শ্রী শ্রী মা ষষ্ঠীদেবীর পূজা এবং তাঁর ধ্যান মন্ত্র,প্রণাম মন্ত্র ও ব্রত পালন ।


ভগবান শ্রী শ্রী কার্তিকের ধর্মপত্নী দেবী দেবসেনা এবং দেবী বল্লী

।। মা ষষ্ঠীদেবী ।।
ষষ্ঠী দেবী বা ষষ্ঠীঠাকুর হলেন  প্রজননের দেবী,দেবী ষষ্ঠী সন্তান দায়িনী, তার কৃপায় নিঃসন্তান সন্তানবতী হ এবং তিনিই সন্তানের রক্ষাকর্ত্রী মাতৃকা , তিনিই সন্তান পালিনী দেবী, মঙ্গলদায়িনী প্রকৃতি।


হিন্দু বর্ষ পঞ্জীর প্রতিমাসের  শুক্লাষষ্ঠী তিথিতে বিভিন্ন নামে ষষ্ঠীদেবী পূজিতা হন।যেমন জৈষ্ঠ মাসে: অরণ্যষষ্ঠী, শ্রাবণ মাসে: লুণ্ঠন বা লোটনষষ্ঠী, ভাদ্র মাসে :  মন্থনষষ্ঠী, আশ্বিন মাসে: দুর্গাষষ্ঠী বা বোধনষষ্ঠী, অগ্রহায়ণ মাসে: মূলাষষ্ঠী, পৌষ মাসে: পাটাইষষ্ঠী, মাঘমাসে  শীতলষষ্ঠী  বা গোটাষষ্ঠী বা শিলষষ্ঠী, চৈত্র মাসে: অশোকষষ্ঠী এবং নীলষষ্ঠী ইত্যাদি  । এছাড়া, শিশুর জন্মের দু'দিন পর 'সূতিকা ষষ্ঠী , ষষ্ঠ দিনে 'ঘাটষষ্ঠী', একুশদিনে 'একুশে' এবং শিশুর বারো বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি জন্মতিথিতে 'জল ষষ্ঠী' দেবীর পূজা  হয়ে থাকে।
শীতল ষষ্ঠী /শিলষষ্ঠী/গোটাষষ্ঠী :-
মাঘ মাসে সরস্বতীপুজোর পরের দিন  শীতল ষষ্ঠী  বা গোটাষষ্ঠী বা শিলষষ্ঠী দেবীর  পূজা হয়  , এটি  আবার দুই  প্রকার  পাতা  এবং তোলা।  মা শীতল ষষ্ঠী/ শিলষষ্ঠী  দেবীর  পূজা উৎকল ব্রাহ্মণদের একটি  প্রধান উৎসব। উৎকল ব্রাহ্মণদের জন্ম  থেকে  বিবাহ ,বিবাহ বাসর (নড়া রাখা হয় ) ,সংসার ধর্ম  পালন  সব জায়গায়  মা ষষ্ঠী দেবীর  পূজা এবং উপস্থিতি  লেগেই  থাকে ।

নীলষষ্ঠী :-
নীলষষ্ঠী হল বাংলার হিন্দুসমাজের এক লৌকিক উৎসব গৃহিণীরা নিজের সন্তান এর মঙ্গল কামনায় নীলষষ্ঠী ব্রত পালন করে

 নীল ও নীলাবতী :-
 নীল বা নীলকণ্ঠ মহাদেব শিবের অপর নাম। নীলপূজার  দিন, শিবের সাথে নীলচণ্ডিকা বা নীলাবতী পরমেশ্বরীর বিয়ে উপলক্ষ্যে লৌকিক আচার-অনুষ্ঠান সংঘটিত হয়।
 প্রচলিত গল্প / উপাখ্যান অনুসারে ,দক্ষযজ্ঞে দেহত্যাগের পর শিব পত্নী সতী, পুনরায় সুন্দরী কন্যারূপে নীলধ্বজ রাজার বেলগাছের জঙ্গলে (বিল্ববনে) আবির্ভূত হন। রাজা তাকে নিজ কন্যারূপে লালন-পালন করে শিবের সাথে বিয়ে দেন।
 বাসর ঘরে নীলাবতী শিবকে মোহিত করেন এবং পরে মক্ষিকা রূপ ধরে ফুলের সঙ্গে জলে নিক্ষিপ্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন; রাজা-রাণীও শোকে প্রাণবিসর্জন দেন।

