ঈশ্বর কি সত্যিই আছেন? ঈশ্বর প্রাপ্তির উপায় কি? ঈশ্বর/ভগবান যদি আছেন তাহলে তার কোন প্রমাণ/যুক্তি আছে কি?

অনেকের মনে জিজ্ঞাসা, জানিবার ইচ্ছা, প্রশ্ন, কৌতূহল- ঈশ্বর কি সত্যিই আছেন? ঈশ্বর যদি আছেন তার কোন প্রমাণ/যুক্তি আছে কি? ঈশ্বর যে আছেন  তার সবচেয়ে জনপ্রিয় যুক্তিগুলি হলো নিম্ন রূপ। 

১.সত্তাতাত্ত্বিক যুক্তি :-সত্তাতাত্ত্বিক যুক্তিতে ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা দিয়েই ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা।  এতে ঈশ্বর সম্বন্ধে যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তাতে  বলা হয়েছে -‘তিনি এমন এক সত্ত্বা,তাঁর চেয়ে মহত্তর আর কিছু ভাবা যায় না ,তিনি মহান  ঐশ্বর্য,মহান বীর্য,মহা যশ,মহা শ্রী,মহা জ্ঞান,মহা বৈরাগ্য এর অধিকারী । যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে ঈশ্বর সম্পর্কে এই রকম বড় কোন ধারণা করা যেত না ।


.দ্বিতীয় যুক্তি হচ্ছে প্লানিং এন্ড আর্কিটেকচার থিওরি। (কেউ কিছু উপলব্ধি করুক বা না করুক,তা এখনও বিদ্যমান)। এই তত্ব অনুসারে ,যেহেতু এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড  আশ্চর্যজনক ভাবে পরিকল্পনা মাফিক  সাজানো এবং এতে বিদ্যমান গ্রহ ,গ্রহানুপুঞ্জ,নক্ষত্র ইত্যাদির পরিভ্ৰমণ গণিতের নিয়মে বাঁধা,সেহেতু এর /এগুলিকে সৃষ্টি করার জন্য একজন মহান গণিতজ্ঞ ও  পরিকল্পনাকারী অবশ্যই আছেন এবং সেই মহান গণিতজ্ঞ ও  পরিকল্পনাকারী অবশ্যই কোন মহান সত্বা এবং তাঁর চেয়ে মহান  আর কিছু ভাবা যায় না।


এই পরিকল্পনাকারী শুধুমাত্র আমাদের ব্রহ্মান্ডকেই সৃষ্টি করেন নি, তাকে আজ পর্যন্ত টিকিয়ে ও রেখেছেন। এই পরিকল্পনাকারী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে  আমাদের পৃথিবীর বায়ূমন্ডলে গ্যাসগুলির মাত্রা এমন করেছেন যাতে প্রাণীরা বেঁচে থাকতে পারে , আমাদের বায়ূমন্ডলের কোন একটি  উপাদান যদি সামান্য পরিমাণে এদিক-সেদিক হয়, তাহলে এই পৃথিবীতে অধিকাংশ প্রাণীই বেঁচে থাকবে না। সেই মহান গণিতজ্ঞ ও মহান পরিকল্পনাকারীই হলেন  এমন এক  মহান সত্ত্বা,যাকে বলা হয় ঈশ্বর।
কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইনামিকস-এ নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত রিচার্ড ফেইনম্যান বলেছেন,‘প্রকৃতি কেন গাণিতিক তার একটি রহস্য আছে... সেখানে অনেক নিয়ম আছে যা এক ধরণের অলৌকিক ঘটনার মত।

 ৩.ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তৃতীয় যুক্তি হচ্ছে, সৃষ্টিতত্ত্বের যুক্তি। হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্ব অনুযায়ী প্রায় ৮৬৪ কোটি বছর পরপর ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি ও ধ্বংস হয় এবং এই প্রক্রিয়া চক্রাকারে চলতে থাকে। প্রতিটি মহাবিশ্ব ৪.৩২ বিলিয়ন বছর সময়কাল ধরে স্থায়ী হয়। এই সময়কালকে এক কল্প বা ব্রহ্মার এক দিন বলা হয়। এক কল্পের সমান সময়কাল পরে আসে ব্রহ্মাণ্ডের প্রলয় বা রাত। সৃষ্টি ও ধ্বংসের মধ্যবর্তি সময়কে বলা হয় ব্রহ্ম অহোরাত্র। সৃষ্টি ও ধ্বংসের মধ্যবর্তি সময়কে বলা হয় ব্রহ্ম অহোরাত্র। আমাদের সৃষ্টিতত্ত্বতে ব্রহ্মাণ্ডের টাইম লাইনও দেওয়া হয়েছে। সৃষ্টিতত্ত্বের যুক্তি  অনুযায়ী এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সবসময়ই  কিছুনা কিছু ঘটছে এবং কোন কিছু ঘটার জন্য  তার কর্তা ও  কারণ (নিমিত্ত) অবশ্যই থাকে। এখানে এই কর্তাই হলেন  মহান সত্ত্বা,অর্থাৎ ঈশ্বর।




