আত্মা ও মৃত্যু। মৃত্যুর পরে কি হয় ও আত্মার শান্তির জন্য কি করতে হয় ? আত্মার সাথে কি ভাবে যোগাযোগ করবেন ? পুনর্জন্মের বৃত্তান্ত -আত্মা ও গর্ভাধান ,পূর্বজন্মের কথা /বৃত্তান্ত কি ভাবে জানবেন ?
আত্মা কি ? পরমাত্মা কি ?
আত্মা বলতে সাধারণ অর্থে এমন এক সত্ত্বাকে বোঝানো হয়, যা অদৃশ্য এবং মানুষের শরীর ভিতরে স্বাধীনভাবে বসবাস করে , ভগবত গীতা"(2.20: Verse 20.) অনুসারে
न जायते म्रियते वा कदाचि- न्नायं भूत्वा भविता वा न भूयः ।
अजो नित्यः शाश्वतोऽयं पुराणो- न हन्यते हन्यमाने शरीरे ॥
ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচি-নায়ং ভুত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতোঃয়েংপুরাণো -ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।
এর বাংলা অর্থঃ- ''এই আত্মা কখনও জন্মান না বা মরেন না,অথবা একবার জন্মগ্রহন করে আবার জন্মাবেন না,-এমনও নয় । এই আত্মা জন্মহীন, নিত্য,সনাতন এবং পুরাতন ,শরীরের মৃত্যু হলেও আত্মার মৃত্যু হয় না''।
পরমাত্মা ।
পরমাত্মা বা পরমাত্মান্ (সংস্কৃত: परमात्मन्) শব্দটির দ্বারা কোন সীমাহীন জীবন, সীমাহীন চেতনা, সীমাহীন মহাকাশে সীমাহীন সত্তাকে বোঝায়। পরমাত্মার অর্থ সমস্ত আত্মার আত্মা বা সর্বোচ্চ আত্মা । পরমাত্মা শব্দটি সকলের সৃষ্টিকর্তাকে নির্দেশ করে।
মৃত্যু কি? মৃত্যু কাকে বলে ।
মৃত্যু হলো জীবনের একটি স্বাভাবিক এবং অবশ্যম্ভাবী সমাপ্তি, যেখানে একজন জীবিত প্রাণীর দেহের সমস্ত জৈবিক কার্যক্রম যেমন হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস, এবং মস্তিষ্কের কার্য ইত্যাদি স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়।। মৃত্যুর মাধ্যমে জীবনের অস্তিত্বের সমাপ্তি ঘটে, এবং এটি জীবনের চক্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আমাদের সনাতন ধর্মে (হিন্দু ধর্মে) বলা হয়েছে দেহ একটি খোলসের মত, এর ভিতরের আত্মা অপরিবর্তনীয় এবং অবিনশ্বর, এবং এই আত্মা জন্ম মৃত্যুর চক্রে ভিন্ন দেহ ধারণ করে থাকে। এই চক্রের সমাপ্তিকে মুক্তি বা মোক্ষ বলা হয় যেখানে এই আত্মা, পরমাত্মার সাথে মিশে যায়।
রাম নাম কে হীরে মতি।
আত্মার স্বরূপ ও আত্মার কিছু তথ্য।
1.আত্মা এক ,অবিনাশী ,আবরণ রহিত ,আশ্রয় ,শুদ্ধ ,স্বয়ং প্রকাশ ,সবকিছুর নিমিত্ত,নিত্য,নির্লিপ্ত ,নির্বিকার, ব্যাপক ও ক্ষেত্রজ্ঞ। (যিনি দেহ/ক্ষেত্রকে জানেন তিনি ক্ষেত্রজ্ঞ)। শ্রীমদ-ভাগবতম (শ্রীমদ ভাগবত মহা পুরাণ) সপ্তম স্কন্ধ,সপ্তম অধ্যায়।
2. মানুষ যেমন তাঁর বস্ত্র বদলায় ,আত্মা তেমনই শরীর বদলায়।
3.হৃদয় হলো আত্মার আবাসস্থল। আত্মা মন ও ইন্দ্রিয়গুলির সাহায্যে জ্ঞান অর্জন করে।
4.জগৎ জননী মা প্রকৃতি(মহামায়া/যোগমায়া )দ্বারা তৈরি দেহ /শরীর জীবের মাতা পিতা জীব কে হস্তান্তর/প্রদান করেন ,ঈশ্বর প্রদান করেন আত্মা।
5. শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরান ও উপনিষদের মতে আত্মা পুরুষের বীর্যের মাধ্যমে মাতৃ গর্ভে প্রবেশ করে ,অনেক সনাতন ধর্মী বিদ্বানদের মতে-সনাতন ধর্ম, উপনিষদের এই তথ্য মেনে সন্তান কে তার পিতার গোত্র ও উপাধি গ্রহণ করার অনুমতি প্রদান করে।
6.অন্য মতে মাতৃ গর্ভে শিশুর জন্মের কিছু দিন পরে আত্মা প্রবেশ করে।
7.মৃত্যুর সময় আত্মা তাঁর কর্ম কে সাথে নিয়ে তার অপূর্ণ ইচ্ছাগুলি পূর্ণ করার জন্য অন্য শরীরের সন্ধানে চলে যায় এবং কর্ম অনুসারে আত্মাকে তার কর্ম ফল ভোগ করার জন্য নতুন শরীর প্রাপ্ত হয়।