নীলষষ্ঠীর ব্রত
পুরাকালে এক ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী ছিলেন । যারা অতি ভক্তি করে সমস্ত বার ব্রত করতেন ,কিন্তু তবুও তাদের ছেলে মেয়ে হয়ে একটাও বাঁচতোনা। একদিন কাশীতে গঙ্গায় দুজনে স্নান করে উঠে ঘাটের উপর বসে,সেখানে অন্য ছেলে মেয়েদের দেখে মনের দুঃখে দুজনে কাঁদছিলেন  । তাই দেখে মা ষষ্ঠী ব্রাহ্মণীর বেশ  ধরে এসে তাদের জিজ্ঞেস করেন, “হ্যাঁগো,তোরা কাঁদছিস কেন?” ব্রাহ্মণী  তার দুঃখের কথা জানালে মা ষষ্ঠী জিজ্ঞাসা করলেন, “তোরা কি নীল ষষ্ঠীর ব্রত করেছিস ?”

ব্রাহ্মণী বললেন না ,এই ব্রতের  ব্যাপারে আমরা কিছুই জানিনা । ” তখন মা ষষ্ঠী বললেন, “সমস্ত চৈত্র মাস সন্ন্যাস করে শিব পুজো করবে, তারপর সংক্রান্তির আগের দিন, সমস্ত দিন উপোষ করে সন্ধ্যার সময় নীলাবতীর পুজো করে নীলকণ্ঠ শিবের ঘরে বাতি জ্বেলে দিয়ে,মা ষষ্ঠীকে প্রণাম করে ,তবে জল খাবে। ঐ দিনকে ষষ্ঠীর দিন বলে।যারা নীলষষ্ঠী করে তাদের ছেলে মেয়ে কখনও অল্প বয়সে মরে না।” এই কথা বলে মা ষষ্ঠী অদৃশ্য হয়ে গেলেন।
এরপর ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণী দেশে ফিরে গিয়ে খুব ভাল করে নীল ও  নীলাবতীর পূজা এবং নীল ষষ্ঠীর ব্রত  শুরু করলেন । এরপর তাদের যতগুলো ছেলেমেয়ে হল,সবাই দিব্যি বেঁচে রইল।তখন থেকে শুরু হল চৈত্র সংক্রান্তির দিন শিবের গাজন বা চড়ক পুজো, আর তার আগের দিন নীল ও  নীলাবতীর পূজা এবং নীল ষষ্ঠীর ব্রত ।
গাজন উৎসব:-
এখানে প্রসঙ্গত  উল্লেখ্য যে,অনেকেই বলেন বাংলা গাজন শব্দটি গর্জন শব্দ থেকে এসেছে । এই উৎসবে অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসীরা প্রচণ্ড গর্জন করেন বলে উৎসবের এইরূপ নামকরণ হয়।অনেকেই বলেন,গাজন অর্থে (গাঁ= গ্রাম, জন= জনগণ) গ্রামের জনগণের নিজস্ব উৎসব, গ্রামীণ জনসাধারণের উৎসব হওয়ায় এই উৎসবের  নামকরণ হয় গাজন।
পানা  সংক্রান্তি:-
ওড়িশাতে (উড়িষ্যা) এই দিনটি পানা  সংক্রান্তি  রূপে পালিত হয় ,এছাড়া পশ্চিম বঙ্গ ,ঝাড়খন্ড,ছত্তিসগড় রাজ্যে বসবাসরত  উৎকল ব্রাহ্মণরা ও পানা  সংক্রান্তি উৎসব টি পালন করেন। এই দিনে সবাই ভগবান শিবের মন্দিরে যান এবং সন্ধ্যায় মন্দিরে মন্দিরে ভগবান কে  বেল পানা অর্পণ করেন ও পরে ভক্তদের মধ্যে  বিতরণ করেন।

 
  

