিত হবেন।ভগবান শ্রী বিষ্ণুর দশম অবতার ভগবান শ্রী কল্কি 64টি কলায়  পূর্ণ হবেন । 
কলি যুগে  ভগবান কল্কি তাঁর লীলা করবেন কিন্তু কলি যুগের মানুষ তাঁকে চিনতে পারবেন না,কেবল তাঁর ভক্তরাই তাঁকে চিনতে পারবেন। 

 শ্রী মহা বিষ্ণুর ষোড়শ (১৬) নাম স্তোত্রম।

🔱৷৷কলি যুগে কল্কি অবতার৷৷🔱

 কল্কি অবতার:-
কলিযুগের অন্তে মানে শেষের দিকে কলিযুগের অবতার রুপে অবতারিত হবেন  ভগবান কল্কি ।
ভগবান শ্রী বিষ্ণুর দশম অবতার ভগবান শ্রী কল্কি 64টি কলায়  পূর্ণ হবেন ।
ভারতীয় রাজ্য উড়িষ্যার গজপতি জেলায় অবস্থিত মহেন্দ্র গিরি পর্বতে অদৃশ্য রূপে বিদ্যমান ভগবান পরশুরাম হবেন ভগবান বিষ্ণুর শেষ অবতার ভগবান কল্কির গুরু। ভগবান কল্কি তাঁর  ভাই বলরাম কে সঙ্গে নিয়ে  কলি যুগ ও তাঁর শক্তি কে পরাজিত করে, যুগ পরিবর্তন করবেন ও সত্য যুগের সূচনা করবেন এবং পশু,পাখি,গাছ,পালা,নদ,নদী ইত্যাদিদের অধিকার ফিরিয়ে দিবেন এবং মানুষ কে এদের সম্মান করার শিক্ষা দিবেন এবং পৃথিবীতে ধর্ম,ন্যায়,সুখ ,শান্তি ইত্যাদি ফিরিয়ে আনবেন।

যুগ পরিবর্তন কে বা কারা  জানতে পারবেন ?
ডাক্তাররা যেমন রোগ ধরতে পারেন ,তেমনই ভক্তরা যুগ পরিবর্তন কে বুঝতে/জানতে  পারবেন।
 