.চতুর্থ যুক্তিটি হচ্ছে ডিজাইন থিওরি। এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে বিদ্যমান অসংখ্য গ্যালাক্সি (ছায়াপথ-আমাদের সৌর জগৎ আকাশ গঙ্গা নামক ছায়া পথে অবস্থিত) এবং এই গ্যালাক্সিতে বিদ্যমান অসংখ্য গ্রহ ,নক্ষত্র  এবং এদের মধ্যে  বিদ্যমান বস্তু গুলির রং ,রূপ ,আকার  বড়ই  বিচিত্র ও অদ্ভুত  এছাড়া আমাদের পৃথিবীতে বিদ্যমান গাছ ,পালা ,ফুল ,ফল ,পশু ,পাখির  রং রূপ আকার  বড়ই  বিচিত্র ও অদ্ভুত। এই সমস্ত জিনিস গুলি মন দিয়ে দেখলে ও ভাবলে আমাদের অবশ্যই   মনে হবে এগুলির  ভিন্ন ভিন্ন রং ,রূপ ,আকার দেওয়ার  পিছনে একজন মহান ডিজাইনার অবশ্যই আছেন।  সেই মহান ডিজাইনারই হলেন  এমন এক  মহান সত্ত্বা,যাকে বলা হয় ঈশ্বর।ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে সহজ ও সরল ভাবে  বোঝার জন্য এই ভিডিও টি দেখুন। 


 .পঞ্চম যুক্তিটি হচ্ছে নৈতিক যুক্তি। নৈতিক যুক্তি হ'ল লোকেরা কীভাবে সঠিক এবং ভুল সম্পর্কে চিন্তা করে এবং কীভাবে তারা নৈতিক নিয়মগুলি অর্জন করে। পৃথিবীর প্রত্যেক সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে কিছু নিয়ম রয়েছে। প্রত্যেকের রয়েছে ভাল-মন্দের জ্ঞান। খুন করা,প্রতারণা করা ,মিথ্যা কথা বলা, চুরি করা এবং অনৈতিক কাজ করা- প্রায় সার্বজনীনভাবে বর্জন করা হয়েছে। যদি একজন  ঈশ্বর না থাকেন, তাহলে এইরকম ভাল ও মন্দ বুঝবার জ্ঞান কোথা থেকে আসে? ঈশ্বর যদি  না থাকেন, তাহলে কোটি কোটি লোকের তাঁর প্রতি আস্থা কোথা থেকে আসে?

ঈশ্বর যে  সত্যিই আছেন তার একটি প্রমান হল মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের  অনুভূতি।

ঈশ্বরের অনুভূতি:- 

1.পৃথিবী সূর্যের চারপাশে প্রায় 29.72 কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড বেগে ঘোরে,এই সূর্য আবার তার গ্যালাক্সির চারিদিকে 230 কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড (828,000 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা) বেগে ঘুরছে। অথচ আমরা যারা এই পৃথিবীতে বসবাস করি তারা এটি উপলব্ধি করতে পারিনা। এই ঘুরন্ত ,ভ্রাম্যমান ও ভাসমান পৃথিবী, গ্রহ ,নক্ষত্র,আমাদের সৌর জগৎ, গ্যালাক্সি নিয়ে একটু ভাবলেই মনে অনুভব হয় ঈশ্বরের কথা। দেখুন সূর্য ও পৃথিবী আসলে  কি ভাবে গ্যালাক্সির চারদিকে  ঘুরছে। 


2.বন্যা ,খরা ও হিট ওয়েভ ,ভূমিকম্প ,ঘূর্ণিঝড়,বজ্রপাত ,সুনামি ,আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ,সর্প দংশন ,রোড এক্সিডেন্ট ,মহামারী ,ইত্যাদিতে অসহায় মানুষ অনুভব করে ঈশ্বরের কথা। 


3.ঘর ও পরিবারের কারো ও অসময়ে,অথবা অস্বাভাবিক ভাবে  মৃত্যু হলে মানুষ অনুভব করে ঈশ্বরের কথা।

4.গরুড়পুরাণ ও  শ্রীমদ ভাগবত পুরানে  স্বয়ং  ভগবান পুনর্জন্মের কথা বলেছেন ,অন্যদিকে আজকের বিজ্ঞান খারিজ করে দেয় পুনর্জন্মের কথা, তাই মানুষ  যখন তাঁর সামনে পুনর্জন্মের ঘটনা দেখে থাকে  তখন সে ভগবান/ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করতে  শুরু করে।

দেখুন ২ বিদেশির ভারতের ২ প্রদেশে পুনর্জন্ম।

5.মানুষ যখন তার সামনে উপস্থিত ভয়ঙ্কর  বিপদ থেকে আশ্চর্যজনক ভাবে রক্ষা পায় তখন সে  অনুভব করে ঈশ্বরের কথা।

