কলি যুগের নাথ প্রভু জগন্নাথ এবং তাঁর লীলা ও তাঁর মন্দিরের রহস্য এবং তাঁর পরম ভক্তদের কাহিনী।
পুরির জগন্নাথ মূর্তির মধ্যে এখনও স্পন্দিত হয় শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় ।
কথিত আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় [ব্রহ্ম পদার্থ] রয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। বিশ্বাস করা হয়, এই জগন্নাথ মন্দিরে ভগবান জগন্নাথের মূর্তির ভিতরে এখনও শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় স্পন্দিত হয়। ১২ বছর পর পর ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং তাদের বোন সুভদ্রার মূর্তি পরিবর্তন করা হয়। যখনই এই প্রতিমাগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়, তখনই পুরো শহরের বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মন্দিরের চারপাশে সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায়। মন্দিরের নিরাপত্তা সিআরপিএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয় । এই সময় মন্দিরে কারও প্রবেশ করা চলে না। এই মূর্তিগুলি প্রতিস্থাপন করার জন্য শুধুমাত্র একজন পুরোহিতকে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। মূর্তি পরিবর্তন করার সময়, পুরোহিতের হাতে গ্লাভস থাকে এবং চোখ বেঁধে রাখা হয় যাতে তিনিও মূর্তিগুলি দেখতে বা সরাসরি অনুভব করতে না পারেন।এই অন্ধকারেই প্রথা মেনে ভগবান জগন্নাথের পুরনো মূর্তি থেকে নতুন মূর্তিতে ব্রহ্ম পদার্থ পরিবর্তন করা হয়। মূর্তি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই পুরানো মূর্তি থেকে ব্রহ্ম পদার্থকে নতুনটিতে স্থানান্তর করা। যখন মূর্তি পরিবর্তন হয় তখন সবকিছুই নতুন হয় কিন্তু যা কখনওই পরিবর্তন হয় না তা হল এই ব্রহ্ম পদার্থ।
এই ব্রহ্ম পদার্থ সম্পর্কে একটি বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। কেউ যদি এই ব্রহ্ম পদার্থ দেখে ফেলেন, তবে সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হবে। আজ পর্যন্ত যে সকল পুরোহিত ভগবান জগন্নাথের পুরানো দেব মূর্তি থেকে নতুন মূর্তিতে ব্রহ্ম পদার্থ স্থাপন করেছেন, তাঁরা জানান যে, পুরানো মূর্তি থেকে ব্রহ্ম পদার্থকে নতুনটিতে স্থানান্তর করার সময় একেবারে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, মনে হয় হাতের মধ্যে একটা নরম তুলতুলে খরগোশ যেন লাফাচ্ছে ।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কিছু অজানা রহস্য।
★পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় যে পতাকাটি লাগানো রয়েছে তা সবসময় হাওয়ার বিপরীত দিকে ওড়ে।
★জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ায় অষ্টধাতু দ্বারা নির্মিত সুদর্শন চক্র পুরীর যে কোনও জায়গা থেকেই আপনার সম্মুখস্থ থাকবে।
★হাওয়ার চলন, সাধারণত দিনের বেলায় হাওয়া সমুদ্রের দিক থেকে সমুদ্রতটের দিকে আসে। আর সন্ধ্যের সময় সমুদ্রতটের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে। কিন্তু পুরীর ক্ষেত্রে তা ঠিক উল্টো। সকালে তটের দিক থেকে সমুদ্রের দিকে হাওয়া চলে, এবং সন্ধ্যায় সমুদ্রের দিকে থেকে তটের দিকে হাওয়া বয়।
★জগন্নাথ মন্দিরের উপর দিয়ে কোনও পাখি বা বিমান উড়তে পারে না। এমন কি পুরীর এই মন্দিরের চূড়ায় বা এর আশেপাশে কোনো পাখিকে উড়তে দেখা যায় না।
