দেবী দুর্গা এবং তাঁর বিভিন্ন রূপ। দুর্গাপূজা প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল ? বাংলার ও বাঙালির দুর্গাপূজা।

                                               ওঁ মা দুর্গা।

বেদ ও পুরান অনুসারে প্রথমে এই মহাবিশ্বে কিছুই ছিল না সম্পূর্ন শূন্য ছিল ,সেই শূন্যে ছিল স্রেফ  এক প্রদীপ্ত গর্ভ যার নাম হিরণ্যগর্ভ,  যার মধ্যে ছিল  অসীম ও অনন্ত জ্ঞান।ঋক বেদ অনুসারে হিরণ্যগর্ভ থেকেই সৃষ্টি  শুরু হয়েছে এবং পরব্রহ্মরই এক  রূপ হল এই হিরণ্যগর্ভ: এর মধ্যে বিদ্যমান তত্ব হলেন অসীম ও অনন্ত জ্ঞান।  এই হিরণ্যগর্ভ থেকে পরব্রহ্ম তাঁর ইচ্ছা অনুসারে  বিরাট রূপ ধারণ করলেন এবং তার পর যোগ মায়া কে সৃষ্টি করলেন।  তাই যোগমায়া  হলেন বিষ্ণু শক্তি । এনারই অপর নাম গিরিজা এবং বিরজা। এই অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডে শ্রী হরি নারায়ণ বাদ দিয়ে এনার মত মায়া অন্য আর কারও নেই  তাই ইনি  যোগমায়া এবং বৈষ্ণব আচারানুষ্ঠানে এঁনাকে নারায়ণী বলা হয় । শৈবরা এঁনাকে শিবের অর্ধাঙ্গিনী রূপে পূজা করেন , শাক্তরা এঁনাকে আদি শক্তি রূপে পূজা করেন। এই দেবী যোগমায়াই পরে পুরান ও উপ পুরাণে আখ্যায়িত হন দেবী দূর্গা নামে।
মা দুর্গা।
তিনি মহামায়া সনাতনী, শক্তিরূপা,গুণময়ী। তিনি এক,তবু প্রকাশ বিভিন্ন,
 তিনিই দেবী নারায়ণী,আবার ব্রহ্মশক্তিরূপা ব্রহ্মাণী,কখনো মহেশ্বেরী রূপে প্রকাশমানা ।
কখনো বা নির্মলা কুমারী রূপ ধারিণী,কখনো মহাবজ্ররূপিণী ঐন্দ্রী,
উগ্রা শিবদূতী,নৃমুণ্ডমালিনী চামুণ্ডা,তিনিই আবার তমোময়ী নিয়তি।
,তিনি অনির্বচনীয়া,অপারমহিমময়ী,পরব্রহ্মমহিষী;তিনিই আবার দেবী ঋষি কাত্যায়নের কন্যা কাত্যায়নী,তিনিই আদিশক্তি দুর্গতি নাশিনী দুর্গা।
দূর্গা পূজার প্রকার।  
১.শারদীয়া দুর্গাপূজা
২.বাসন্তী দুর্গাপূজা
আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী দুর্গাপূজা নামে পরিচিত।
অকালবোধন।
কালিকা উপপুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম উপপুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাদের পূজার যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজা বলে তাই এই পূজার নাম হয় "অকালবোধন''। 
দূর্গা পূজার সৃষ্টি:-
দুর্গা ও দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যতগুলি পৌরাণিক কাহিনী  প্রচলিত আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনীটি পাওয়া যায় শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্-এ। দেবীমাহাত্ম্যম্ আসলে মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর একটি নির্বাচিত অংশ। 
এই কাহিনীটি হিন্দুরা এতটাই মান্য করেন যে শ্রীশ্রীচণ্ডীর পাঠ দুর্গাপূজার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। এতে তেরোটি অধ্যায়ে মোট সাতশোটি শ্লোক আছে। শ্রীশ্রীচণ্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম্-এ দুর্গাকে নিয়ে প্রচলিত তিনটি কাহিনী ও দুর্গাপূজা প্রচলনের একটি কাহিনী রয়েছে।
দুর্গাপূজা প্রচলনের  কাহিনী
রাজা সুরথের কাহিনী
রাজা সুরথের কাহিনীটি শ্রীশ্রীচণ্ডী-র প্রধান তিনটি কাহিনীর সূচনা ও যোগসূত্র। প্রাচীন কালে সুরথ নামে এক রাজা তার রাজ্য হারিয়ে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরছিলেন ,ঘুরতে ঘুরতে তিনি এসে পৌঁছালেন  মহর্ষি মেধার আশ্রমে। অন্যদিকে সমাধি নামে এক বণিক তার স্ত্রী ও সন্তানদের আচরণে ক্ষুব্দ হয়ে ঘর ছেড়ে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরছিলেন ,ঘুরতে ঘুরতে তিনি ও এসে পৌঁছালেন  মহর্ষি মেধার আশ্রমে।রাজ্য হারিয়ে রাজা সুরথের মনে রাজ্যের প্রতি মায়া ছিল ,তিনি সেটা ভুলতে পারছিলেন না ,অন্যদিকে সমাধির মনে স্ত্রী ও সন্তানদের  প্রতি মায়া ছিল,তিনি ও তার স্ত্রী ও সন্তানদের ভুলতে পারছিলেন না। এই অবস্থায় তারা দুজনে মহর্ষির কাছে গিয়ে ,তাদের অন্তরের ব্যথার কথা জানালেন।মহর্ষি মেধা তখন বললেন এর কারণ হল মায়া এবং মায়ার অধিষ্টাত্রী দেবী হলেন মহামায়া। দেবী মহামায়া সন্তুষ্ট হলেই ,মনে সুখ ,শান্তি আসে ,এবং হারিয়ে যাওয়া বস্তু ফিরে আসে। মহর্ষি মেধা রাজা সুরথ ও বণিক সমাধির কাছে বর্ণনা করলেন দেবী মহামায়ার তিনটি কাহিনী 
১.মধুকৈটভের কাহিনি
২.মহিষাসুরের কাহিনি
৩.শুম্ভ-নিশুম্ভের কাহিনি
এই  তিনটি কাহিনীর মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ হল মহিষাসুরের কাহিনি (মহিষাসুর বধ)।