8.শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে । আত্মাকে অস্ত্র দিয়ে কাটা যায় না , আগুন পোড়াতে পারে না, জল ভিজাতে পারে না এবং বাতাস শুকাতে পারে না। মানুষ যেমন পুরানো বস্ত্র পরিত্যাগ করে নতুন বস্ত্র পরিধান করে, তেমনি আত্মাও পুরানো শরীর ত্যাগ করে নতুন শরীরে প্রবেশ করে। সেই জন্য আমাদের সবাই কে মনে রাখতে হবে:- এই জন্মে আমি ব্রাহ্মণ, পরের জন্মে আমি ক্ষত্রিয় হতে পারি। এই জন্মে আমি মানুষ, পরের জন্মে দানব হতে পারি। এই জন্মে আমি পশু, পরের জন্মে আমি বসু (দেবতা ) হতে পারি। তাই আমাদের কোনো পরিচয় বা অবস্থান নিয়ে অহংকার বা আসক্তি রাখা উচিত নয়, বরং সত্য, তপস্যা, দয়া, দান, পবিত্রতা, প্রেম, ভক্তি এবং করুণা আমাদের জীবনে গ্রহণ করা উচিত।
9.ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তাঁর গীতা উপদেশে বলেছেন
যারা কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ(অহংকার) ও মাৎসর্য্য (হিংসা) থেকে মুক্ত থাকেন এবং যারা আসক্তির কুপ্রভাবের ওপর জয় লাভ করেছেন, যারা সবসময় নিজের আত্মা এবং ঈশ্বরের মধ্যে লীন থাকেন, যারা ইন্দ্রিয়ভোগের আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্ত থাকেন এবং সুখ-দুঃখের দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে থাকেন, সেই সমস্ত ব্যক্তিদের মুক্ত আত্মারা আমার নিত্য ধাম লাভ করে, কিন্তু যেসব ব্যক্তি কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ(অহংকার) ও মাৎসর্য্য (হিংসা) আসক্তি এবং ইন্দ্রিয়ের ভোগের ইচ্ছা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেন না, সেই সব ব্যক্তিদের আত্মারা এই সংসার রুপী অশ্বত্থ গাছের একটি শাখা থেকে অন্য শাখায় জন্ম জন্মান্তরে অবিরত চলাফেরা করতে থাকে।
আত্মা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর ।
1.পিতৃলোক (Soul World) কি ?
আত্মারা যে জায়গায় থাকেন তাঁর নাম পিতৃলোক (Soul World)।
2. পিতৃলোক (Soul World) কোথায় অবস্থিত ?
এটি চন্দ্র লোকের উপরে অবস্থিত। এছাড়া মহান আত্মারা সূর্য লোক এবং ব্রহ্ম লোকে অবস্থান করেন। অত্যন্ত মহান আত্মারা বৈকুন্ঠ লোকে অবস্থান করেন।
3.পিতৃদের (আত্মাদের )দেবতা কে ?
পিতৃলোকে আর্যমা হলেন আত্মাদের দেবতা এবং তাদের বিচারক হলেন যমরাজ।পুরাণ অনুসারে, উত্তরা-ফাল্গুনী নক্ষত্র তার বাসস্থান। গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন পিতৃদের মধ্যে তিনি হলেন আর্যমা।
4.পিতৃদের (আত্মাদের ) খাদ্য কি ?
পিতৃদের (আত্মাদের ) খাদ্য হল গন্ধ এবং রস। পিতৃদের (আত্মাদের ) যে খাদ্য দেওয়া হয় তার গন্ধ এবং রস তাঁরা গ্রহণ করেন।
5.জীব আত্মা ,প্রেত আত্মা, এবং সূক্ষ্ম আত্মা কি ?
জীবন্ত জীবের দেহে বিদ্যমান আত্মা কে জীব আত্মা বলা হয়। জীবের মৃত্যুর পরে এই আত্মা যখন প্রেতের (কাম ও বাসনার) দেহে বাস করে তখন তাকে প্রেত আত্মা বলা হয়। এই আত্মা যখন আবার সূক্ষ্ম দেহে প্রবেশ করে তখন একে সূক্ষ্ম আত্মা বলে।
মহা মিথ্যুক, মহাভ্রষ্ট, বলপ্রয়োগী, মহাধূর্ত-মহা প্রতারক,ভয়ঙ্কর হিংসুক ও মহালোভী ব্যক্তিরা মৃত্যুর পর ভূত ,প্রেত ও পিচাশ যোনি প্রাপ্ত হন।
7.ভূত ,প্রেত ও পিচাশ লোক কোথায় অবস্থিত ?
আমাদের পৃথিবীর উপরে ভূত ,প্রেত লোক অবস্থিত।
ছান্দোগ্য উপনিষদ (সামবেদ) অনুসারে কোনও ব্যক্তি যদি তাঁর জীবদ্দশায় জগৎ কল্যাণ মূলক প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রক্রিয়াকরণ ইত্যাদি করেন তাহলে তাঁর মৃত্যুর পর তিনি স্বর্গলোকে ব্রাহ্মণ (জ্ঞানী )পদ লাভ করেন।
8.মৃত্যু কি ?