জামাই ষষ্ঠী:-
জামাই ষষ্ঠী বাংলার এবং বাঙালির একটি  বিশেষ উৎসব। বাংলায়  জামাই ষষ্ঠী কি ভাবে শুরু হয়েছিল এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত ,তবে সর্বাধিক প্রচলিত  দুটি মত হলো 
১.অতীতে আমাদের দেশের বেশ কিছু অংশে নিয়ম ছিল যে, মেয়ের বিয়ের পর তার বাবা বা মা মেয়ের বাড়িতে তত দিন পর্যন্ত যেতে পারবেন না,যত দিন না মেয়ে সন্তান সম্ভবা হন বা সন্তানের জন্ম দেন। এর ফলে মেয়ে কোনও ভাবে সন্তান ধারণে অক্ষম বা প্রসবে বাধা এলে বাবা-মায়ের দীর্ঘদিন কেটে যেত মেয়ের মুখ দর্শনে।সে ক্ষেত্রে বিবাহিত কন্যার মুখদর্শন  ঘটবে কী ভাবে ? তাই মেয়ের মুখদর্শন করার জন্য এবং মেয়েকে সন্তান সম্ভবা  হওয়ার জন্য । জৈষ্ঠ্য মাসের অরণ্য ষষ্ঠীর/শুক্লা ষষ্ঠীর দিনটিকে জামাই ও মেয়ের কল্যাণার্থে বেছে নেওয়া হয়েছিল,পরে যা পরিচিতি লাভ করে জামাই ষষ্ঠী হিসেবে।
২.কথিত আছে, একবার এক গৃহবধূ তাঁর স্বামীর ঘরে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে বিড়ালের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছিলেন। এর পর তাঁর সন্তান হারিয়ে যায়। তাঁর পাপের ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করা হয়।
 তখন সেই গৃহবধূ বনে গিয়ে মা ষষ্ঠীদেবীর আরাধনা শুরু করেন ৷ মা ষষ্ঠীদেবী আরাধনায় তুষ্ট হন ৷ মা ষষ্ঠীদেবীর আশীর্বাদে ওই গৃহবধূ বনেই তিনি নিজের সন্তানকে ফিরে পান। এই জন্যই ষষ্ঠীদেবীর অপর নাম অরণ্যষষ্ঠী। এদিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি ওই গৃহবধূর পিতৃগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এই অবস্থায় মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল বাবা, মা একবার অরণ্যষষ্ঠী /শুক্লা ষষ্ঠীপুজোর দিন জামাইকে সাদরে নিমন্ত্রণ জানান।জামাই,ষষ্ঠীপুজো উপলক্ষ্যে শ্বশুর বাড়ীতে সস্ত্রীক উপস্থিত  হন এবং  ধুমধাম করে মা ষষ্ঠীদেবীর পুজো করে মহাআনন্দে এই দিনটি কাটান। জৈষ্ঠ্য মাসের অরণ্য ষষ্ঠীর /শুক্লা ষষ্ঠীরএই দিনটিকে জামাই ও মেয়ের কল্যাণার্থে বেছে নেওয়া হয়েছিল,পরে যা পরিচিতি লাভ করে জামাই ষষ্ঠী হিসেবে। এইভাবে ষষ্ঠীপুজো রূপান্তরিত হয় জামাইষষ্ঠীতে।  
ছট পূজা।
ছট  বা ছঠ আসলে ষষ্ঠী নামের অপভ্রংশ। হিন্দু বর্ষপঞ্জীর কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে এটি উদযাপিত হয়। সূর্য্যোপাসনার এই অনুপম লৌকিক উৎসব পূর্ব ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড,পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং নেপালের তরাই অঞ্চলে পালিত হয়ে থাকে। ছট পূজা ভগবান সূর্য্য ও তার বোন দেবী ষষ্ঠীর(ছটী মাঈ) প্রতি সমর্পিত ,যেখানে তাঁদের কে পৃথিবীতে জীবনের স্রোত বহাল রাখার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও আশীর্বাদ প্রদানের কামনা করা হয়। এছাড়া পারিবারিক সুখ-সমৃদ্ধি তথা মনোবাঞ্ছিত ফল লাভের জন্য এটি পালন করা হয়। নারী-পুরুষ সমানভাবে এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। ছট