ভক্তরা কিভাবে যুগ পরিবর্তন কে জানতে পারবেন ?
জগন্নাথ সংস্কৃতির কিছু জ্ঞাতা ও বিখ্যাত  ভাগবত কথা বাচকদের মতে ভক্তরা নিম্ন লিখিত লক্ষণ (পূর্বাভাস )গুলি দেখে  যুগ পরিবর্তন কে জানতে পারবেন ।
১.যুগ পরিবর্তনের সময়  গ্রহ ও নক্ষত্রের অবস্থানের পরিবর্তন হবে যার ফলে পূজা ,পার্বন গুলির তিথিতে খুব বেশি  পরিবর্তন হবে। 
২.মানুষ ও পশু পাখির আচরণের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে । মানুষের মধ্যে ,গৃহ যুদ্ধ ,আন্দোলন ,ও বিদ্রোহ করার ও করানোর প্রবনতা প্রবল হবে।  বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এক দেশের সাথে অন্য দেশের সম্পর্ক চিন্তাজনক হবে। অনেক দেশ একে অপরের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধ করবেন।  কুকুর ,বিড়াল এবং অন্য পশু ,পাখির অশুভ আওয়াজ শুনতে পাওয়া যাবে। শৃগালীরা অসময়ে  চিৎকার করবে। গায় গরুর অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাবে। (নোস্ত্রদাম ও পঞ্চ সখা-শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরান )
৩.বায়ু মণ্ডল অত্যাধিক দূষিত হবে। ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে প্রকৃতির  মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। যেমন  সমুদ্রের বিক্ষিপ্ততা বাড়বে,সূর্যের তাপ বাড়বে, কোথাও অতি বৃষ্টি হবে। কোথাও অনাবৃষ্টি হবে,যার ফলে দুর্ভিক্ষ হবে। ঋতু চক্র পরিবর্তন হবে। 
৪.একই পক্ষে সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ হবে। আকাশে ধুম কেতুর আবির্ভাব হবে এবং লাল অথবা নীল তারার আবির্ভাব হতে পারে। 
৫.অকাল মৃত্যুর সংখ্যা (বিশেষ করে কিশোর ও অবিবাহিত যুবক) অনেক বেশি হবে। বেশীর মানুষ খুব বেশি অশুভ স্বপ্ন দেখবেন। 
৬.যুগ পরিবর্তক দেবতার (ভগবানের) অবতার রূপে জন্ম নেওয়ার কথা কানে আসবে।
৭.১৩ দিনে পক্ষ হবে এবং মীন শনি যোগ হবে। চারিদিকে  সাম্প্রদায়িক হিংসা ,জাতি হিংসা ও যুদ্ধ হবে। 
৮.গ্রামে গঞ্জে, রাত্রে অপরিচিত পশু অথবা পাখির(কাল ) ডাক শোনা যাবে। 
৯.আকাশের রং বিচিত্র ধরনের হবে। উল্কাবৃষ্টিতে আলোকিত হবে আকাশ। 
১০.বার বার নিম্ন তীব্রতার ভূমি কম্প হবে এবং ভূমি কম্প হচ্ছে এই রকম অনুভব হবে।
১১.সূর্য ,চন্দ্র ,গ্রহ ,ও তারার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। সূর্য ,চন্দ্রের চারিদিক মণ্ডলাকার ধারণ করবে। 
১২.বার বার মহামারী হবে।
১৩.ধর্মস্থল গুলিতে বার বার অশুভ সংকেত দেখতে পাওয়া যাবে।

যুগ পরিবর্তনের সময় কি কি ঘটনা ঘটবে ?
কিছু জগন্নাথ সংস্কৃতির জ্ঞাতা ও বিখ্যাত  ভাগবত কথা বাচকদের মতে 
১.যুগ পরিবর্তনের সময় বার বার  উচ্চ তীব্রতার ভূমি কম্প হবে । 
২.মানুষ ও পশু পাখির মধ্যে আতঙ্ক  লক্ষ্য করা যাবে। যেমন বার বার কুকুর ,বিড়াল এবং অন্য পশু ,পাখির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যাবে। রাত্রে পেঁচা ,কাক ও কপোত দের অস্তিরতা দেখা যাবে। শৃগালীরা অসময়ে  চিৎকার করবে। গায় গরুর অস্থিরতা বাড়বে।   
৩.সমুদ্রের বিক্ষিপ্ততা বাড়বে এবং সুনামি আসবে এবং অতি বৃষ্টি হবে ও জল প্রলয় হবে।
৪.ভয়ঙ্কর আকৃতির কালো মেঘে গর্জনের সাথে বার বার বজ্রপাত হবে।
৫. অগ্নি প্রলয় ও বায়ু  প্রলয় হবে।
৬.নতুন নতুন রোগ আসবে,মহামারী হবে।
৭.বার বার মানুষ ও পশু ,পাখির আর্তনাদ কানে আসবে। 
৮.সাত দিন সাত রাত অন্ধকার হবে। 
৯.যুগ পরিবর্তক দেবতার লীলার আবির্ভাব হবে।
১০. ঐ যুগের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ টি ঐ সময় হবে। 
১১.অবিশ্বাস্য,ও অকল্পনীয় ঘটনা ঘটার কথা কানে আসবে।

 


কলিযুগ কখন এবং কিভাবে শেষ হবে? 