আসলে মৃত্যু বলে কিছু নেই ,মৃত্যু কারো ও হয় না তবে হ্যাঁ মৃত্যু বলতে একটি জীবনের সমাপ্তিকে বুঝায়। মৃত্যুর পর আত্মা একটি নতুন শরীর পায় এবং সে তাঁর নতুন জীবন শুরু করে।
মৃত্যুর পরে কি হয়।
1.মৃত ব্যক্তির আত্মা যখন স্থুল দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়, তখন তা সূক্ষ্ম দেহে প্রবেশ করে। এই সূক্ষ্ম দেহটি স্থুল দেহের মতো একই ধরনের, যা দৃশ্যমান নয়। এমনকি মৃত ব্যক্তির আত্মা নিজেও এই দেহের উপস্থিতি অনুভব করে।
2.মৃত্যুর পরে মৃত ব্যক্তির আত্মা খুবই অবাক হয় যে আমার শরীর এত হালকা হয়ে গেছে এবং আমি পাখির মতো বাতাসে উড়তে পারছি ।
3.মৃত ব্যক্তির আত্মাও নিজেকে মৃত না ভেবে অদ্ভুত আচরণ করে। সে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করে, হাত-পা নাড়াচাড়া করে, কিন্তু সে অনুভব করে না, যে সে মারা গেছে। সে অনুভব করে, যে সম্ভবত এই স্বপ্নটি দেখছে । সে বার বার তাঁর মৃতদেহে পুনঃ প্রবেশ করার চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।
4.যতক্ষণ মৃতদেহের সৎকার হয় ততক্ষণ আত্মা তার দেহের চারপাশে বারবার ঘোরাফেরা করতে থাকে। শরীর জ্বালিয়ে দিলে সে হতাশ হয়ে পড়ে এবং তার মনকে অন্য দিকে লাগাতে শুরু করে। মৃত্যুর পরে মৃত ব্যক্তির আত্মা তার বাড়িতে অথবা বাড়ির আসে পাশেই থাকে এবং শ্রাদ্ধ শান্তি হওয়ার পরেই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তার আগের যাত্রা শুরু করে।
5.যে সমস্ত ব্যক্তিরা মোহ ও আসক্তির বন্ধনে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ,তাদের মৃত্যুর পর তাঁদের আত্মা এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে চায় না ।
6.যে সমস্ত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের সাথে প্রেম আসক্তির বন্ধনে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ,তাঁদের আত্মা তাঁদের মৃত্যুর সাথে সাথেই ঈশ্বরের পরম ধামে যাত্রা করে ।
মৃত ব্যক্তির আত্মার যাত্রা পথ।
1.পুরাণ অনুসারে, মৃত ব্যক্তির আত্মা তার অন্তিম যাত্রা শুরু করার জন্য তিন ধরণের পথ পায়। আত্মা কোন পথে চালিত হবে তা নির্ভর করে তার কর্মের উপর। এই তিনটি পথ হল- অর্চি মার্গ, ধুম মার্গ এবং উৎপত্তি -বিনাশ মার্গ।
2.অর্চি মার্গ ব্রহ্মলোক এবং দেবলোকে যাত্রার দিকে নিয়ে যায়, ধূমমার্গ পিতৃলোকের যাত্রার দিকে নিয়ে যায় এবং উৎপত্তি -বিনাশ মার্গ আত্মা কে নরকে যাত্রার দিকে নিয়ে যায়। তবে সকল আত্মাকেই স্বর্গ লোক ,পিতৃ লোক এবং নরকে কিছুকাল বসবাস করার পর তাদের আবার জন্ম মৃত্যুর জীবন চক্রে ফিরে আসতে হয়। যজুর্বেদে বলা হয়েছে নিরাসক্ত, মহা পুণ্যবান ,মহা তপস্বী, ব্যক্তির আত্মা পরব্রহ্মলোকে যায় অর্থাৎ পরব্রহ্মে লীন হয়।
3. যে সমস্ত লোকেরা ভালো কাজ করেছেন তারা স্বর্গে যান। খারাপ,পাপী লোকেরা নরকে তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করেন তার পর আবার মৃত্যু লোকে তাদের কর্ম,ধৰ্ম,ভাবনা প্রবৃত্তি ও আসক্তি অনুসারে জন্ম নেন।
মহাপাপীরা পৈশাচিক কাজ করে অনন্তকাল ধরে ভূত যোনিতে বিচরণ করে এবং পরে আবার তারা পৃথিবীতে জন্ম নেয়। যারা জন্ম নেয় তাদের মধ্যেও এটা জরুরী নয় যে তারা কেবল মানব রূপে জন্ম নেয়। তাদের জন্ম তাদের কর্ম ,ধৰ্ম ,ভাবনা প্রবৃত্তি,আসক্তি ইত্যাদির উপর ভিন্ন ভিন্ন যোনিতে হয়।
মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য কি করতে হয়।