পূজায়  ৩৬ ঘণ্টার এক কঠোর ব্রত পালন করতে হয়। পূজায় বিভিন্ন ফলমূল,মিঠাই ইত্যাদির সঙ্গে পরম্পরাগত বিহারী লোকখাদ্য "ঠেকুয়া" প্রস্তুত করে নৈবেদ্যরূপে প্রদান করা হয়। এই সময় নুন-মশলাবর্জিত সম্পূর্ণ নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করা হয়। পূজার শেষে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের প্রসাদ বিতরণ এই পূজার অন্যতম নিয়ম।        
উড়িষ্যার শীতলাষষ্ঠী।
আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর  আগে উড়িষ্যার সম্বলপুরের  রাজা  নন্দ  উপাধীর কিছু বৈদিক উৎকল ব্রাহ্মণ পুরীর শাসন (শাসন মানে স্বশাসিত উৎকল ব্রাহ্মণ গ্রাম) গ্রাম থেকে সম্বলপুরে  নিয়ে এসে বসিয়ে ছিলেন। সম্বলপুরের যে জায়গায় তাঁরা প্রথম  পা রেখে ছিলেন এবং পরে বসতি স্থাপন করেছিলেন সেই  জায়গাটির নাম নন্দ পদ। 
তাঁরা জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিনটিতে সম্বলপুরে শীতলাষষ্ঠী পূজা শুরু করেন ,ধীরে ধীরে এই পূজা সমস্ত উড়িষ্যায় ছড়িয়ে পড়ে। এই পূজা টি শিবপুরাণের তথ্য অনুসারে তারকাসুর বধের উদ্দেশ্যে শিব ও পার্বতীর বিবাহ এবং কুমার কার্তিকের জন্মের সন্ধর্ভে পালিত হয় ।
ষষ্ঠীদেবীর বর্ণনা 
দেবী গৌরবর্ণা দ্বিভূজা । উত্তম বসন ও অলঙ্কার পরিহিতা। চন্দ্রাননা ও কৃষ্ণ মার্জার বাহনা।পীনোন্নত পয়োধরা। কোলে একাধিক শিশুপুত্র। মহাভারতের সভাপর্বে ষষ্ঠী দেবীর নাম উল্লেখ পাওয়া যায় । ইনি ব্রহ্মার সভায় বিরাজিতা থাকেন । ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, দেবীর ভক্ত রাজা প্রিয়ব্রতের কথা। তিনি ষষ্ঠী পুজো করে মৃত সন্তানদের জীবিত অবস্থায় ফিরে পেয়েছিলেন। আর সেই থেকেই নাকি হিন্দু সমাজে প্রতি মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে ষষ্ঠীপুজো প্রচলিত হয়েছে ।  তিনি  এক হয়েও বহুরূপে বিরাজিতা। দক্ষিণ ভারতে তিনি কার্তিকেয়র ধর্মপত্নী রূপে পূজিতা ,দেবী ভাগবত মহাপুরাণে তাকে  কার্তিকেয়র ধর্মপত্নী দেবসেনা নামে উল্লেখ করা হয়েছে ।
ষষ্ঠীদেবীর পূজা
মঙ্গল ঘটে আঁকা মূর্তি, শিলে আঁকা মূর্তি, পিটুলি দিয়ে তৈরি মূর্তি, ঘটে পোঁতা বটগাছের ডাল ইত্যাদিতে ষষ্ঠীদেবীর প্রতিমা কল্পনা করা হয়,এবং দেবীর পূজা করা হয়।
অতি সংক্ষেপে শ্রী শ্রী মা ষষ্ঠীর  পূজা
পূজার আগের দিন মা কে  নিমন্ত্রণ করুন (এটি  আগের দিন সন্ধ্যা আরতির পর করলে ভালো হয়) । 
পূজার দিনে পূজা শুরু করার আগে শ্রীগণেশের মন্ত্র বলুন। 
ওঁ গং গনপতেয় নমঃ
ওঁ গং গনপতেয় সর্ব কার্য সিদ্ধি  কুরু কুরু স্বাহা।
 এর পর মায়ের ধ্যান করুন এবং মাকে আবাহন করুন। 
মাকে  আসনে/বেদীতে বসান। 
মায়ের পা ধোয়ান ও তার পরে পা মোছান। *মাকে শুদ্ধ জল  দিয়ে স্নান করাতেও  পারেন ।
মাকে  মালা পরান ,কপালে চন্দন লাগান । 
মাকে সুগন্ধি পদার্থ- ধূপ,দীপ ,ইত্যাদি অর্পণ করুন।
মাকে নৈবেদ্য অর্পণ করুন ।
এর পর মায়ের পূজা করুন। পূজার মন্ত্র  টি শুনুন ও সাথে পাঠ করুন।