★ বিশাল জগন্নাথ মন্দিরের ছায়া দিনের কোন সময়ই ভূমিকে স্পর্শ করে না। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেউ কখনো দেখতে পায়নি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ছায়া।
★পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য বৈশিষ্ট হল প্রভু জগন্নাথের "প্রসাদ"। সারা বছর ধরেই সমপরিমান ভোগ রান্না করা হয়। কিন্তু ওই একই পরিমান ভোগ প্রসাদ দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ হোক বা লক্ষ মানুষকে খাওয়ানো হোক, তবু প্রসাদ কখনও নষ্ট হয় না বা কখনও কম পড়ে না।
★পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের হেঁশেলে একটি পাত্রের উপর আর একটি এমন করে মোট ৭টি পাত্র আগুনে বসানো হয় রান্নার জন্য। এই পদ্ধতিতে যে পাত্রটি সবচেয়ে উপরে বসানো থাকে তার রান্না সবার আগে হয়। তার নিচের তারপরে। এভাবে করতে করতে সবচেয়ে দেরিতে সবচেয়ে নিচের পাত্রের রান্না হয়।
★পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ভিতরে সিংহদ্বারের মন্দিরে প্রবেশ করার পর প্রথম সিঁড়িতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের আওয়াজ আর শুনতে পাবেন না। কিন্তু ওই সিঁড়িটি টপকে গেলে আবার সমুদ্রের শব্দ শুনতে পাবেন। সন্ধেবেলায় এই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়।
প্রভু জগন্নাথ এবং পুরীর উত্তাল সমুদ্রের কাহিনী।
একবার কিছু পর্যটক জগন্নাথ ধাম পুরী বেড়াতে গিয়ে ,পুরীর সমুদ্র তটের নিকট বর্তী একটি হোটেলে ছিলেন। হোটেলে থাকালীন তারা শুনলেন এক ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় পুরীর দিকে ধেয়ে আসছে।তাঁরা খবর শুনে খুব ভয় পেলেন ,কিন্তু হাতে কম সময় থাকার জন্য তাদের পক্ষে বাড়ী ফিরে আসা,সম্ভব পর ছিল না। হোটেলের মালিক ,ম্যানেজার ,তাদের আশস্ত করলেন এবং বললেন ভয় পাবেন না,প্রভু জগন্নাথের কৃপায় ,কিছু হবে না ,যখনই সমুদ্র উত্তাল হবে, প্রভু জগন্নাথের মন্দিরের পতাকা ছিঁড়ে গিয়ে সমুদ্রে পড়বে ,তখনই সমুদ্র শান্ত হয়ে যাবে। তাই আপনারা নিশ্চিন্ত হয়ে থাকুন।
পূর্ভাবাস অনুযায়ী ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় পুরীর উপর আছড়ে পড়ল ,সমুদ্র ও উত্তাল হল,বেশ কিছুক্ষন পর তাঁরা শুনলেন সমুদ্রে প্রভু জগন্নাথের মন্দিরের পতাকা পড়ে গিয়েছে,এর পর উত্তাল সমুদ্র ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে গেল। এই হলো প্রভু জগন্নাথের মহিমার সামান্য একটি উদাহরণ ।
প্রভু জগন্নাথ ও তাঁর পরম ভক্ত বন্ধু মোহান্তির কাহিনী।
উড়িষ্যার যাজপুরে বন্ধু মোহান্তি নামে জগন্নাথের এক পরম ভক্ত ছিলেন ,যিনি জগন্নাথদেবকেই তাঁর পরম বন্ধু বলে মনে করতেন । দুই কন্যা ও এক পুত্রসহ অনুগত পত্নী নিয়ে তার সংসার। তিনি প্রভুর পবিত্র নাম উচ্চারণ করে, ভিক্ষা প্রার্থনা করে , তাঁর দিন কাটাতেন । তিনি অত্যন্ত সত্যবাদী,দয়াশীল এবং জীবিত সত্তার প্রতি করুণাময় ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণদের সেবা করতে খুব পছন্দ করতেন কিন্তু তিনি তাঁর পারিবারিক জীবনের প্রতি অত্যন্ত উদাসীন ছিলেন এবং এইভাবেই , তিনি তাঁর দিনগুলি সুখে,দুঃখে কাটাচ্ছিলেন ।
একসময় হটাৎ করে ঐ অঞ্চলে খরা দেখা দিল এবং খাবারের অভাবে লোকেরা মারা যাচ্ছিল , বন্ধু মোহান্তি কিছু গ্রামে ভিক্ষা প্রার্থনা করতে গিয়েছিলেন,কিন্তু গ্রামের লোকদের তাঁদের নিজেদের জন্যই খাবার ছিল না তারা বন্ধু মোহান্তিকে কীভাবে ভিক্ষা দেবেন ?