মৃত্যুর পর সত্কার ও পারলৌকিক কাজ কী ভাবে করতে হবে, যাতে বিদেহী আত্মা শান্তি লাভ করে, সেই বিষয়ে লেখা আছে গরুঢ় পুরাণে, এছাড়া শ্রীমদ্ভাগবতে ও এই বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে।গরুড়পুরাণ হল হিন্দুধর্মের ১৮টি মহাপুরাণের অন্যতম। গরুঢ় পুরাণ অনুসারে মৃত ব্যক্তির আত্মা ১০ থেকে ১৩ দিন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে অথবা তাঁর আসে পাশে থাকে। হিন্দুধর্মের নিয়ম ও নীতি অনুসারে বিদেহী আত্মার শান্তি লাভের জন্য অশৌচ পালন ও পারলৌকিক কাজ গুলি করার সাথে সাথে রোজ (১০-১২দিন )মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গরুঢ় পুরাণ/শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করতে হয় ,এবং গরুঢ় পুরাণ/শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ করার আগে মৃত ব্যক্তির প্রসংসা করতে হয় এবং তাঁর আত্মাকে গরুঢ় পুরাণ পাঠ শোনার জন্য অনুরোধ করতে হয়। গরুঢ় পুরাণ পাঠ শোনার পরে আত্মা তার পারিবারিক মায়া ,মোহ থেকে মুক্ত হয় এবং তাঁর আগের কর্তব্য বুঝতে পারে ও শান্তি লাভ করে এবং আগের যাত্রা শুরু করে এবং মৃত ব্যক্তির নামে পিণ্ডদান,সেই যাত্রা পথে তাকে খাদ্য জোগায় । এছাড়া মৃত ব্যক্তির আত্মা কে সমস্ত স্বার্থ ত্যাগ করে তাঁকে সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত করতে হয় এবং মৃত ব্যক্তির আত্মার কোনো অপূর্ণ মহৎ ,আশা ,আকাঙ্খা ও স্বপ্ন থাকলে সেগুলি প্রাপ্তির জন্য পরম ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হয় , সেসব কিছু না থাকলে বৈকুন্ঠ লোক প্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা করতে হয়।
পিতৃপক্ষ-
সনাতন হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে পিতৃ পক্ষে পিতৃ লোক থেকে আত্মারা তাঁদের বাড়িতে আসেন এবং এই সময় তাঁদের খাদ্য ও জল দিতে হয়। পিতৃদের (আত্মাদের ) খাদ্য হল গন্ধ এবং রস। পিতৃদের (আত্মাদের ) যে খাদ্য দেওয়া হয় তার গন্ধ এবং রস তাঁরা গ্রহণ করেন।
পিতৃ পক্ষে পিতৃকে জল ও খাদ্য অর্পণ :-
পূর্বপুরুষদের জন্য তৈরি খাবারের মধ্যে ভাত, ,ডাল,দুধ, খির, মিষ্টি দই, কুমড়ার তরকারী এবং আত্মার প্রিয় কোন একটি শাকাহারী খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয় । নৈবেদ্য সাধারণত একটি কলা পাতা বা শুকনো পাতাতে রেখে (দক্ষিণ দিকে) অর্পন করা হয়। এই অনুষ্ঠান টি আপনি আপনার ঘরে অথবা অন্য কোন পবিত্র জায়গাতে করতে পারেন। আপনি যদি মন্ত্র না জানেন তাহলে মনে ভক্তি রেখে আপনার ভাষায় (বাংলায় ) তাদের আবাহন করুন এবং পরে খাদ্য ও জল গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করুন।
খাদ্য অর্পন করার নিয়ম :-
প্রথমে যেখানে খাদ্য অর্পন করবেন সেই জায়গাটি পরিষ্কার করুন। যে খাদ্য অর্পন করবেন তার আগে স্নান করা উচিত এবং শুদ্ধ কাপড় (ধুতি) পরিধান করা উচিত। এর পর আত্মা কে ডাকুন এবং দক্ষিণ দিকে রাখা নৈবেদ্য প্রথমে ভগবান বিষ্ণু কে অর্পণ করুন এবং পরে আত্মা কে অর্পণ করুন এর পর আত্মা কে তিন বার জল দিন । এর পর অর্পিত,নৈবেদ্য গাই গরু অথবা কাক কে অর্পণ করুন।
মৃত্যুর সময় আত্মা তাঁর কর্ম কে সাথে নিয়ে তার অপূর্ণ ইচ্ছাগুলি পূর্ণ করার জন্য অন্য শরীরের সন্ধানে চলে যায় এবং কর্ম অনুসারে আত্মাকে তার কর্ম ফল ভোগ করার জন্য নতুন শরীর প্রাপ্ত হয়। একে বলা হয় পুনর্জন্ম।পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থ ঋগ্বেদ থেকে শুরু করে যজুর্বেদ,উপনিষদ ,পুরাণ, গীতা, যোগ ইত্যাদিতে পুনর্জন্মের কথা বলা হয়েছে । পুনর্জন্মের নীতি অনুসারে, দেহের মৃত্যু জীবনের শেষ নয়,। আত্মা 84 লক্ষ বা 84 লক্ষ প্রকারের যোনি তে এবং ভিন্ন ভিন্ন ব্রহ্মাণ্ডে ভ্ৰমণ ও জন্ম গ্রহণ করে এবং তার কর্মফল ভোগ করে।
ভগবদ্গীতা ১৪.১৪-১৫:
যদা সত্ত্বে প্রবৃদ্ধে তু প্রলয়ং যাতি দেহভৃত্,
তদোত্তমবিদাং লোকান্ আমলান্ প্রতিপদ্যতে।
যখন সত্ত্বগুণ বৃদ্ধি পায় এবং সেই অবস্থায় কেউ দেহ ত্যাগ করে, তখন সে শুদ্ধ এবং জ্ঞানী লোকদের লোকালয়ে গমন করে।
রজসি প্রলয়ং গত্বা কর্মসঙ্গিষু জায়তে,