আজকাল সনাতন হিন্দু ধর্মের কিছু লোকদের মনে কয়েকটি  প্রশ্ন ভয়ঙ্কর ভাবে  আলোড়ন সৃষ্টি করেছে , কলি যুগ কি শেষ হয়ে গেছে ? আমরা কি এখন কলি যুগ ও সত্য যুগের মাঝখানে যুগ সন্ধি ক্ষনে  আছি ?  আমরা কি কলি যুগের ধ্বংস লীলার মোহনায় দাড়িয়ে আছি ? ২০২৫ সাল থেকে কি কলি যুগের ধংস লীলা শুরু হবে ? ২০৩২  সাল থেকে কি সত্য যুগের আগমন শুরু হবে ? এর মুখ্য কারণ আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে (তাল পাতায় লেখা ) পঞ্চ সখা রচিত পুস্তক ভবিষ্য মালিকা ,যেখানে এই রকম কিছু কথা বলা হয়েছে  ও তার ইঙ্গিত/ইশারা/সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কিছু প্রতিষ্টিত সোশ্যাল মিডিয়াতে বারংবার যুগ পরিবর্তনের কথা বলা হচ্ছে । কারন শ্রীমদ ভাগবত মহাপুরাণে বলা হয়েছে যখন "यदा चन्द्रश्च सूर्यश्च तथा तिष्यबृहस्पती । एकराशौ समेष्यन्ति भविष्यति तदा कृतम् ॥"  হবে  তখন  যুগ  সন্ধ্যা  শুরু হবে। অনেকের মতে  মতে ১৯৪২-১৯৪৩ সালে গ্রহ পরিস্থিতি   এই রকম হয়েছিল তাই কলি যুগ শেষ হয়ে গেছে এখন  যুগ সন্ধ্যা  চলছে  এবং ২০৩২ সালে কলি যুগের প্রভাব শেষ হয়ে যাবে। 

পঞ্চ সখা রচিত পুস্তক- ভবিষ্য মালিকা


প্রাচীন শাস্ত্র অনুযায়ী কলি যুগের সমাপ্তির সময়কাল এখনো আসেনি তার  কারণ কলি যুগের বয়স ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বৎসর ,কিন্তু জগন্নাথ সংস্কৃতির জ্ঞাতা ও ভাগবত কথা বাচক পণ্ডিত কাশীনাথ মিশ্রের মতে  বিভিন্ন পাপের ফলে  কলি যুগের বয়স প্রায়  ৪ লক্ষ ২৭ হাজার বছর কম হয়ে গেছে। যেমন গঙ্গা এবং পবিত্র জায়গায়  উলঙ্গ অবস্থায় স্নান করার জন্য ১২ হাজার বছর ,মিথ্যা কথা বলার জন্য ৫ হাজার বছর, ব্রাহ্মণদের অসৎ সঙ্গ,অনুচিত কর্ম ,ধৰ্ম অনুযায়ী কাজ না করার জন্য ৩০ হাজার বছর ,বন্ধুর সাথে ছল ,কপটতার জন্য ৬ হাজার বছর ,মদ মাছ মাংস ইত্যাদি  খাবার জন্য ৮ হাজার বছর ,অন্যের ধন অসৎ ভাবে নেওয়ার জন্য ১০ হাজার বছর,গো হত্যার জন্য  ১ লক্ষ বছর , ভাইয়ের সাথে শত্রুতা করার জন্য  ৪০ হাজার বছর,দানের অপব্যবহার করার জন্য ১৪ হাজার বছর,বিধবা কে কষ্ট দেওয়া,শোষণ করার জন্য ২৪ হাজার বছর,জীব হত্যার জন্য ও উৎপীড়ণ করার জন্য ১১হাজার বছর,ভ্রূণ হত্যার জন্য ৭ হাজার বছর,স্ত্রী হত্যার জন্য ৩২ হাজার বছর,অতিথির সেবা না করার জন্য ৬ হাজার বছর,ভাই ও ভাগিনীর সাথে ঝগড়া,হত্যা ,মারপিট করার জন্য ৪০ হাজার বছর,বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য ৪০হাজার বছর,মাতা পিতার হত্যা ও উৎপীড়ণ করার জন্য ৩ হাজার বছর,অনৈতিক বিবাহ ও বিবাহ পূর্ব ও বিবাহোত্তর অবৈধ সম্পর্ক ইত্যাদির জন্য ১২হাজার বছর,ঘরে নারায়ণের পূজা না করানোর জন্য ১৭হাজার বছর,ঘরে তুলসীর  পূজা না করানোর জন্য ৫হাজার বছর,মোট  ৪ লক্ষ ২৭ হাজার বছর। তাই ৪ লক্ষ ৩২ হাজার বছর থেকে  ৪ লক্ষ ২৭ হাজার বছর বিয়োগ করলে থাকে ৫ হাজার বছর। বর্তমানে কলি যুগের বয়স ৫হাজার ১২৫ বছর।