6.আজকাল কার দিনে এমন অনেক লোক আছেন যারা নিজেদের মডার্ন (আধুনিক )ও শিক্ষিত  দেখাবার জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে খারিজ করে দেন ,এই সমস্ত লোকদের সন্তান ও সন্ততি যখন অসুস্থ হয়ে ICU তে ভর্তি হন ,এবং ডাক্তার দের অসহায় অবস্থা দেখেন ,এবং ডাক্তাররাই  তাদের ভগবানের কাছে  প্রার্থনা  করতে  বলেন ,তখন তাদের সুমতি হয় এবং তারা ভগবান/ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস করতে  শুরু করে করেন। 

ঈশ্বর/ভগবান যে  সত্যিই আছেন তার একটি প্রমান হল  দেবতা ও দেবস্থলের রহস্য। 

পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মের মতো প্রায় সমস্ত ধর্মের এমন অনেক ধৰ্ম স্থল আছে ,যেখানের রহস্য আজও মানুষ কে ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে স্বীকার করতে বাধ্য করে। উদাহরণ:- পুরীর জগন্নাথ ও জগন্নাথ মন্দিরের রহস্য।হিমাচল প্রদেশের  কাংড়া জেলায় অবস্থিত মা জ্বালা দেবীর জ্যোতির রহস্য । 

ঈশ্বর/ভগবান যে  সত্যিই আছেন তার একটি প্রমান হল  ঈশ্বরের অংশ অবতারদের এই পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া।

যেমন প্রভু রাম ,প্রভু কৃষ্ণ,ভগবান বুদ্ধ ,চৈতন্যমহাপ্রভু  ইত্যাদিদের পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া।

 ঈশ্বর/ভগবান যে  সত্যিই আছেন তার একটি প্রমান হল যুগ চক্রের উপস্থিতি। 

 যুগ চক্রের উপস্থিতি (একটি যুগ শুরু হচ্ছে এবং অন্য একটি যুগ ধংস হচ্ছে)।  প্রাচীন যুগের নিদর্শন (রাম জন্ম ভূমি ,কৃষ্ণ জন্ম ভূমি ,শ্রী রাধার জন্ম স্থল আরো অনেক কিছু )। 

ঈশ্বর প্রাপ্তির উপায় কি?

ঈশ্বর প্রাপ্তির সর্বোত্তম উপায় ঈশ্বরকে  স্মরণ,মনন ও চিন্তন।

ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চ।

জগদ্ধিতায়  কল্কি দেবায় নমো নমঃ।। 🙏

💥আমি এই আর্টিকেল টি মাত্র ৯ বছরের উৎকল ব্রাহ্মণ বালক স্বর্গীয় রোহিত মহান্তীর আত্মার শান্তির জন্য উৎসর্গ করিলাম। 

1.🔗পড়ুন>>আত্মা ও মৃত্যু। মৃত্যুর পরে কি হয় ? মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তির জন্য কি করতে হয় ? পুনর্জন্মের বৃত্তান্ত -আত্মা ও গর্ভাধান ,পূর্বজন্মের কথা /বৃত্তান্ত কি ভাবে জানবেন ?

2.🔗পড়ুন>>প্রজননের দেবী, সন্তান দায়িনী,মা ষষ্ঠীদেবীর পূজা এবং তাঁর ধ্যান মন্ত্র,প্রণাম মন্ত্র ও ব্রত পালন ।


3.🔗 পড়ুন >> বেদ এবং পুরাণের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও ইতিহাস।

4.🔗পড়ুন >> বেদ এবং বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী সৃস্টির রচনা।

5. 🔗পড়ুন >>সনাতন হিন্দুধর্মে ব্যবহৃত শব্দাবলীর (গুরু,প্রণাম,নমস্কার, আশীর্বাদ,অপমান ইত্যাদি) অর্থ।

6. 🔗পড়ুন >>আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ?

7.🔗পড়ুন>>ষড়রিপু এবং মানব জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব:ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উপায়।


ঈশ্বর হলেন আমার ব্যক্তিগত ধর্ম দ্বারা সংজ্ঞায়িত একটি মহান সত্তা। তিনি একটি এমন সত্তা যিনি সর্বত্র বিরাজমান।তাঁর চেয়ে মহত্তর আর কিছু ভাবা যায় না ,তিনি মহান  ঐশ্বর্য,মহান বীর্য,মহা যশ,মহা শ্রী,মহা জ্ঞান,মহা বৈরাগ্য এর অধিকারী। তাঁর শ্রী চরণে শত কোটি প্রণাম। 

এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন  তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। ডকুমেন্টারি প্রমাণ এবং তথ্যের উৎস  ছাড়া এই বিষয়ে যে কোনও মন্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং  অসাধু বলে গণ্য করা হবে এবং মুছে ফেলা হবে।সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক। 🙏হে প্রভু আমাকে শুধু জ্ঞান দাও ,ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ও কল্কি অবতার।

ষড়রিপু এবং মানব জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব:ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উপায়।

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।