কলি যুগের অমৃত:জয় শ্রী দূর্গা মাধব। 

মহিষাসুর এবং মহিষাসুর বধ 
 রম্ভ নামক অসুর মহাদেবকে তপস্যায় সন্তুষ্ট করে তার নিকট ত্রিলোক বিজয়ী পুত্রবর প্রার্থনা করায় মহাদেব তাকে সেই বর প্রদান করেন। রম্ভ এই বরলাভ করে অসুর রাজ্যে ফেরার পথে এক মহিষের ন্যায় অপ্সরা কে দেখে কামার্ত হন এবং ওই অপ্সরাকে বিবাহ করে রম্ভাসুর। বিবাহের পর  মহিষের ন্যায়  অপ্সরা ও রম্ভের  যে সন্তান হয় তার নাম হয় মহিষাসুর। ব্রহ্মাকে তপস্যায় সন্তুষ্ট করে তার নিকট বর পেয়ে মহিষাসুর  দেব,দানব ও  মানবের অবধ্য  হয়ে গিয়েছিলেন 
 মহিষাসুর দেবগণকে একশতবর্ষ ব্যাপী এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিলে, বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাঁকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনি শ্রবণ করে তাঁরা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। সেই ক্রোধে তাঁদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। প্রথমে বিষ্ণু ও পরে শিব ও ব্রহ্মার মুখমণ্ডল হতে এক মহাতেজ নির্গত হল। সেই সঙ্গে ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হল। সু-উচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজঃপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল। কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূত হওয়ায় এই দেবী কাত্যায়নী নামে অভিহিতা হলেন।