यदा चन्द्रश्च सूर्यश्च तथा तिष्यबृहस्पती । एकराशौ समेष्यन्ति भविष्यति तदा कृतम् ॥ শ্রীমদ ভাগবত মহাপুরাণ
 
এইসব তথ্যের ভিত্তিতে  অনেকেই বলছেন  কলিযুগের অন্ত শুরু হয়ে গেছে এবং ভগবান কল্কি ধরাতলে জন্ম নিয়ে নিয়েছেন এবং শীগ্রই  তাঁর লীলা শুরু হবে।  প্রভু কল্কি সত্য যুগের প্রতিষ্ঠা করবেন এবং ২০৩২  খ্রিস্টাব্দ থেকে আদ্যসত্য যুগ  শুরু হবে।

আদ্যসত্য যুগ।
 আদ্যসত্য যুগ মানে সত্য যুগ শুরু হওয়ার আগেকার সময় অর্থাৎ সন্ধি কাল। বিখ্যাত ভাগবত কথা বাচক কাশীনাথ মিশ্রের মতে  আদ্যসত্য যুগে- যন্ত্রের যুগ (কলি যুগ )মন্ত্রের যুগে (সত্য যুগ ) পরিবর্তিত হবে ,এই  যুগের  অন্য নাম হবে অনন্ত যুগ। এই অনন্ত যুগের অবধি হবে ১০০৯ বছর। 

ভাগবত কথা বাচক কাশীনাথ মিশ্রের মতে ও বেশ কিছু প্রতিষ্টিত সোশ্যাল মিডিয়ার মতে কলিযুগের  অবসান কাল শুরু হবে ২০২৫  খ্রিস্টাব্দ থেকে , এই  লীলা ২০৩০- ২০৩১সাল  পর্যন্ত চলবে এবং  ২০৩২ সালে আদ্য সত্য যুগের সূর্য উদয় হবে। তবে কিছু  প্রতিষ্টিত সোশ্যাল মিডিয়ার  মতে ২০৩৬ সালে মানুষ  আদ্যসত্য যুগের  প্রভাব অনুভব করবেন । আদ্যসত্য যুগের অবধি হবে ১০০৯ সাল ,এই সময় প্রভুর ভক্তরা প্রভুর সান্নিধ্য অনুভব করবেন এবং অনন্ত সুখ ,শান্তি অনুভব করবেন। এই আদ্যসত্য যুগের (অনন্ত যুগ ) মানবরা প্রভুর ইচ্ছা অনুসারে সত্য যুগের নির্মাণ করবেন।
 