তথা প্রলীনস্তমসিমূঢ়যোনিষু জায়তে।
যারা রজোগুণের প্রাবল্যে দেহ ত্যাগ করে, তারা কর্ম-আসক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে।
এবং যারা তমোগুণের প্রভাবে দেহ ত্যাগ করে, তারা অজ্ঞতার মধ্যে ডুবে থাকা জীবকুলে (পশু ,পাখি ,কীটপতঙ্গ) জন্ম নেয়।
মানুষের মনুষ্য যোনি তে কখন পুনর্জন্ম হয়।
ঈশ্বরের আদেশে কোনও বিশেষ কার্য করার জন্য মানুষের মনুষ্য যোনি তে পুনর্জন্ম হয়।
অনেক সময় পাপের ফল ভোগ করার জন্য মানুষের মনুষ্য যোনি তে পুনর্জন্ম হয়।
অনেক সময় পুণ্য ফল ভোগ করার জন্য মানুষের মনুষ্য যোনি তে পুনর্জন্ম হয়।
অনেক সময় প্রতিশোধ নেবার জন্য মানুষের মনুষ্য যোনি তে পুনর্জন্ম হয়।
অনেক সময় ঋণ শোধ করার জন্য মানুষের মনুষ্য যোনি তে পুনর্জন্ম হয়।
কম বয়সে (আনুমানিক 40 বছরের নিচে)অকাল মৃত্যু হলে মানুষের মনুষ্য যোনি তে পুনর্জন্ম হয়।
পুনর্জন্মের কারণ।
পুনর্জন্মের কারণ হল আত্মার অপূর্ণ ইচ্ছা,জাগতিক জিনিসের প্রতি আসক্তি এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা।মানুষ যখন আধ্যাত্মিক সাধনার জোরে জাগতিক সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে জানতে পারে, তখন সে জন্ম প্রক্রিয়া থেকেও মুক্তি পায়। তবুও সে তার নিজের ইচ্ছায় জন্ম নিতে পারে। ঈশ্বরের ইচ্ছায় জীবের পুনর্জন্ম হয় ,এবং প্রায় সমস্ত জীবেই তার পুনর্জন্মের কথা ভুলে যায়। পুরাণ ইত্যাদিতে জন্ম ও পুনর্জন্মের উল্লেখ আছে যা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির পূর্বজন্ম সম্পর্কে তথ্য দেয়। পুরাণ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত পুনর্জন্মের বিভিন্ন ঘটনার নিদর্শন আমাদের সামনে আসতে থাকে , অনেক সময় শিশুর শৈশবে পূর্বজন্মের জ্ঞান থাকার ঘটনাও সামনে আসে ।
দেখুন একটি মেয়ের ব্রিটিশ উচ্চারণ রীতি এবং
আর একটি মেয়ের আমেরিকান উচ্চারণ রীতি।
মেয়েটির আমেরিকান উচ্চারণ রীতি।👎
শ্রীমদ্ ভগবদ গীতায় পুনর্জন্মের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে যা খুবই জনপ্রিয়। কর্মযোগের জ্ঞান দেওয়ার সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন , 'আমি এই জ্ঞান সূর্যকে সৃষ্টির শুরুতে দিয়েছিলাম । আজ আমি এটা তোমাকে দিচ্ছি। অর্জুন বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, 'আপনি মাত্র কয়েক বছর আগে জন্মেছেন এবং সূর্য বহু বছর ধরে আছে। সৃষ্টির শুরুতে কখন ও কিভাবে সূর্যকে এই জ্ঞান (কর্মযোগের) আপনি দিয়েছিলেন?' কৃষ্ণ বললেন, 'তোমার আর আমার অনেক জন্ম হয়েছে, তুমি ভুলে গেছ কিন্তু আমার মনে আছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে অতি সুন্দর ভাবে আত্মা ,পরমাত্মা ও পুনর্জন্মের কথা অর্জুনের সামনে তুলে ধরেছেন।
মৃত ব্যক্তির আত্মার সাথে কি ভাবে যোগাযোগ করতে পারা যায় ?
এই প্রশ্নের উত্তর শ্রেফ ঈশ্বর জানেন ,তবে অনেকের মতে নিম্ন লিখিত উপায় গুলির সাহায্যে মৃত ব্যক্তির আত্মার সাথে যোগাযোগ করতে পারা যায়।
১.আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়কে তীক্ষ্ণ করে। Shift your focus to sharpen your sixth sense
২.আপনার আত্মার শক্তির মাধ্যমে। Attempt to talk through the power of your soul
৩.প্রার্থনা ও অন্য পদ্ধতির (প্ল্যানচেট)সাহায্যে। Using Prayer and Other Practices
অনুরোধ :-মৃত ব্যক্তির আত্মার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা ঠিক নয় ,এটি আত্মা ও ঈশ্বরের অধিকার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার মতো তাই এটি না করাই ভালো।
ভূত ও প্রেত আত্মার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা ও অনুচিত এবং এটি বিপদ জনক ও হতে পারে।
আপনি অতি সহজে আপনার পূর্বজন্মের জ্ঞান/বৃত্তান্ত কি ভাবে জানবেন ?