প্রত্যেক দেবতা তাঁদের  অস্ত্র দেবীকে দান করলেন। হিমালয় দেবীকে তাঁর বাহন সিংহ দান করলেন। এই দেবীই অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্মী রূপে মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন । দেবী ও তাঁর বাহনের সিংহনাদে ত্রিভুবন কম্পিত হতে লাগল। মহিষাসুর সেই প্রকম্পনে ভীত হয়ে প্রথমে তাঁর সেনাদলের বীরযোদ্ধাদের রণক্ষেত্রে পাঠাতে শুরু করলেন। দেবী ও তাঁর বাহন সিংহ প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধ করে একে একে সকল যোদ্ধা ও অসুরসেনাকে বিনষ্ট করলেন। অবশেষে   মহিষাসুর স্বয়ং দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলেন। যুদ্ধকালে ঐন্দ্রজালিক মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে দেবীকে  বিমোহিত করার প্রচেষ্টায় রত হলেন; কিন্তু দেবী সেই সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন। যখন মহিষাসুর  অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করল। তখন দেবী বললেন,গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম। ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।। ”
- রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। আমি তোকে বধ করলেই দেবতারা এখানে শীঘ্রই গর্জন করবেন।
এই বলে দেবী লম্ফ দিয়ে মহিষাসুরের উপর চড়ে তাঁর কণ্ঠে পা দিয়ে শূলদ্বারা বক্ষ বিদীর্ণ করে তাকে বধ করলেন। অসুরসেনা হাহাকার করতে করতে পলায়ন করল এবং দেবতারা স্বর্গের অধিকার ফিরে পেয়ে আনন্দধ্বনি করতে লাগলেন। অন্য তথ্য  থেকে জানা যায়, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে দেবী কাত্যায়নী আবির্ভূতা হয়েছিলেন; শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে কাত্যায়নী  দেবীকে দেবতারা  পূজা করেন এবং দশমীতে দেবী মহিষাসুর বধ করেন। মহর্ষি মেধার কাছে দেবী মহামায়ার কাহিনী  শুনে রাজা  সুরথ ও সমাধি মা মহামায়াকে প্রসন্ন করার জন্য  কঠিন তপস্যা করলেন ও তাঁর পূজা  করলেন এবং শেষে মহামায়া মা দুর্গা তাদের দেখা দিয়ে সুরথকে হারানো রাজ্য ফিরিয়ে দিলেন এবং সমাধি বণিককে তত্ত্বজ্ঞান দিলেন। 


এই দুর্গোৎসব স্মরণ করেই আমাদেরও শারদীয়া দুর্গাপূজা
দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপ
দেবী দুর্গা শ্রীকৃষ্ণের যোগমায়া, যিনি হরি সহায়িনী তথা হরিভক্তিপ্রদায়িনী। এনার ৯টি  রূপ কে নবদুর্গা  বলা হয় এবং দেবীর  এই ৯টি  রূপ কে  দিনে পূজা করা হয়। 
দেবী দুর্গার ৯টি  রূপ হল ।  

১.শৈলপুত্রীঃ

মা শৈলপুত্রীর বাহন বৃষ । এঁনার দক্ষিণ হস্তে ত্রিশূল আর বাম হস্তে কমল আছে । ইনি পূর্ব জন্মে দক্ষ নন্দিনী সতী দেবী ছিলেন । এই দেবী পর জন্মে হিমালয় কন্যা পার্বতী রূপে জন্ম নেন । শৈলরাজ হিমালয়ের কন্যা হবার জন্য দেবীর এক নাম শৈলপুত্রী এবং পরজন্মে তিনি দেবাদিদেব শিবকেই পতি রূপে বরন করলেন । নবরাত্রির প্রথম দিনে মা শৈলপুত্রীর আরাধনা করা হয় ।
দেবী শৈলপুত্রীর আরাধনা