ভক্তরা কিভাবে  জানতে পারবেন  যে সত্য যুগ আসছে ?
সত্য যুগের আগমনের  লক্ষন। 
১.ধর্ম প্রসারিত হতে শুরু করবে।  
২.ঘরে ঘরে শ্রী হরি বিষ্ণুর পূজা শুরু হবে । 
৩.ঘরে ঘরে তুলসী দেবীর পূজা শুরু হবে ।
৪.প্রচুর লোক সূর্য দেব কে জল অর্পণ করতে শুরু করবেন । 
৫.মানুষ সত্য ,দয়া ,তপ , দান ও পবিত্রতার অনুগামী ও আস্থাবান হতে শুরু করবেন।
৬.ভক্তরা যুগ পরিবর্তক দেবতার পূজা ও আরাধনা শুরু করবেন। 
যুগ পরিবর্তক দেবতা ভগবান কল্কি কে তাঁর ভক্তরা কিভাবে চিনবেন ?
শ্রীমদ্ভাগবতে মহর্ষি ব্যাস লিখেছেন বৈকুন্ঠে সবাই কে দেখলে মনে হয় ইনিই হয়তো শ্রী হরি বিষ্ণু ,কিন্তু শ্রী হরি বিষ্ণুর ছাতির ডান দিকে বিদ্যমান শ্রী বৎস চিহ্ন প্রভু কে অন্যদের থেকে আলাদা করে দেয় এবং প্রভু কে চিনতে পারা যায়। শ্রী হরি বিষ্ণুর অবতার প্রভু কল্কির শ্রী হরি বিষ্ণুর মতো,বক্ষস্থলের  ডান দিকে শ্রী বৎস চিহ্ন এবং বাম দিকে শ্রী লক্ষ্মী চিহ্ন থাকতে পারে, এই শ্রী  চিহ্ন গুলি  দেখেই প্রভু কে তাঁর ভক্তরা চিনতে পারবেন। এছাড়া অসংখ্য চিহ্ন যেমন শঙ্খ চিহ্ন, চক্র চিহ্ন, চন্দ্রচিহ্ন, গদাচিহ্ন,মৎস্য চিহ্ন,তীর চিহ্ন,ইত্যাদি প্রভুর শরীরে বিদ্যমান ,যা দেখে তাঁর ভক্তরা তাঁকে চিনতে পারবেন।
শ্রী বৎস চিহ্ন  দেখতে কেমন হবে ?
শ্রী বৎস চিহ্ন হবে অনেকটা ত্রিভুজাকার তিলের মতো,যার মধ্যে ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে মা লক্ষ্মীর মতো অবয়ব দেখা যাবে। 
যুগ পরিবর্তক দেবতা প্রভু কল্কি  কোথায় কবে জন্ম গ্রহণ করেছেন ? 
প্রভুর ভক্তদের কথা অনুসারে প্রভু কল্কি ধরাতলে জন্ম নিয়ে নিয়েছেন, শ্রী হরি বিষ্ণুর নাম যশ করেন এমন একটি উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে।  কিন্তু প্রশ্ন অনেকের মনে, প্রভু কল্কি  কোথায় এবং  কবে জন্ম গ্রহণ করেছেন ইত্যাদি ? 
প্রভুর ভক্ত দের মধ্যে অনেকেই বলছেন প্রভুর  জন্ম হয়েছে ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে এবং প্রভুর  জন্ম স্থান বিরজা ক্ষেত্র  জাজপুর। উড়িষ্যার বেশীর ভাগ ভক্তদের মতে  প্রভু কল্কি বিরজা ক্ষেত্র জাজপুরে জন্ম গ্রহণ করেছেন, তবে কোন সালে এবং কোন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছেন সেটা তারা জানেন না এবং জানতেও চান না কারণ তারা  প্রভুর লীলায়  হস্তক্ষেপ করতে চান না ,আবার এঁদের  মধ্যে অনেকেই বলছেন তারা অনেক কিছু  শুনেছেন কিন্তু বলতে পারবেন না কারণ তারা  প্রভুর লীলায়  হস্তক্ষেপ করতে চান না। 
বহু সংখ্যক ভক্তদের মতে প্রভুর জন্ম স্থান: গ্রাম -সম্ভূত সম্ভল  (Sambhut Sambhal) বিরজা (গিরিজা) ক্ষেত্র জাজপুর এবং প্রভুর  জন্ম হয়েছে ২০০৫ সালে। জন্মের সময় -দুপুর/দিনের মধ্যভাগ, প্রভুর শরীরে ,শঙ্খ ,অর্ধ গদা, পদ্ম ,চক্র ,বজ্র চিহ্ন  বিদ্যমান। এছাড়া দ্বাপর যুগে তাঁর পায়ে তীর লাগার চিন্ন টিও বর্তমান।
প্রভু কল্কির  নাম। 
ভক্তরা প্রভু কল্কিকে , মাধব ,কল্কি ,কল্কিরাম ইত্যাদি নামে স্মরণ করবেন। 
বলরাম অবতার এবং কল্কি লীলা । 
প্রত্যেক যুগে  ভগবান তাঁর  ভাই কে সঙ্গে  নিয়ে আসেন,শুন্য পুঁথি ও ভবিষ্য মালিকা অনুসারে কলি যুগেও প্রভু কল্কির সাথে প্রভু বলরাম পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছেন।  শুন্য পুঁথি ও ভবিষ্য মালিকা অনুসারে প্রভু বলরাম ১৯৬৫-থেকে ১৯৭৫ এর মধ্যে জন্ম গ্রহণ করে গুপ্ত ভাবে ,আছেন ,এবং প্রভু কল্কির আদেশের অপেক্ষা করছেন। প্রভু কল্কির আদেশ পেলেই তিনি প্রভু কল্কির কাছে যাবেন এবং মহা গুপ্ত কল্কি  লীলা শুরু হবে। 
প্রভু কল্কি  কখন তাঁর লীলা শুরু করবেন ? 
বেশ কিছু প্রতিষ্টিত সোশ্যাল মিডিয়ার মতে ,প্রভু কল্কি ২০২৫ থেকে  ২০২৭ এর মধ্যে তাঁর লীলা শুরু করবেন। (Info Grade:B-2).