অতি সহজে পূর্বজন্মের জ্ঞান/বৃত্তান্ত জানার জন্য আপনি শোবার আগে আপনার আত্মাকে পূর্বজন্মের কথা জানানোর জন্য অনুরোধ করুন এই ভাবে ''হে মহান আত্মা আপনি জন্মহীন,চিরস্থায়ী,অনন্ত ও অবিনশ্বর। আমাকে আপনি পূর্বজন্মের জ্ঞান প্রদান করুন "। আপনার আত্মার মধ্যে যদি আত্মজ্ঞান ও শক্তি থাকে তাহলে আপনি আপনার পূর্ব জন্মের কিছু জ্ঞান/বৃত্তান্ত হয়তো জানতে পারবেন। এর জন্য কত সময় লাগবে এবং আপনি এতে সফল হবেন কি হবেন না তার উত্তর আপনার আত্মা ও ঈশ্বরই দিতে পারবেন। তবে আনুমানিক ২-৫ দিন থেকে শুরু করে ২-৫ মাসের অথবা তার কিছু অধিক সময়ের মধ্যে আপনি এর উত্তর পেতে পারেন।
অনুরোধ :-আপনার পুনর্জন্ম ,ভুত (অতীত)ও ভবিষৎ জানার জন্য ঠগ ,প্রতারক ,ধাপ্পাবাজ মানুষের কাছ থাকে দূরে থাকবেন এবং সতর্ক থাকবেন।
পূর্ব জন্মের লক্ষন / আভাস।
১.স্বপ্ন :-মানুষ যখন একই ধরনের স্বপ্ন বার বার দেখে ,যার সম্পর্কে তার বর্তমান জন্মে কোনো সম্পর্ক /জ্ঞান নেই ,এই ধরনের স্বপ্ন তার পূর্ব জন্মের দিকে ইশারা করে।
২.দেজা ভ্যু (Déja vu/ডেজা ভ্যু) বাংলায় পূর্বদৃষ্ট :পূর্বদৃষ্ট হল একটি অনুভবের অভিজ্ঞতা যা একজন ইতঃপূর্বে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে অথবা স্বচক্ষে দেখেছে (একজন ব্যক্তি অনুভব করে যে ঘটনাটি ইতিপূর্বে ঘটেছে)বলে মানে হয় । এই ধরনের জিনিস পূর্ব জন্মের দিকে ইশারা করে।
৩.জন্ম থেকে প্রতিভাধর শিশু (গিফটেড চাইল্ড):-অনেক সময় দেখা যায় শিশু জন্ম থেকেই এক বিশেষ প্রতিভার অধিকারী । যেমন কেউ বাল্য কাল থেকেই নিজে নিজেই ,কোন একটি ভাষায় পারদর্শী ,কেউ বা খুব সুন্দর নাচ করে ,কেউ বা খুব সুন্দর গান গায় ,গিটার বাজায় ইত্যাদি ,কেউ বা বিজ্ঞান,কম্পিউটার সায়েন্স ,টেকনোলজি তে পারদর্শী ইত্যাদি। এই ধরনের প্রতিভা পূর্ব জন্মের শিক্ষা ও আত্মার স্মৃতির দিকে ইশারা করে।
৪.জাতিস্মর মানে যাদের পূর্ব জন্মের ঘটনা বা কথা মনে থাকে।
অনেক শিশু তার পূর্বজন্মের ভাষা ,কথা ইত্যাদি মনে রাখতে পারে এমনকি তাদের পূর্বজন্মের স্থান এবং আত্মীয়স্বজন চিনতে পারে এদের জাতিস্মর বলা হয়। জাতিস্মর হল পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদের সবচেয়ে বড় প্রমান।
জাতিস্মর বোঝার উপায়।
আমেরিকান লেখিকা ক্যারল বোম্যানের (Carol Bowman, M.S) মতে জাতিস্মর বোঝার চারটি উপায় আছেঃ-
(ক) স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ ভঙ্গিতে পূর্বজন্ম বিষয়ে তথ্য দেওয়া।
(খ) কয়েক দিন/সপ্তাহ/মাস/বছর ধরে পূর্বজন্ম বিষয়ক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
(গ) অভিজ্ঞতার বাইরে জ্ঞান। যে জিনিস সে কখনো দেখেনি /অনুভব করেনি সেই বিষয়ে জ্ঞান।
(ঘ) পরিণত মানুষের মতো ব্যবহারিক এবং শারীরিক বৈশিষ্টের প্রকাশ।
যেমন নিজে অকেলা /আলাদা স্নান করা। ম্যাচিউরিটি লেভেল অনেক বেশি।
মৃত্যুর কত দিন পর জীবের পুনর্জন্ম হয়?
মৃত্যুর কত দিন পর জীবের পুনর্জন্ম হয় এর সঠিক উত্তর স্রেফ ঈশ্বরের কাছেই আছে ,কারণ আমাদের শাস্ত্র গুলির মধ্যে নানা মত দেখতে পাওয়া যায়। পুনর্জন্মের প্রক্রিয়া টি জীবের জীবের আয়ু/জীবনকাল,কর্ম,ধৰ্ম,পাপ ও পুণ্যের উপর নির্ভর করে। তবে শাস্ত্র মতে এক অনুমান অনুসারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আত্মার পুনর্জন্ম হতে সর্ব নিম্ন সময় লাগে ৩০সেকেন্ড [যে সমস্ত জীবের আয়ু অত্যন্ত কম :উদাহরণ মে ফ্লাই পোকার আয়ু মাত্র ২৪ ঘন্টা],এর পর তা বেড়ে ক্রমশ ৩দিন,১৩ দিন,৪৫ দিন,১বছর ৩ থেকে ৪ মাস পর্যন্ত হতে পরে।
গয়ার পিন্ড দান কে অবলোকন করে ,অন্য কিছু তথ্যের উপর ভিত্তি করে অনেকেই বলেন ৮৫% লোকের পুনর্জন্ম ৯ থেকে ১৪ মাসের মধ্যে (৩৬ থেকে ৫৬ সপ্তাহ) তাঁদের ধৰ্ম,কর্ম, আসক্তি , ইচ্ছা ইত্যাদি অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন যোনিতে হয় ,১১% লোকের পুনর্জন্ম ১৪ মাস থেকে ৩ বছরের মধ্যে তাঁদের ধৰ্ম,কর্ম,আসক্তি , ইচ্ছা ইত্যাদি অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন যোনিতে হয় ,বাকি ৪% লোকের জন্ম অনেক দেরিতে হয়। আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ার গবেষকদের মতে যে সমস্ত ব্যক্তি কম বয়সে মারা যান (40 এর নিচে) তাঁদের গড় সাড়ে চার বছরের (৪.৫)মধ্যে মনুষ্য যোনিতে পুনর্জন্ম হয়।
আত্মা নিয়ে আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা।