এর পর ভোগ (নৈবেদ্য)পাত্রগুলির দিকে নির্দেশ করে মাকে তাঁর  উদ্দেশ্যে নিবেদিত ভোগ এবং জল গ্রহণের জন্য প্রার্থনা জানান। 
মাকে পান /সুপারি গ্রহণের জন্য প্রার্থনা জানান।  
এর পর পুষ্পাঞ্জলি ।
পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র ;- এষ সচন্দনপুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রীঁ ষষ্ঠীদেব্যৈ নমঃ
এরপর মা ষষ্ঠীর আরতি করুন।
এর পর প্রার্থনা।

পূজার শেষে  ক্ষমা প্রার্থনা  মন্ত্র। 
মন্ত্র হিনং ক্রিয়া হিনং
ভক্তি হিনং সুরেসরী
যত পুজিতং ময়া দেবী
পরিপুর্নং তদুস্তুমে
 অথবা  
ওঁযদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চযদ্ ভবেৎ।
পূর্ণং ভবতু ত্বৎসর্বং ত্বৎপ্রসাদাত জনার্দ্দন।।
অর্থঃ হে ভগবান,তোমার পূজারকাজে যদি কোন অক্ষর বাদ গিয়ে থাকে বা মাত্রা বিবর্জিতহয়ে থাকে, তোমার অনুগ্রহে তা পূর্ণত্বপ্রাপ্ত হউক।
এর পর প্রণাম
ষষ্ঠীদেবীর ধ্যান মন্ত্র:
ওঁ গৌরাভাং দ্বিভুজাং ষষ্ঠীং নানালঙ্কার - ভূষিতাম |
সর্বলক্ষণ - সম্পনাং পিনোন্নতপয়োধরাম ||
দিব্যাবস্ত্রপরিধানাং বামক্রোড়ে সপুত্রিকাম |
প্রসন্নবদনাং ধ্যায়ে জগৎধাত্রীং সুখপ্রদাম ||
অর্থাৎ: দেবী ষষ্ঠীর ধ্যান মন্ত্র অনুযায়ী তিনি 
গৌরবর্ণা,দ্বিভুজা,নানা লঙ্কারভূষিতা,সর্ব সুলক্ষণ সম্পন্না। স্তনযুগল পরিপূর্ন,দিব্যবসন পরিহিতা,বামক্রোড়ে পুত্র ধারন করে থাকেন,তাঁর প্রসন্ন মুখমণ্ডল, তিনি জগদ্ধাত্রী, সুখ প্রদানকারী।। তিনি সন্তান প্রদা,নিত্যা 
সকল মাতৃত্বের গুন নিয়েই মা ষষ্ঠী আবির্ভূতা।।
ষষ্ঠীদেবীর  প্রণাম মন্ত্র :
জয় দেবী জগন্মাত জগতানন্দকারীনী ।
প্রসীদ মম কল্যাণী নমস্তে ষষ্ঠী দেবীতে।। 
অর্থাৎ: দেবী জগন্মাতা জগৎকে আনন্দদায়িনী তোমার জয় হউক , তুমি কল্যাণী নামে সুপ্রসিদ্ধা ,তোমায় প্রণাম ষষ্ঠী দেবী।।
  
ষষ্ঠীদেবীর বাহন:-
দেবীর বাহন বিড়াল।
ভগবান শ্রী শ্রী কার্তিকের ধর্মপত্নী দেবী দেবসেনা (মা ষষ্ঠীদেবী)



ভগবান শ্রী শ্রী কার্তিক এবং দেবী  ষষ্ঠী
Kushan-era 2nd century CE, Mathura Museum