ভবিষ্য মালিকার ভবিষ্যৎ বাণী সঠিক হওয়ার চান্স কত পার্সেন্ট ?
ভবিষ্য মালিকার ভবিষ্যৎ বাণী সঠিক হওয়ার চান্স এর আগে ভবিষ্য মালিকার মোট ভবিষ্যৎ বাণীর কত পার্সেন্ট  সঠিক হয়েছে তার উপর নির্ভর করবে,তবে ভবিষ্য মালিকার ভবিষ্যৎ বাণী সঠিক হওয়ার চান্স  বেশী কারণ এর টার্ম অফ রেফারেন্স গুলি বর্তমানে বিদ্যমান এবং ভবিষ্য মালিকার অনেক ভবিষ্যৎ বাণী সঠিক হয়েছে ।,
সত্য যুগ


 যদি ভবিষ্য মালিকার ভবিষ্যৎ বাণী সঠিক হয় এবং যদি যুগ পরিবর্তন হয় ,তখন মানুষ  কি ভাবে কলি যুগ থেকে সত্য যুগে যাবেন ?

কলি যুগ থেকে সত্য যুগে যাবার পথ। 
বিখ্যাত  ভাগবত কথা বাচক কাশীনাথ মিশ্র এবং ভবিষ্য মালিকা গবেষক শ্রী পুলিন বিহারী পন্ডা ও প্রভুর অন্য সেবকদের মতে  কলির  প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে ও যুগ পরিবর্তনের সন্ধি কালে কলি যুগ থেকে সত্য যুগে যাবার জন্য মানুষ কে  মদ ,মাংস ও সমস্ত প্রকার নেশা ত্যাগ করতে হবে,নিরামিষ খাবার খেতে হবে এবং নবধা ভক্তি অর্থাৎ ৯ প্রকারের ভক্তির  যে কোন একটি অথবা তার অধিক পালন করতে হবে। 

শ্রবণং কীর্তনং বিষ্ণোঃ স্মরণং পাদ সেবনম্।
অর্চনং বন্দনং দাস্যং সখ্যমাত্মনিবেদনম্।।

এর অর্থ শ্রবণ,.কীর্তন,ভগবান বিষ্ণু কে স্মরণঃ,পদসেবন,অর্চন(অর্চনা),বন্দন(স্তুতি, প্রণাম, স্তব),দাসত্ব (ঈশ্বরের সেবা করা),সখাত্ব এবং আত্মনিবেদন।এই ৯টি বা ৯ প্রকারের  ভক্তি কে বলা হয় নবধা ভক্তি।

