মানুষ চেনার সহজ উপায়।






মানুষ চিনুন :-
আপনার কাছের মানুষ ও  আপনার ক্ষতি পারেন। 


মানুষ চেনার সহজ উপায়।

যথা চতুর্ভিঃ কনকং পরীক্ষতে, নিঘর্ষণচ্ছেদন তাপ তাড়নৈঃ ।

তথা চতুর্ভিঃ পুরুষঃ পরীক্ষতে,ত্যাগেন শীলেন গুণেন কৰ্ম্মন :॥

এর বাংলা অর্থ :- সোনাকে যেমন ঘষা, কাটা, উত্তপ্ত করা  ও প্রহার দ্বারা পরীক্ষা করে চেনা যায়। তেমনি একজন মানুষকে তাঁর ত্যাগ,শীলতা ( শিষ্টাচার), গুণ  ও কর্ম দ্বারা চেনা যায়। 

অত্যন্ত  সহজে এবং এক  কথায়  যদি আমরা জানতে চাই ভালো  মানুষ এবং খারাপ মানুষ চেনার উপায় কি ? তাহলে আমাদের মনে আসে  আমাদের সমাজে বহু দিন ধরে  প্রচলিত জ্ঞানী, গুণী জনের একটি স্বীকৃত উপদেশ /পরামর্শ। এই উপদেশ অনুসারে ;-


. আইডিয়াল  মানুষ তারাই যারা  ভালো ভালো আইডিয়া নিয়ে কথা বলতে  পছন্দ করেন। 

.ভালো মানুষ তারাই যারা  ভালো ভালো টপিক /বিষয়বস্তু   নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন। 

.খারাপ মানুষ তারাই যারা প্রায় সবসময় অন্য মানুষদের  নিন্দা, কুৎসা করতে পছন্দ করেন।

এছাড়া আজকালকার  জ্ঞানী, গুণী জনের  উপদেশ/পরামর্শ অনুসারে,মানুষ কে যদি সহজেই  চিনতে চান তাহলে অবশ্যই সেই মানুষের নিচে যে বা যারা কাজ করেন তাদের সাথে তার আচার ,ব্যবহার নিরপেক্ষ ভাবে  লক্ষ্য করুন। তাহলেই বুঝতে  পারবেন মানুষ টি কেমন? 

তাছাড়া পশু,পাখি,ভিখারি,দরিদ্র,দুস্থ,অসুস্থ,বিপদগ্রস্ত ও বৃদ্ধ মানুষের প্রতি মানুষের আচরণ দেখলেই মানুষ কে সহজেই  চেনা বা বোঝা যায় এছাড়া মানুষের সঙ্গ (বন্ধু বান্ধব) দেখেই  মানুষ টি কেমন তাহা সহজেই অনুমান করতে  পারা যায়।

মুখ দেখে মানুষ চেনার সহজ উপায় ।

কথায় আছে মুখই মনের দর্পন। মুখ দেখেই অনেকে বলে দেন  আপনি কি ধরনের লোক ?  বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের মুখের কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে বোঝা যায় তার চরিত্র।

অভিব্যক্তি(বাক্যের রীতি, মুখের ভাব) দেখে মানুষ চেনার সহজ উপায় ।

যেমন কথায় আছে মুখই মনের দর্পন। তেমনই মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত শব্দ/  অভিব্যক্তি(বাক্যের রীতি) হলো মানুষের মনের ভাব।মনোবিদদের মতে মানুষের বাক্যের রীতি এবং মানুষের দ্বারা ব্যবহৃত শব্দ ও মুখের হাব ভাব দেখে বুঝে নেওয়া যায় মানুষের মস্তিষ্কে কি চলছে। যেমন-

ঈর্ষা :- মানুষের মনে ঈর্ষার  সৃষ্টি হলে ,মানুষ  যে মানুষের প্রতি তার ঈর্ষা আছে, তাঁকে  দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেয়,মুখ ভারী করে রাখে। অপরের খুশি তে মৌন থাকে। হিংসা:-মানুষের মনে হিংসা র  সৃষ্টি হলে যে মানুষের প্রতি তার হিংসা আছে তাঁকে  দেখে বড় বড় চোখ করে তাকায়, দুমদাম আওয়াজ করে চলে, দাঁত কড় কড় (কস কস) করে ,চমকানো ও ধমকানোর চেষ্টা করে।

ভয়:-যেমন মানুষের মনে ভয়ের  সৃষ্টি হলে- মুখ শুকিয়ে আসে। ঠোঁটের দুই প্রান্ত প্রসারিত ও কম্পিত  হয়। এছাড়া হাত-পা কাঁপা, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট, দম বন্ধ ভাব, বুকের মাঝে চাপ, ব্যথা ও অতিরিক্ত ঘাম হয়  এছাড়া মানুষ ফিস ফিস করে কথা বলে।

লজ্জা:- মানুষ লজ্জা পেলে সরাসরি চোখের দিকে তাকাতে পারে না। দৃষ্টি নিম্নগামী হয়। এছাড়া লজ্জা  হলে মানুষ  মাথা নিচু করে  অথবা  নজর এড়িয়ে কথা বলে।

আনন্দ;-যেমন মনে  আনন্দের  সৃষ্টি হলে ,চেহারা প্রফুল্ল থাকে। 

বিস্ময়:- অবাক হলে মানুষের ভ্রূ যুগল ধনুকের মতো বেঁকে যায়। কপালে হালকা ভাঁজ পড়ে। ঠোঁট দু'টির মধ্যে দূরত্ব বাড়তে শুরু করে।