আত্মা নিয়ে আমেরিকার ভার্জিনিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ে গবেষণা শুরু হয় 1967 সালে। বর্তমানে এই গবেষণা টি চলছে ডাঃ জিম বি টাকার (MED '89, '91) এর তত্বাবধানে। ডাঃ জিম বি টাকার হলেন ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা এবংআচরণগত স্নায়ুবিজ্ঞান এর প্রফেসর ৷ সহজ ও সরল ভাষায় এই সমস্ত বিজ্ঞানীদের মতে আত্মা হলো স্বাধীন সঞ্চালক, আত্মার নির্দেশে ব্রেন কাজ করে। আত্মার মধ্যে মনে রাখার ক্ষমতা থাকার জন্য ,যখন আত্মা এক শরীর ত্যাগ করে অন্য শরীরে যায় এবং অন্য শরীরের ব্রেনের সাথে সংযোগ সাধন করে তখন পূর্ব জন্মের স্টোর হয়ে থাকা ঘটনার কিছু অংশ নতুন শরীরের ব্রেনে স্থানান্তরিত হয়ে পূর্ব জন্মের স্মৃতি / ঘটনা মনে আসে। সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন চেতনার (আত্মা) বেঁচে থাকার এবং স্মৃতি এবং আবেগগুলি এক জীবন থেকে অন্য জীবনে নিয়ে যাবার /স্থানান্তরিত করার কোন বস্তুগত ব্যাখ্যা নেই, তার উত্তরে ডাঃ জিম বি টাকার বলেছেন যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে স্মৃতি এবং আবেগগুলি এক জীবন থেকে অন্য জীবনে স্থানান্তরিত হতে পারে।
পুনর্জন্মে আত্মা কি ভাবে তার মা ,বাবা ,পরিবার শহর ,গ্রাম ,দেশ সিলেকশন করে।
আত্মা তার অপূর্ণ কার্য ,ইচ্ছা ,আশা,আকাঙ্খা ইত্যাদি পূর্ণ করার জন্য ঈশ্বরের দেওয়া কিছুসংখ্যক বাছাই করা ব্যক্তি,বস্তু ,ও স্থানের মধ্যে তার সর্বাধিক পছন্দসই, মনের মত, রুচিসম্মত মা ,বাবা ,পরিবার শহর ,গ্রাম ,দেশ সিলেকশন করে।
আত্মা ও গর্ভাধান।
পুনর্জন্মে জীবের মাতা পিতা জীব কে দেহ প্রদান করেন,ঈশ্বর প্রদান করেন আত্মা। আত্মা ও ঈশ্বরের ইচ্ছাতেই পুনর্জন্ম হয়। আত্মা,ঈশ্বরের বাছাই করে দেওয়া কিছু সংখ্যক পিতা মাতার মধ্যে সে তার সর্বাধিক পছন্দসই মনের মত পিতার শরীরে প্রবেশ ,পরে পিতার শুক্রাণুর মাধ্যমে ,মাতার গর্ভে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে জন্ম নেয়। এই জন্য মা ও বাবা কে তাদের জন্য ভালো সন্তান ,সন্ততি লাভের জন্য গর্ভাধানের সময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে হয় ,এবং ভালো আত্মাদের স্মরণ করতে হয় ,এবং তাদের আশা ,আকাঙ্খা ও অপূর্ণ ইচ্ছা পূরণের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়। সুসন্তান লাভের জন্য মাতা পিতাদের পরিশ্রমী, প্রতিশ্রুতিবান ,সহনশীল ,সদাচারী ,সত্যবাদী ,ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক হতে হয়।
আত্মা কখন দেব /পিতৃ যোনি প্রাপ্ত হয়।
শ্রীমদ ভাগবত মহাপুরান অনুসারে মনুষ্য যোনির উপরের যোনি গুলি হল -1.প্রমথ (শিবের অনুচর /গন ),2.গন্ধর্ব (দেব লোকের গায়কঃ) ,3.সিদ্ধগণ,4.দেবানুচর ,5.অসুর ,6.দেবতা।
আত্মা প্রায় 4 লক্ষ বার মনুষ্য যোনিতে জন্ম নেওয়ার পর পুণ্য কর্ম করলে দেব যোনিতে জন্ম নেয় । আত্মা যখন মনুষ্য যোনিতে জন্ম নিয়ে নীচ কর্ম করে ,তখন আবার নিম্ন যোনিতে জন্ম নিতে শুরু করে,যাকে বেদ ও পুরাণে বলা হয় অধঃপতন ও দুর্গতি ।
আত্মা ও ভূত ,প্রেত নিয়ে অজ্ঞানতা।
আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছেন যারা প্রেত আত্মা,এবং সূক্ষ্ম আত্মার মধ্যে পার্থক্য জানেন না, যার ফলে সমস্ত মৃত ব্যক্তির আত্মা কে ভূত ,প্রেত ভেবে ভয় করতে শুরু করেন এমন কি অনেকেই তার ,পিতা ,মাতা ,পুত্র ,কন্যা র মৃত্যুর পর তার সূক্ষ্ম আত্মা কে ভুত ভাবতে শুরু করেন । এটি কিন্তু ঠিক নয়,কারণ -জীবন্ত জীবের দেহে বিদ্যমান আত্মা কে জীব আত্মা বলা হয় এবং জীবের মৃত্যুর পরে এই আত্মা যখন সূক্ষ্ম দেহে প্রবেশ করে তখন একে সূক্ষ্ম আত্মা বলে ,এই আত্মা পবিত্র ,শান্ত, শিষ্ট কিন্তু দুঃখিত । অন্যদিকে যখন জীবের আত্মা প্রেত (84 লক্ষ যোনির মধ্যে একটি কাম ক্রোধ ও বাসনার শরীর বিহীন যোনি) যোনি তে চলে যায় তখন তাকে প্রেত আত্মা বলা হয়। মৃত্যুর পরেই কোনো জীবের আত্মা সোজা প্রেতের (কাম ও বাসনার) যোনিতে চলে যায় না এর জন্য সময় লাগে। জীবাত্মার প্রেতের যোনিতে যাবার মুখ্য কারণ এদের প্রচণ্ড পাপ, অতি আসক্তি ,প্রবল প্রতিহিংসা ,অত্যধিক কামনা ,বাসনা এবং দুর্বল পিত্র শক্তি, এছাড়া শ্রাদ্ধ, শান্তি,পিন্ড দান সঠিক ভাবে না হওয়া ইত্যাদি। কেবল যারা রাক্ষসের মতো কর্ম করেন এবং মহাপাপীরাই পৈশাচিক কাজ করে অনন্তকাল ধরে ভূত যোনিতে বিচরণ করে কারণ এরা যমরাজের আদেশে তাদের পাপের দণ্ড /সাজা পাওয়ার জন্য যমদূত দ্বারা ভূত /প্রেত যোনিতে নিক্ষিপ্ত ও পরিত্যাক্ত হয়।
আত্মা/ পুনর্জন্ম নিয়ে ভাবতে ভাবতে প্রায় সমস্ত মানুষের মনে জেগে উঠে নানান জিজ্ঞাসা, তাঁর মধ্যে সর্ব প্রথম যেগুলো মানুষের মনে আসে তাঁর মধ্যে একটি হলো মৃত্যুর সংকেত ইঙ্গিত/ ইশারাগুলি কি কি ?