 নবধা ভক্তি কি ভাবে করতে হবে। 
শ্রীমদ্ভাগবত মহা পুরান পাঠ করতে হবে। এছাড়া রোজ সকাল ,দুপুর ,সন্ধ্যায়  রাধা -মাধব ও দূর্গা-মাধব এর স্তুতি এবং শ্রী হরি বিষ্ণুর ষোড়শ (১৬) নাম স্তুতি, শ্রবণ অথবা পঠন অথবা নাম স্মরণ করতে হবে এবং শ্রী হরি বিষ্ণুর ১০ অবতারের স্তুতি শ্রবণ অথবা পঠন,অথবা নাম স্মরণ করতে হবে। এগুলি করলে মানুষের মধ্যে ধৈর্য্য,ক্ষমা ,বহিরিন্দ্রিয় সংযম ,চুরি না করা ,দেহ ও মনের পবিত্রতা ,মন সংযম ,শাস্ত্র জ্ঞান ,সত্য বিদ্যা ,সত্য আচরণ ,ক্রোধ বর্জন এই দশ টি গুন মানুষের  মধ্যে একত্রীভূত/সঞ্চিত হবে এবং ধীরে ধীরে কলি যুগের মানুষ পবিত্রত হয়ে সত্য যুগের ধর্ম সত্য ,দয়া ,তপ, দান এই চারটি অংশ পরিপূর্ণ হয়ে  সত্য যুগের মানুষে রূপান্তরিত হবেন ।
শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরান 




সময়  থাকলে রাধা -মাধব ও দূর্গা-মাধব এর নাম স্মরণ, এবং শ্রী হরি বিষ্ণুর ১০ অবতারের নাম স্মরণ  ১০৮ বার করে করতে হবে তার সাথে শ্রী হরি বিষ্ণুর ষোড়শ (১৬) নাম স্তুতি,করতে হবে। সময় কম থাকলে- কম পক্ষে ১২ বার প্রভুর ১০ অবতারের নাম, ১২ বার রাধা -মাধব ও  ১২ বার দূর্গা- মাধব এর নাম স্মরণ করতে হবে। রাধা -মাধব ও দূর্গা-মাধব এর স্তুতি এবং শ্রী হরি বিষ্ণুর ষোড়শ (১৬) নাম স্তুতি, শ্রবণ অথবা পঠন অথবা নাম স্মরণ  এবং শ্রী হরি বিষ্ণুর ১০ অবতারের স্তুতি শ্রবণ অথবা পঠন,অথবা নাম স্মরণ করার সময় মা দূর্গা,মা রাধারানী ও শ্রী হরি বিষ্ণুর রূপ গুলি মনে কল্পনা করতে হবে এবং এটি মন্দিরের আরতির সময়ে করতে হবে। 
ভারত এবং বাংলাদেশের মন্দিরের আরতি  এবং তার সময় সূচি। 
1.মঙ্গল আরতি – সকাল-04:30AM-থেকে সকাল-06:300 AM.[সূর্য উঠার আগে]
2.ভোগ আরতি- দুপুর-1200 PM-থেকে  দুপুর-12.59 PM
3.সন্ধ্যা আরতি – সন্ধ্যা-06:O0PM-থেকে সন্ধ্যা-0700 PM [সূর্য অস্ত যাবার পর ,আকাশে তারা দৃশ্যমান হওয়ার সময়। ]

সনাতন হিন্দু ধর্মে ''ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ'' (সংস্কৃত: धर्मो रक्षति रक्षितः) একটি অতি জনপ্রিয় সংস্কৃত বাক্যাংশ এবং যেটি  মনুসংহিতা (শ্লোক ৮.১৫) ও মহাভারতে উল্লিখিত। এটির অর্থ হলো "ধর্ম তাদের রক্ষা করে যারা ধর্ম কে  রক্ষা করে। তাই যুগ পরিবর্তনের সন্ধি কালে মানুষ কে ধর্ম রক্ষা করতে হবে ,ধর্মের পথে চলতে হবে তাহলে ধর্মই মানুষ কে রক্ষা  করবে।