বন্দে বাঞ্ছিতলাভায় চন্দ্রার্ধকৃতশেখরাং
বৃষারূঢাং শূলধরাং শৈলপুত্রী য়শস্বিনীম 

২.ব্রহ্মচারিণীঃ

মা দুর্গার নবশক্তির দ্বিতীয় রূপ ব্রহ্মচারিণী। এখানে ‘ব্রহ্ম’ শব্দের অর্থ হল তপস্যা। ব্রহ্মচারিণী অর্থাৎ তপশ্চারিণী/তপ আচরণকারী।  দেবী ব্রহ্মচারিণীর রূপ- জ্যোতিতে পূর্ণ, অতি মহিমামণ্ডিত। তিনি ডান হাতে জপের মালা এবং বাঁ হাতে কমণ্ডলু ধারণ করে আছেন।
পূর্বজন্মে যখন হিমালয়ের কন্যারূপে জন্মেছিলেন তখন তিনি নারদের পরামর্শে ভগবান শঙ্করকে পতিরূপে লাভ করার জন্য কঠিন তপস্যা করেন। সেই কঠিন তপস্যার জন্য তাঁকে তপশ্চারিনী বা ব্রহ্মচারিণী বলা হয়। কঠিন তপস্যা করার সময় পাতা (পর্ণ) খাওয়া পর্যন্ত পরিত্যাগ করায় তাঁর অন্য একটি নাম হয় ‘অপর্ণা’। তাঁর তপস্যার কঠোরতায় ত্রিলোকে হাহাকার পড়ে গেল দেবতা, ঋষি, সিদ্ধগণ, মুণি সকলেই ব্রহ্মচারিণী দেবীর এই তপস্যাকে অভূতপূর্ব পুণ্যকাজ বলে তাঁকে প্রশংসা করতে লাগলেন। অবশেষে পিতামহ ব্রহ্মা তাঁকে সম্বোধন করে প্রসন্ন হয়ে আকাশবাণীর মাধ্যমে বললেন, হে দেবী! আজ পর্যন্ত কেউ এরূপ কঠোর তপস্যা করে নি। তোমার দ্বারাই এরূপ তপস্যা সম্ভব। তোমার এই অলৌকিক কাজে চতুর্দিকে ধন্য ধন্য রব উঠেছে। তোমার মনোষ্কামনা সর্বতোভাবে পূর্ণ হবে। ভগবান চন্দ্রমৌলি শিবকে তুমি পতিরূপে পাবে। এবার তুমি তপস্যায় বিরত হয়ে গৃহে ফিরে যাও। তোমার পিতা শীঘ্রই তোমাকে নিতে আসবেন।
 মা দুর্গার এই দ্বিতীয় রূপ ভক্ত এবং সিদ্ধদের অনন্ত ফল প্রদান করে। তাঁর উপাসনা দ্বারা মানুষের স্বভাবে তপ, ত্যাগ, বৈরাগ্য, সদাচার, সংযম বৃদ্ধি পায়। জীবনের কঠিন সংঘর্ষেও তাঁর মন কর্তব্যে বিচলিত হয় না। মা ব্রহ্মচারিণী দেবীর কৃপায় তাঁর সর্বদা সিদ্ধি ও বিজয় প্রাপ্তি হয়। দুর্গাপূজার দ্বিতীয় দিনে এঁর স্বরূপেরই আরাধনা করা হয়। 
দেবী ব্রহ্মচারিণীর আরাধনা
দধানা করপদ্মাভ্য়ামক্ষমালা কমণ্ডলূ 
দেবী প্রসীদতু ময়ি ব্রহ্মচারিণ্য়নুত্তমা 

৩.চন্দ্রঘণ্টাঃ

দেবীর এই স্বরূপ পরম কল্যাণকারী । দেবীর মস্তকের  উপর ঘন্টার মতো অর্ধ চন্দ্র  বিদ্যমান তাই দেবীকে  চন্দ্র ঘন্টা নামে  অভিহিত করা হয়  এবং 
দেবী ঘণ্টার ন্যায় প্রচন্ড চন্ড(উগ্র) ধবনিতে দুরাচারী রাক্ষস , দানব , দৈত্য দের প্রকম্পিত করেন ।  এঁনার শরীরের রং স্বর্ণের মতো উজ্জ্বল । এই দেবী দশভুজা । এঁনার হাতে কমণ্ডলু , তরোয়াল , গদা , ত্রিশূল , ধনুর্বাণ , পদ্ম , জপ মালা থাকে ।
দেবী চন্দ্রঘণ্টার আরাধনা
পিণ্ডজপ্রবরারূঢা চন্দকোপাস্ত্রকৈর্য়ুতা 
প্রসাদং তনুতে মহ্য়ং চন্দ্রঘণ্টেতি বিশ্রুতা   
৪.কুষ্মাণ্ডাঃ-

দেবী দুর্গা তাঁর চতুর্থ স্বরূপে "কুষ্মাণ্ডা" নামে পরিচিতা। নবরাত্রের চতুর্থদিনে, অর্থাৎ চতুর্থী তিথিতে মাতৃপ্রাণ ভক্তগণ এই কুষ্মাণ্ডারূপেই আদ্যাশক্তিকে আহ্বান করে থাকেন।
কারুণ্যে ভরপুর মায়ের সৌম্যপ্রতিমা। দেবী  ত্রিনয়নী ও অষ্টভুজা। আটটি হাতে সুদর্শনচক্র, ধনুর্বাণ, রক্তপদ্ম, কমণ্ডলু, ইত্যাদি দৃষ্টিগোচর হয়। মায়ের বামহস্তে একটি অমৃতপূর্ণ কলসও রয়েছে। 
এবার আসি মায়ের নাম বিশ্লেষণে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, বলিদানের মধ্যে কুমড়ো বলি মায়ের অধিক প্রিয়। কুমড়োকে সংস্কৃতে "কুষ্মাণ্ড" বলে, কুষ্মাণ্ডপ্রিয় দেবী তাই কুষ্মাণ্ডা নামে স্তুতা। এ তো গেল সহজ একটি ব্যাখ্যা, কিন্তু এর সুগভীর অর্থও রয়েছে। যেমন-
"কুৎসিত উষ্মা সন্তাপস্তাপত্রয়রূপো যস্মিন সংসারে। স সংসারে অণ্ডে উদর রূপায়াং যস্যাঃ।।"
সংসার তাপযুক্ত, ত্রিবিধ তাপে জরজর। সেই সংসারকে যিনি ভক্ষণ করেন, তিনিই কুষ্মাণ্ডা। কু- কুৎসিত, উষ্মা সন্তাপত্রয়ে পূর্ণ জগৎ যাঁর অণ্ডে (উদরে) বিদ্যমান, তিনিই কুষ্মাণ্ডা।
দেবী কুষ্মাণ্ডার যেহেতু আটটি হাত, তাই তিনি "অষ্টভুজা" নামেও পরিচিতা। 