তাই বন্ধু মোহান্তি কোনও ভিক্ষা ছাড়াই তাঁর বাড়িতে ফিরে এলেন । পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে বন্ধু মোহান্তির স্ত্রী, বন্ধু মোহান্তিকে বললেন,'' আমাদের ছেলে মেয়েরা খুব ক্ষুধার্ত ,ঘরে অন্ন নেই,সেইজন্য এই জায়গাটি ছেড়ে অন্য কোনও জায়গায় আমাদের চলে যাওয়া উচিত, যেখানে আপনার আত্মীয়রা বসবাস করছেন"। বন্ধু মোহান্তি তাঁর স্ত্রীর কথা শুনে ,বললেন তাকে সাহায্য করার মতো তাঁর কোনও আত্মীয় নেই,তবে তাঁর এক বন্ধু রয়েছেন যিনি তাঁর গ্রাম থেকে অনেক দূরে শ্রী ক্ষেত্র পুরীতে থাকেন।
শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের সামনে মহান অরুণ স্তম্ভ । |
যদি তাঁরা, তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারেন তাহলে তাঁদের সমস্যার সমাধান হবে । এই কথা শুনে তাঁর স্ত্রী খুব খুশি হন। তিনি বললেন, “তাহলে চলো,এখনই আমরা সেখানে যাই। আমাদের আর দেরি করা উচিত নয়, নইলে আমরা সবাই না খেতে পেয়ে মারা যাবো। স্ত্রীর কাছে এসব শুনে বন্ধু মোহান্তি খুব খুশী হলেন। পরের দিন তারা শ্রী ক্ষেত্র জগন্নাথ পুরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন, চার দিন পরে তারা জগন্নাথ পুরী পৌঁছালেন।
জগন্নাথ মন্দিরে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম হওয়ায়, তাঁদের পক্ষে ভগবানের প্রসাদ সংগ্রহ করা সম্ভব পর না হওয়ায়, তাৎক্ষণিক ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য তারা জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরের ড্রেন থেকে ভাতের মাড় সংগ্রহ করে তা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। বন্ধু মোহান্তি তাঁর স্ত্রী কে জানান নি যে, তিনি তাঁর যে বন্ধুর কথা বলছেন ,তিনি আর কেউ নন স্বয়ং পরম ঈশ্বর জগন্নাথ। সেইজন্য প্রভুর উপর অগাধ আস্থাশীল, বন্ধু মোহান্তি শোবার আগে ভগবান জগন্নাথের কাছে প্রার্থনা করেন :"হে প্রভু জগন্নাথ, দয়া করো প্রভু ,অনেক আশায়,আপনাকে বন্ধু ভেবে, আপনার দুয়ারে এসেছি ,আমার মান রক্ষা করো। ভক্ত বৎসল অন্তর্যামী,জগন্নাথ ভক্তের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে স্বয়ং রাত্রিতে এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের বেশে তাঁর ভোজনের সোনার থালায় নানাবিধ সুস্বাদু প্রসাদ এনে বন্ধু মোহান্তি সহ তার পরিবারকে ভোজন করান, কিন্তু থালাটি রেখেই তিনি অন্তর্ধান হয়ে যান ।
ভোজনের পর বন্ধু মোহান্তি ব্রাহ্মণকে দেখতে না পেয়ে থালাটি কাপড়ে মুড়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরের দিন এই থালা,বন্ধু মোহান্তির,কাছ থেকে পাওয়ায়,তাঁর কোনো কথা না শুনে, চুরির দায়ে মন্দির কর্তৃপক্ষ তাকে প্রহার করেন এবং তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করলেন।