অনেকের মতে না যুগ পরিবর্তন হবে ,না ঈশ্বরের নাম নিলে কিছু হবে। যুগ পরিবর্তন হোক বা না হোক ঈশ্বরের নাম নিলে কোন ক্ষতি নেই ,এতে না স্রেফ পুন্য লাভ হয় পরন্তু হরি নাম মনে শান্তি যোগায় এবং মনোবল বাড়ায়। অনেকেই আবার বলেন  কর্মই পরম ধৰ্ম ,এই কথা টি সত্য কিন্তু এই পথ টি অত্যন্ত জটিল কারণ ছান্দোগ্যোপনিষদ্‌ অনুসারে যে সমস্ত মানুষ তাঁদের আবিষ্কৃত (কোন নতুন ধরনের জিনিস,যন্ত্র বা বিষয় তৈরী,প্রযুক্তি উদ্ভাবন,প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি) জ্ঞান/বিদ্যার  দ্বারা  জীব তথা  মানব কল্যান করেন তাঁরা সর্বোৎকৃষ্ট/প্রথম শ্রেণীর ধার্মিক এবং তাঁদের  মৃত্যুর পর তাঁরা  দেব লোকে ব্রাহ্মণ (জ্ঞানী )পদ লাভ করেন। তাই বলা হয়  কর্মই পরম ধৰ্ম,স্বীয় উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্ত কর্ম পরম ধর্ম নয় । সেই জন্য সাধারণ মানুষের পুন্য অর্জন ও ঈশ্বর প্রাপ্তির  সবচেয়ে সহজ ,সরল উপায় হল প্রভুর নাম  স্মরণ,মনন ও চিন্তন যার জন্য দরকার সামান্য একটু ইচ্ছা ও সময়। 

এবার আসুন মন কে শান্ত করার জন্য  শোনা যাক  প্রভুর অতি প্রিয় সংকীর্তন গীত গোবিন্দম যেটি প্রত্যেক দিন জগন্নাথ ধাম পুরীতে প্রভুর শয়নের আগে গাওয়া হয়।
গীত গোবিন্দম 

লেখকের মন্তব্য:-এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন  তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। ডকুমেন্টারি প্রমাণ এবং তথ্যের উৎস  ছাড়া এই বিষয়ে যে কোনও মন্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং  অসাধু বলে গণ্য করা হবে । 

সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক। 🙏🙏সবাই বলুন- আনন্দে একবার -হরি -হরি। 

আমি এই আর্টিকেল টি আমার এক মাত্র 
ছেলে ৺ >আকাশের< জন্য উৎসর্গ করিলাম।
Appreciation Mail of  Jeremie Lumbroso
lecturer Princeton University. USA

শ্রী হরি বিষ্ণুর সহস্রনাম স্তোত্রম। 








শুনুন ধর্মনিষ্ঠ মহান কৃষ্ণ ভক্ত সচি কুমার দাসের 
কন্ঠে গাওয়া সুমুধুর হরিনাম সংকীর্তন।     















রাজস্থানের জয়পুরে  ভগবান কল্কির মন্দির।

জম্মু কাশ্মীরের কাটরাতে মাতা বৈষ্ণোদেবীর মন্দির। 







লেখক পরিচিতি:- প্রবীর  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।
Comment of Author:-
This article has been penned under the divine inspiration of Lord Jagannath. If anybody or any organization doesn't agree with any content of this article, he or they may mention it in the comments with documentary evidence and it will be corrected. Any comments in this regard without documentary evidence and source of Information will be treated as mala fide and will be deleted.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ষড়রিপু এবং মানব জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব:ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উপায়।

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।