দেবী কুষ্মাণ্ডার আরাধনা 
সুরাসম্পূর্ণকলশং রুধিরাপ্লুতমেব চ 
দধানা হস্তপদ্মাভ্য়াং কূষ্মাণ্ডা শুভদাস্তু মে  
৫. স্কন্দমাতা :

এই রূপে দেবী তার পুত্র কার্তিকের মাতা হিসাবে পূজিত হন। কার্তিকের আর এক নাম স্কন্দ । তাই এই রূপে দেবীর  নাম স্কন্ধমাতা 
 নবরাত্রির পঞ্চম রাতে দুর্গা পূজিত হন স্কন্দমাতা রূপে  ত্রিনয়নী দেবী চার হাতবিশিষ্টা , ডানদিকের উপরের হাতে ধরে আছেন শিশু কার্তিককে ,প্রস্ফুটিত পদ্ম থাকে আর এক দক্ষিণ হস্তে  বাঁ দিকের একটি হাত বরাভয় দিচ্ছে  আর এক হাতে ধরে আছেন পদ্ম । 
দেবী স্কন্দ মাতার আরাধনা 
সিংহাসনগতা নিত্য়ং পদ্মাশ্রিতকরদ্বয়া 
শুভদাস্তু সদা দেবী স্কন্দমাতা যশস্বিনী 

৬. কাত্যায়নী :

এই নাম এবং রূপের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক পৌরাণিক কাহিনি , বৈদিক যুগে কাত্যায়ন নামে এক ঋষি ছিলেন এক পুত্রের পিতা কাত্যায়নের ইচ্ছে হয় একটি কন্যসন্তান লাভের  দেবী দুর্গার তপস্যা করে তিনি অভীষ্ট পূর্ণ করেন   
মহিষাসুর দেবগণকে একশতবর্ষব্যাপী এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিলে, বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাঁকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনি শ্রবণ করে তাঁরা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। সেই ক্রোধে তাঁদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। প্রথমে বিষ্ণু ও পরে শিব ও ব্রহ্মার মুখমণ্ডল হতে এক মহাতেজ নির্গত হল। সেই সঙ্গে ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হল। সু-উচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজঃপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল। 
কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূত হওয়ায় এই দেবী কাত্যায়নী নামে অভিহিতা হলেন। নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে আরাধিতা হন ভক্তদের কাছে 
দেবী কাত্যায়নীর আরাধনা
চন্দ্রহাসোজ্জ্বলকরা শার্দূল বরবাহনা 
কাত্যায়নী শুভং দ্য়া দেবী দানব ঘাতিনী
 
৭ . কালরাত্রি :

এখানে দেবী কৃষ্ণবর্ণা ,আলুলায়িত কেশে তিনি শত্রুর
 দিকে ধাবিত ,তাঁর কণ্ঠে বিদ্যুতের মল্লিকা  ত্রিনয়নী দেবীর শ্বাস প্রশ্বাসে বেরিয়ে আসে আগুনের হলকা , ভীষণ দর্শনা দেবীর তিন হাতে অস্ত্র  এক হাতে ভক্তদের প্রতি বরাভয়  এই রূপই উপাসিত হয় কালিকা রূপে  তবে এই রূপেও দেবী ভক্তের শুভ করেন ,তাই অন্যদিকে তিনি শুভঙ্করী  দেবীর বাহন গর্দভ , ভক্তরা তাঁর পুজো করেন নবরাত্রির সপ্তম রাতে 
দেবী কালরাত্রির আরাধনা
একবেণী জপাকর্ণপূর নগ্না খরাস্থিতা 
লম্বোষ্ঠী কর্ণিকাকর্ণী তৈলাভ্য়ক্তশরীরিণী 
 বামপাদোল্লসল্লোহলতাকণ্টকভূষণা 
বর্ধনমূর্ধ্বজা কৃষ্ণা কালরাত্রির্ভয়ঙ্করী 