সেদিন রাতে জগন্নাথদেব উড়িষ্যার গজপতি রাজার স্বপ্নে এসে কঠোরভাবে ভৎসনা করে বলেন যে ,তোমার বাড়িতে অতিথি এলে তুমি কি তাকে না খাইয়ে রাখবে ? তোমার প্রাসাদে এমন কেউ কি আছে, যে না খেয়ে ঘুমিয়েছে ? আমার বন্ধু তার পরিবার নিয়ে অনেক দূর থেকে এসেছে । তাকে আমি আমার সোনার থালায় খেতে দিয়েছি , অথচ তোমার লোকজন তাকে চোর ভেবে কত না প্রহার করেছে। আমি তোমাকে আদেশ দিচ্ছি । তুমি এক্ষুণি পুরীর জেল থেকে তাদের সসম্মানে নিয়ে এসো, তাদের চরণ ধৌত করো , উন্নত বস্ত্র ও আভূষণ প্রদান কর এবং সর্বোচ্চ সম্মানের প্রতীকরূপে মাথায় মুকুট পরিয়ে দাও । ভগবান জগন্নাথের কাছ থেকে এই আদেশ পাওয়ার পর রাজা তৎক্ষণাৎ তাঁর সমস্ত মন্ত্রীদের ডেকে তাদের সমস্ত কিছু ব্যাখ্যা করলেন,এবং বন্ধু মোহান্তিকে মুক্তি দিতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কারাগারে গিয়ে স্নেহে জড়িয়ে ধরেন।
রাজা বললেন,“আমার জীবন কেবল আপনার দর্শনপেয়েই সফল হয়েছে, আমি ধন্য। আমার লোকদের দ্বারা সংঘটিত সমস্ত অপরাধের জন্য আমাকে ক্ষমা করুন ” এই কথা বলার পরে, রাজা পবিত্র জল দিয়ে বন্ধু মোহান্তিকে অভিষেক করলেন, তাঁকে পরিধানের জন্য বস্ত্র দিলেন এবং অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে তাঁর মাথায় পাগড়ি রাখলেন। রাজা তাদের এমন সম্মান করলেন যেন তারা তাঁর নিজের আত্মীয়। পরে গজপতি রাজা বন্ধু মোহান্তিকে জগন্নাথ মন্দিরের হিসাবরক্ষক হিসাবে নিযুক্ত করলেন এবং মন্দিরের দক্ষিণ গেটে বন্ধু মোহান্তি ও তাঁর পরিবারের জন্য থাকার ব্যবস্থা করলেন।বন্ধু মোহান্তি তার বন্ধু ভগবান জগন্নাথের পাশে থাকতে পেয়ে খুব আনন্দিত হলেন । তিনি আনন্দের সাথে সারা জীবন তাঁর পরিবারের সাথে, ভগবান জগন্নাথের হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করেছিলেন।
তখন থেকেই আজ অবধি,বন্ধু মোহান্তির বংশধররা জগন্নাথ মন্দিরের হিসাব রক্ষকের কাজ করে চলেছেন।
প্রভু জগন্নাথ ও তাঁর মহান ভক্ত বলরাম দাসের কাহিনী ।
প্রভু রামচন্দ্রের বৈকুন্ঠ গমনের পূর্বে লঙ্কা পতি বিভীষন প্রভু রামচন্দ্রের সাথে দেখা করতে এলেন অযোধ্যাপুরীতে, লঙ্কা পতি বিভীষন প্রভু রামের কাছে বললেন, প্রভু আপনি চলে যাওয়ার পর আমি কি ভাবে ,কাকে নিয়ে থাকবো ? তখন প্রভু রামচন্দ্র বললেন বিভীষন তোমাকে আমি চিরঞ্জীবী বর প্রদান করেছি ,তাই তোমাকে এই পৃথিবীতে কলি যুগের অন্ত পর্যন্ত থাকতেই হবে ,তবে তোমার মধ্যে দেব শক্তি থাকার জন্য ,তোমার ইচ্ছা ছাড়া তোমায় কেউ দেখতে পাবেন না। তুমি অবাধে লঙ্কাপুরী ছাড়া ও এখানে সেখানে বিচরণ করতে পারবে। তুমি দ্বাপর যুগে আমাকে কৃষ্ণ অবতার রূপে আমার দেখা পাবে এবং কলিযুগে প্রভু জগন্নাথের মূর্তির মধ্যে আমাকে দেখতে পাবে। প্রভু শ্রী কৃষ্ণের কথা মতো কলি যুগের আগমন হতেই বিভীষন প্রত্যেক দিন সকালে জগন্নাথ ধামে এসে প্রভু জগন্নাথের পূজা করতে শুরু করলেন ,একদিন বিভীষন প্রভু জগন্নাথ কে বললেন প্রভু একদিন আপনি লঙ্কা তে চলুন ,আপনার পাদস্পর্শে লঙ্কাপুরী পবিত্র হোক।