মৃত্যুর সংকেত ইঙ্গিত/ ইশারা(লোককথা বা লোককাহিনি):-
☯ অনেকেই বলেনঃ মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের চোখের দৃষ্টি কমতে থাকে এমনকি নিকটবর্তী মানুষকেও সে দেখতে পায় না । মানুষ মারা যাবার ঠিক আগে সে তাঁর মৃত আত্নীয়-স্বজনদের স্বপ্নে অথবা দিবাস্বপ্নে দেখতে পায়।
☯অনেকেই বলেনঃ একজন মানুষের যদি দেহের ত্বক হঠাৎ করে রঙ পরিবর্তন করে তাহলে তার মৃত্যু আসন্ন। রং পরিবর্তন বলতে, ত্বকের রং হলুদ বর্ণের, ফ্যাকাসে বর্ণের অথবা অতিরিক্ত লালচে,অথবা চোখের কাছে হালকা নীল হয়ে যাওয়াকে বোঝাচ্ছে।
☯অনেকেই বলেনঃ মানুষ মারা যাবার ঠিক আগে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শুনতে পায়।
☯অনেকেই বলেনঃ মানুষ মারা যাবার সময় অনুভব করে তাকে যেন কেউ হাত ধরে জোর করে টানছে ।
☯অনেকেই বলেনঃ মৃত্যু চেতনা এমন এক জীবনের চেতনা যা সব সময়েই তাঁকে বিশেষ এক অনুভূতির জন্ম দেয় ৷ এটি একটি একাকিত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করে।
☯অনেকেই বলেনঃ কারও মৃত্যুর আগে অনেক সময়েই চোখের সামনে চাঁদ ভেসে ওঠে ৷ কারও বা নানান ধরনের দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে ৷ এছাড়াও একাধিক চমকপ্রদ ঘটনা তার সঙ্গে ঘটতে থাকে ৷
☯অকাল মৃত্যুর সংকেত (লোককথা বা লোককাহিনি):-
☯ পরিবারের প্রতি তার মায়া কমতে থাকে।
☯সে তার কষ্ট / অসুবিধার কথা বর্ণনা করতে পারেনা।
☯অকাল মৃত্যুর আগে মৃত্যু পথযাত্রীর আসে পাশে কখনো,কখনো অপ্রাকৃতিক ঘটনা ঘটতে থাকে।
☯অকাল মৃত্যুর আগে মৃত্যু পথযাত্রী কখনো স্বপ্নে, কখনো বা দিবা স্বপ্নে তার মৃত নিকট আত্মীয়, স্বজন, কুটুম্ব, জ্ঞাতি, বন্ধু,বান্ধবদের দেখতে পায়।
☯অকাল মৃত্যুর আগে মৃত্যু পথযাত্রী কখনো,কখনো স্বপ্নে ভয়াল ও ভয়ংকর দৃশ্য দেখে থাকে।
☯অকাল মৃত্যুর আগে মৃত্যু পথযাত্রীর কখনো,কখনো আত্মবিশ্বাস কম হতে থাকে।
☯অকাল মৃত্যুর আগে মৃত্যু পথযাত্রীর সামনে অথবা তাঁর আশেপাশে কখনো,কখনো শুভ কাজে বিঘ্ন ঘটে থাকে অথবা বাধা উৎপন্ন হয়ে থাকে।
☯অকাল মৃত্যুর আগে মৃত্যু পথযাত্রীকে কখনো,কখনো এক অজানা ভয় তাড়া করে।
এই গুলি হলো "মানুষ মরার আগের ইঙ্গিত/ ইশারা যা থেকে মানুষ চেষ্টা করলে বুঝতে পারে ,যে তার মৃত্যু আসন্ন,সে মৃত্যু পথযাত্রী ।💭
লেখকের মন্তব্য:-এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। ডকুমেন্টারি প্রমাণ এবং তথ্যের উৎস ছাড়া এই বিষয়ে যে কোনও মন্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং অসাধু বলে গণ্য করা হবে ।
সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয় হোক। 🙏হে প্রভু আমাকে শুধু জ্ঞান দাও , ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏
লেখক পরিচিতি:-প্রবীর কুমার মহান্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রবীরের বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।