মা ষষ্ঠীর ব্রত পালন 
মা ষষ্ঠীর ব্রত পালন করা হয় সন্তান প্রাপ্তি ও তাদের মঙ্গল কামনায় । আমাদের হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে অনেক গুলি ষষ্ঠী ব্রত পালন করতে দেখা যায়, যেমন মূলা ষষ্ঠী, অশোকা ষষ্ঠী, লুন্ঠন ষষ্ঠী, পাটাই ষষ্ঠী ইত্যাদি । জ্যৈষ্ঠ মাসের অরণ্যষষ্ঠী সেগুলির একটি । সন্তানের দীর্ঘায়ু, রোগ- শোক হীন জীবন প্রাপ্তির আশায় মায়েরা এই ব্রত করেন। মা ষষ্ঠীর বাহন বিড়াল । বিড়াল এর জীবনের দিকে লক্ষ্য রাখলে আমরা দেখি সে তার ছানা গুলোকে বড় যত্নে লালন পালন করে, জীভ দিয়ে চেটে শরীর পরিষ্কার করে। দুগ্ধ প্রদান করে । শিশুর জন্মদাত্রী মা তার সন্তান কে ঠিক ঐ ভাবে যত্ন নিয়ে লালন পালন করেন। তাই হয়তো মায়ের বাহন বিড়াল । দেবীভাগবত পুরানে নবম স্কন্ধের একটি শ্লোকে বলা হয়েছে- “ষষ্ঠাংশা প্রকৃতের্যে চ সা চ ষষ্ঠী প্রকীর্তিতা / বালকানামধিষ্ঠাত্রী বিষ্ণুমায়া চ বালদা ।” অর্থাৎ - বালকগণের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, বালকদায়িনী বিষ্ণুমায়া প্রকৃতির ষষ্ঠকলা ,এই জন্য দেবী,ষষ্ঠী নামে কীর্তিত  (মহিমান্বিতা) হয়েছেন । মা ষষ্ঠীদেবী বিষ্ণুমায়া প্রকৃতির ষষ্ঠকলা তাই ষষ্ঠীদেবীর পূজার শেষে  ভগবান নারায়ণের আরতি  করুন। শুনুন পণ্ডিত শ্রদ্ধা রাম (শর্মা)  ফিল্লউরির  লেখা ভারতের  সর্বাধিক  জনপ্রিয়  ওঁম  জয়   জগদীশ  হরে আরতি টি। 


আমাদের আজকালের পূজা 
যুগের নিয়মে হারিয়ে যেতে বসেছে পূজা ।আজকাল নতুন জেনারেশনের বাড়িতে পুজোই বা কোথায়। সকাল দশটা থেকে রাত দশটার জীবনে কোথায় পুজো? আজকাল গৃহস্থ (বাড়িতে বাড়িতে) পূজার পরিবর্তে সামূহিক পূজার প্রচলন বাড়ছে এবং সেখানে পূজার খরচ কম আমোদ প্রমোদের খরচই বেশি। আজকাল  নতুন  নতুন অনুষ্ঠান  আমাদের  পূজা  গুলো কে  পিছনে ফেলে  তরতর   করে এগিয়ে  যাচ্ছে ,যেমন  ছেলেমেয়েদের  জন্মদিনে  ষষ্ঠীদেবীর পূজার পরিবর্তে বার্থডে পার্টি,  বিবাহের  দিনে লক্ষ্মী নারায়ণ অথবা হর পার্বতীর পূজার পরিবর্তে  ম্যারেজ এনিভার্সারি  পার্টি ,ভ্যালেন্টাইনস ডে,গেট টুগেদার  পার্টি  আরো কত কি ? আসুন আমরা নতুন নতুন অনুষ্ঠান গুলির সাথে  সাথে  আমাদের পূজা  গুলো কেও ধরে রাখি,না হলে হয়তো হারিয়ে  যাবে  আমাদের পূজা গুলি।

লেখকের মন্তব্য:-এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন  তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। ডকুমেন্টারি প্রমাণ এবং তথ্যের উৎস  ছাড়া এই বিষয়ে যে কোনও মন্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং  অসাধু বলে গণ্য করা হবে এবং মুছে ফেলা হবে। 

সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক। 🙏হে মা আমাকে শুধু জ্ঞান দাও ,ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏

আমি এই আর্টিকেল টি আমার এক মাত্র 
ছেলে  ৺ >আকাশের< জন্য উৎসর্গ করিলাম। 
Appreciation Mail of  Jeremie Lumbroso
lecturer Princeton University. USA































 লেখক পরিচিতি:-প্রবীর  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।
 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ও কল্কি অবতার।

ষড়রিপু এবং মানব জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব:ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উপায়।

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।