প্রভু জগন্নাথ বিভীষন কে বললেন তিনি যথাসময়ে যাবেন। তাই একদিন প্রভু জগন্নাথ লঙ্কার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন ,পথে দেখলেন তাঁর এক পরম ভক্ত বলরাম দাশের কুঠির ,তাই প্রভু জগন্নাথ বলরাম দাশের কুঠিরে গিয়ে বললেন ,বলরাম আমি লঙ্কা যাচ্ছি ,তুমি আমার সাথে চলো। বলরাম দাশ বললেন ঠিক আছে প্রভু। প্রভু জগন্নাথ তখন বললেন আমি পুরীর মন্দির থেকে একটি পাত্র এনেছি তুমি এই পাত্র টি তোমার ঘরে রাখো ,লঙ্কা থেকে ফেরার পথে আমি এটি নিয়ে যাবো। এর পর বলরাম দাশ প্রভু জগন্নাথের সাথে লঙ্কা গমন করলেন। লঙ্কা তে বিভীষণ প্রভু জগন্নাথের মন ,প্রাণ দিয়ে সেবা করলেন এবং এক বিরল অতি সুন্দর পুস্প মালা প্রভু জগন্নাথের গলায় পরিয়ে দিলেন। এর পর প্রভু জগন্নাথ ও সাথে বলরাম দাশ লঙ্কা থেকে ফিরে এলেন ,কিন্তু পুরীর মন্দিরের পাত্র টি বলরাম দাসের বাড়িতেই রয়ে গেল। এদিকে পুরীর মন্দিরের পুরোহিতেরা সকালে দেখলেন মন্দিরের একটি পাত্র নেই ,সেই কথা পুরীর রাজা প্রতাপ রুদ্রের কানে গেল ,চারিদিকে হইচই পড়ে গেলো।এই ব্যাপারটি বলরাম দাশের কানে পৌঁছাল। তখন বলরাম দাশ রাজা প্রতাপ রুদ্র কে পুরো বিষয় টি বললেন , প্রথমে রাজা মানতে চাননি ,তখন বলরাম দাশ বললেন, প্রভু জগন্নাথের গলায় বিভীষণ অতি সুন্দর বিরল মালা পরিয়েছিলেন ,দেখুন সেটি হয়তো এখনো প্রভুর গলায় আছে ,সেটি দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। তখন রাজা ,পুরোহিত আরো অন্য সবাই দেখলেন ,বিভীষনের দেওয়া মালাই প্রভুর গলায় বিদ্যমান। তখন বলরাম দাশের নাম ছড়িয়ে পড়ল চারিদিকে এবং সবাই জানতে পারলেন যে লঙ্কা পতি বিভীষণ নিজেকে অদৃশ্য রেখে রোজ সকালে প্রভু জগন্নাথের সর্ব প্রথম দর্শন ও আরাধনা করে থাকেন এই জগন্নাথ মন্দিরে।
প্রভু জগন্নাথ (কল্কি ) ও তাঁর ভাই বলভদ্র।
পঞ্চ সখা রচিত ভবিষ্য় মালিকার কথা অনুসারে প্রভু জগন্নাথ কলিযুগের শেষে কল্কি রূপে ধরাতলে জন্ম গ্রহণ করবেন। ভবিষ্য় মালিকা শাস্ত্র অনুসারে প্রভু জগন্নাথ (কল্কি )ও তাঁর ভাই বলভদ্র ইতিমধ্যেই ধরাতলে জন্ম নিয়ে নিয়েছেন , কিন্তু প্রশ্ন অনেকের মনে, প্রভু কল্কি কোথায় এবং কবে জন্ম গ্রহণ করেছেন ইত্যাদি ? প্রভুর ভক্তদের কথা অনুসারে-প্রভুর জন্ম স্থান: বিরজা ক্ষেত্র জাজপুর। প্রদেশ ;পূর্ব নাম উৎকল বর্তমান নাম ওড়িশা।
ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় কল্কি দেবায় নমো নমঃ।। 🙏
সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয় হোক। 🙏হে প্রভু আমাকে শুধু জ্ঞান দাও ,ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏
শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের সামনে প্রতিষ্ঠিত মহান অরুণ স্তম্ভ । |
লেখক পরিচিতি:- প্রবীর কুমার মহান্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রবীরের বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।