৮.মহা গৌরী :

হিমা
য় কন্যা নাকি ছিলেন কৃষ্ণা  কিন্তু মানস সরোবরে স্নান করার পর ,  তিনি হয়ে ওঠেন ফর্সা  তাঁর এই রূপের নাম হয় মহাগৌরী  প্রচলিত বিশ্বাস, নবরাত্রির অষ্টম রাতে তাঁর পুজো করলে সব পাপ ধুয়ে যায়  সাদা পোশাক পরিহিতা, চার হাত বিশিষ্টা দেবীর বাহন ষাঁড় । দেবীর এক হাত শোভিত বরাভয় মুদ্রায়  বাকি তিন হাতে থাকে পদ্ম, ত্রিশূল এবং ডমরু 
দেবী মহাগৌরীর আরাধনা
শ্বেতে বৃষে সমারূঢা শ্বেতাম্বরধরা শুচিঃ 
মহাগৌরী শুভং দদ্য়ান্মহাদেবপ্রমোদদা 

৯. সিদ্ধিদাত্রী :

নবদুর্গার নবম তথা শেষ রূপ হল সিদ্ধিদাত্রী 
। দেবী চার হাতবিশিষ্টা । তিনি সিদ্ধি দান করেন  অর্থাত্ তাঁর উপাসনায় সংসারে আসে সুখ এবং সমৃদ্ধি  সবাইকে বরাভয় দেন এই মাতৃকামূর্তি  দেবী ভগবত্ পুরাণে আছে, স্বয়ং মহাদেব দেবী দুর্গাকে সিদ্ধিদাত্রী রূপে পুজো করেছিলেন  এবং তার ফলে মহাদেব সকল সিদ্ধি লাভ করেন সিদ্ধিদাত্রীর আশীর্বাদেই অর্ধনারীশ্বর রূপ লাভ করেন মহাদেব 
দেবী সিদ্ধিদাত্রির আরাধনা
সিদ্ধগন্ধর্বয়ক্ষাদ্য়ৈরসুরৈরমরৈরপি ।
সেব্য়মানা সদা ভূয়াত সিদ্ধিদা সিদ্ধিদায়িনী ।।

দুর্গাপূজা প্রথম কোথায় শুরু হয়েছিল ?
দূর্গা পূজা কবে, কখন, কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল--তা নিয়ে নানা মতভেদ আছে । তবে  ওড়িশার জাজপুর ক্ষেত্র টি কে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন ক্ষেত্র বলা হয় ,পৃথিবীর সৃষ্টির শুরুতে  এই জাজপুর ক্ষেত্র  থেকেই অস্থির পৃথিবীকে স্থিরতা  প্রদান করা হয়। এই জাজপুরের অধিষ্টাত্রী দেবী হলেন মা বিরজা (গিরিজা ),এই বিরজাই  (গিরিজা ) হলেন মা যোগমায়া  বা মা দূর্গা। তাই বেশির ভাগ সনাতন ধর্মালম্বীদের  মতে পৃথিবীর প্রথম দুর্গাপূজা এই জাজপুর ক্ষেত্রতেই  হয়েছিল। ওড়িষ্যা সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে  ''*মার্কেন্ডেয়  পুরান মতে,(Kalingan Chedi or Cheti or Chaitra Dynasty) চেদী রাজবংশের রাজা সুরথ (Suratha) খ্রীষ্ঠের জন্মের ৩০০ বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে-ওড়িশা/উড়িষ্যা ) দুর্গাপূজা শুরু করেন''।এটি সম্ভবত কলিযুগের প্রথম দূর্গা পূজা। 
মা বিরজা (গিরিজা )-জাজপুর




পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের দুর্গাপূজা
দুর্গাপূজা পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মধ্যে অবস্থিত বিমলা মন্দিরের প্রধান উৎসব। প্রতি বছর আশ্বিন (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে বিমলা মন্দিরে  দুর্গাপূজা উদ্‌যাপিত হয়। দুর্গাপূজার শেষ দিন, অর্থাৎ বিজয়াদশমীতে পুরীর গজপতি-বংশীয় রাজা মা বিমলাকে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা রূপে পূজা করেন। নতুন দিল্লি মিউজিয়ামে রাখা কোণার্ক থেকে পাওয়া শিলালেখ-এ এই পূজার প্রাচীনত্বের  উল্লেখ পাওয়া যায়। এই শিলালেখের তথ্য অনুসারে, রাজা প্রথম নরসিংহদেব (রাজত্বকাল: ১২৩৮–১২৬৪ খ্রিস্টাব্দ ) বিজয়াদশমীর দিন দুর্গা-মাধব (বিমলা-জগন্নাথ) পূজা করেছিলেন। দেবী বিমলাকে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে কাত্যায়নী, দুর্গা, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী বা একানংশা দেবী বলে উল্লেখ করা হয়েছে
দেবী বিমলার ভোগ নিবেদন
সাধারণত দেবী বিমলার জন্য আলাদা ভোগ রান্না করা হয় না।  জগন্নাথ মন্দিরে নিবেদিত নিরামিশ ভোগই মা বিমলাকে নিবেদন করা হয়। জগন্নাথের প্রসাদ মা বিমলাকে নিবেদন করার পরই তা মহাপ্রসাদের মর্যাদা পায়। ভোগে নারকেল বাটা, চিজ ও মাখন সহ শুকনো ভাত দেওয়া হয়।
মা বিমলা

 
বাংলার  বাঙালির দুর্গাপূজা



দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজেই প্রচলিত। তবে বঙ্গজীবনের শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা শুরু থেকে শেষ হয় দেবী দুর্গার বাপের বাড়ি আগমন থেকে স্বামীগৃহে গমন পর্যন্ত। বাঙালি হিন্দু সমাজে  মা দূর্গা কে কন্যা রূপে বরণ  করা  হয়। বাঙালি হিন্দু সমাজের  প্রত্যেকেই  মনে করেন,  মা  দূর্গা যেন তাদের বাড়ির মেয়ে তিনি যেন তাঁদের বাড়িতেই  আসছেন । তাই  হিন্দু বাঙালিদের সবাই  তাদের ঘর ,বাড়ী  মা দুর্গার আগমনের পূর্বেই  সাজিয়ে তুলেন।  হিন্দু বাঙালিদের বিশ্বাস,  মা দূর্গা  কৈলাস  থেকে  স্বপরিবারে তাঁর  বাপের বাড়িতে আসেন এবং দশমীর দিনে স্বপরিবারে আবার কৈলাসে গমন করেন। মা দুর্গার বাপের বাড়িতে থাকার সময় এই  চার দিন  মহা আনন্দের ,এই চার দিন হিন্দু বাঙালিরা কখনো বা মা রূপে কখনো বা কন্যা রূপে মা দুর্গার  পূজা করেন। দেবী  দুর্গার সাথে হিন্দু বাঙালিদের যে ভক্তি ,প্রেম ,ভালোবাসা তা এককথায় তা অবর্ণনীয়। 


আজকাল  শারদীয়া দুর্গাপূজা ভারত, বাংলাদেশ ও নেপাল সহ ভারতীয় উপমহাদেশ ও বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে পালিত হয়ে থাকে।  তবে বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হওয়ার দরুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যে ও বাংলাদেশে শারদীয়া দুর্গাপূজা বিশেষ জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয়।। ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রবাসী বাঙালি ও স্থানীয় জনসাধারণ নিজ নিজ প্রথামাফিক শারদীয়া দুর্গাপূজা ও নবরাত্রি উৎসব পালন করে। এমনকি পাশ্চাত্য দেশগুলিতে কর্মসূত্রে বসবাসরত বাঙালিরাও দুর্গাপূজা পালন করে থাকেন।

বাংলায় দুর্গাপূজা কবে,কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল ?
বাংলায় দুর্গাপূজা কবে,কোথায় প্রথম শুরু হয়েছিল এই বিষয়ে কোনো সঠিক তথ্য জানা নেই ,তবে বাংলার দূর্গা পূজা যে অতি প্রাচীন এই বিষয়ে কোন  সন্দেহ নেই । পূর্বে (প্রাচীন কালে )পঞ্চ গৌড়  ব্রাহ্মণদের  একটি শাখা গৌড় অঞ্চলে বসবাস  করতেন তাঁদের বলা হয় গৌড়  ব্রাহ্মণ ,তাঁদেরই  আরাধ্যা  হলেন  দেবী  দূর্গা। তারা প্রাচীন কাল থেকেই শারদীয় দূর্গা পূজার সময়  বাড়িতে  ঘট্  স্থাপন করে, অখণ্ড জ্যোতিঃ জ্বালিয়ে  ৯দিন ধরে মা নব দুর্গার ৯টি  রূপ কে পূজা করে আসছেন । যদিও এই  গৌড় (গড়)  ব্রাহ্মণ  আজ  বঙ্গে নেই ,কোনো এক বিশেষ কারণে তারা   বঙ্গ  ছেড়ে  উত্তর ভারতের দিল্লি ,হরিয়ানা ,রাজস্থান,পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ  ইত্যাদি জায়গায় বসবাস করছেন।
  যদিও বাংলায় মা নব দুর্গার পূজা যে অতি প্রাচীন এই বিষয়ে কোন সন্দেহ  নেই। একটি বহু প্রচলিত জনশ্রুতি  অনুসারে বাংলার রাজা বল্লাল সেন বুড়ি গঙ্গা নদীর তীরে দেবী দুর্গার একটি মূর্তি পেয়ে তার প্রাণ প্রতিষ্ঠা করিয়ে দুর্গাপূজা করেছিলেন ,তবে বর্তমানে বাংলার যে শারদীয় দূর্গা পূজা  সেটি শুরু হয়েছিল 1500 খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে । ব্রিটিশ বাংলায় এই পূজা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পায় এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে দূর্গাপূজা  স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে জাগ্রত হয়। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে (সালে) কলকাতায় প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে বারোয়ারি পূজা শুরু হয় এই পূজা আজ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব/শ্রেষ্ঠ পূজা নামেই পরিচিত।

আমাদের আজকালকার দুর্গাপূজা 
আমাদের আজকালের দূর্গা পূজার ধরন ধারণ দেখে অনেকেই বলছেন :-
*আমরা আজকাল দুর্গাপূজা  করিনা, উৎসব করি। *আমরা মন্ত্র বলিনা আমোদ,প্রমোদ ও উল্লাস  করি*আমরা হৃদয়ে দেবীকে আহ্বান করিনা। *মনের গ্লানি আর পাপকে নতুন জামাকাপড়ে ঢেকে রাখি।তাই প্যাণ্ডেলে প্যাণ্ডেলে বছর বছর প্রতিমা আসে,মা আসেন না।তাই অসুর ও মরে না।আজকাল আমরা বছরে স্রেফ চারদিন  মা দুর্গাকে ডাকি,বাকি তিনশ একষট্টি দিন অসুরদের তোষামোদ-খোশামোদ করি । তাদের সামনে মাথা নিচু করি। তাদের আস্ফালনকে ভয় পাই। তাদের ধ্বংস ও,সন্ত্রাসকে সমীহ করি। তাদের ভয়ে আমরা কুঁকড়ে থাকি। তাই আজকাল গ্রামে,গঞ্জে,পাড়ায়, মহল্লায়, শহরে,নগরে ,বন্দরে অসুরদের ছড়া ছড়ি । 



***অবশেষে খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেটি না জানলে আমাদের জ্ঞান হবে অসম্পূর্ণ। ***
আমরা যে দেবী লক্ষ্মী ও দেবী সরস্বতী কে  দেবী পার্বতীর কন্যা এবং পার্বতী পুত্র -কার্তিক-গণেশের সহোদরা ভগ্নীরূপে দেখি, সেটা আমাদের  একটি  ঘরোয়া মনগড়া গল্প, এর পিছনে কোন শাস্ত্রীয় অনুমোদন নেই। আসলে দেবী সরস্বতী হলেন  সৃষ্টিদেবতা ব্রহ্মার সহধর্মিণী এবং দেবী লক্ষ্মী হলেন  মহাবিশ্বের রক্ষক ভগবান বিষ্ণু পত্নী ও দেবী পার্বতী হলেন  ভগবান শিবের  সহধর্মিনী। এঁরা একসঙ্গে ,একযোগে ত্রিদেবী নামে পরিচিতা।এঁরা  সবাই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডকে চালাতে  ত্রিদেবকে সাহায্য  করেন 

লেখকের মন্তব্য:-এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন  তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। ডকুমেন্টারি প্রমাণ এবং তথ্যের উৎস  ছাড়া এই বিষয়ে যে কোনও মন্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং  অসাধু বলে গণ্য করা হবে এবং মুছে ফেলা হবে। 

সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক।🙏হে মা আমাকে শুধু জ্ঞান দাও ,ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏





















আমি এই আর্টিকেল টি আমারএক মাত্র 
ছেলে ৺>আকাশের< জন্য উৎসর্গ করিলাম। 
Appreciation Mail of  Jeremie Lumbroso
lecturer Princeton University. USA



লেখক পরিচিতি:- প্রবীর  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ও কল্কি অবতার।

ষড়রিপু এবং মানব জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব:ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উপায়।

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।