প্রেমের ভান করা:-দেহ ও দৈহিক ভাষা,মুখ ও শরীরের মধ্যে বৈষম্য দেখা যায়।

ভালোবাসা: -মনে ভালোবাসা উত্‍পন্ন হলে মুখে হাসি ,খুশি ও পরিতৃপ্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।


প্রেম:- মনে  প্রেমের সঞ্চার হলে মানুষের মন এবং শরীর প্রায় একই রেখায় অবস্থান করে ,যার ফলে মানুষ অনেক সময় স্থান ,কাল ভুলে যায় এবং ভাবে  বিভোর হয়ে যায়। এছাড়া মানুষের মধ্যে চঞ্চলতা/ অস্থিরতা/অধীরতা  এবং অন্যমনস্কতা দেখা যায়।  

এই সব অভিব্যক্তি(বাক্যের রীতি, মুখের ভাব) দেখেই মানুষ কে সহজেই চেনা যায়।

মানুষ কে চিনুন -  বিপদে ও আপদে। (আপদ, বিপদ না হলেও,  বিপদের একটি পূর্বাভাস।)

মানুষ কে চেনার সব চেয়ে উপযুক্ত সময় আপনার বিপদের সময়। আপনার বিপদের সময় যে  আপনার সাহায্যের জন্য স্বেচ্ছায়  এগিয়ে আসে ও নিঃস্বার্থ ভাবে ,মনে প্রাণে আপনাকে সাহায্য করে  সেই  হলো ভালো মানুষ,সেই আপনার প্রকৃত বন্ধু । 

লক্ষণ দেখে মানুষ চেনার সহজ উপায় ।

★★★ খারাপ মানুষের  লক্ষণ/বৈশিষ্ট্য।

.যারা ভালো মানুষের মিছা মিছি  নিন্দা করে, মিথ্যা বদনাম করতে  থাকে  তারা এককথায় খারাপ মানুষ। খারাপ মানুষেরা অন্যের দুঃখে মনে মনে আনন্দিত হয়,ফুর্তি করে। এরা মানুষের চরম বিপদে মানুষের আরো সর্বনাশ করতে চায়। অন্য কেউ  সাহায্য করতে এলে তাকে বাধা দেয়। এরা অপরের খুশি তে মৌন অথবা দুঃখী  থাকে। এরা বিপদগ্রস্থ ,শোকাহত  মানুষের উপকার করা ,শান্তনা দেওয়া তো দূরের কথা ,এরা  বিপদগ্রস্থ ,শোকাহত  মানুষের সমালোচনা ,মিথ্যা বদনাম করতে থাকে।   আমাদের শাস্ত্রে এই সমস্ত লোকদের দ্বিপদ পশু বলে বর্ণনা  বলা হয়েছে।

এরা ফোন করে অন্যের ভালো ,মন্দ ,দুঃখ ,কষ্টের খবর না নিয়ে ,নিজের আত্মশ্লাঘা/আত্মপ্রশংসা (কথা ও কাহিনী) এবং পরচর্চা ও পরনিন্দা করে। খারাপ মানুষেরা সাধারণত পরচর্চা ও পর নিন্দা করতে খুব ভালোবাসে।  

.খারাপ মানুষেরা  অন্যের জীবনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে দখল নিতে  চায়। এরা  নিজেদের ভুল,ত্রূটি ,দাম্ভিকতা,লোভ,হিংসা,বিদ্বেষ ,অহংকার ইত্যাদি অপগুন গুলি দেখতে পায় না,কিন্তু অন্যদের মধ্যে এই অপগুন গুলি ভীষণ ভাবে দেখতে পায়।তার কারণ হলো-"যার যেমন ভাবনা তার তেমনি আয়না।"

.এদের খিটখিটে মেজাজ এবং এরা হিংসাপরায়ন। এরা কারণে-অকারণেই  মিথ্যা  বলে থাকে।  নেতিবাচক সমালোচনা,আত্মশ্লাঘা (নিজের প্রশংসা) হচ্ছে  খারাপ মানুষদের প্রধান লক্ষণ। এরা অন্যের কথা শুনতে চান না। সর্বদা নিজের কথা শুনাতে ও  শুনতে চান। এঁরা স্ত্রী ,কন্যা,সন্তান -সন্ততি দের অসম্মান ও গালা গালি করেন। এঁরা গুরুজনদের অসম্মান বা অমর্যাদা, অবহেলা করেন। 

☯.খারাপ মানুষেরা অনেক সময় প্রচণ্ড  হিংসুক ,বর্বর,রুষ্ট, রাগান্বিত, অসভ্য ও অমার্জিত  প্রকৃতির হয় । এরা  অন্যের প্রতিভা কে  অনাদর করে। খারাপ মানুষেরা  অন্যের প্রতি নানান ভাবে আপনার মনোভাব বিরূপ,বিমুখ, অসন্তুষ্ট ও  প্রতিকূল করে তোলে। এরা অযথা মানুষ কে সন্দেহ করে। এরা শুধু সত্য নয়, এরা তথ্যও গোপন করে।

.খারাপ মানুষেরা  নিজের খারাপ কাজের জন্যে কখনোই অনুতপ্ত হয় না। এরা  পরাজয় কে স্বীকার  করে না। এরা  যুক্তি তে  হারতে  বা যুক্তি কে মানতে চায় না। খারাপ মানুষেরা  মানুষ কে কাজের সময় কাজী, কাজ ফুরালে পাজি বলে। 

☯.খারাপ মানুষেরা কৌশলে দায়িত্ব এড়িয়ে যায় এবং এরা নিজের দায়িত্ব অন্যের উপরে চাপিয়ে দেয়।শুধু তাই নয় এরা  নিজের দোষ  অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়।

 ☯. খারাপ মানুষেরা  অনেক সময় দুশ্চরিত্র/লম্পট,দাগাবাজ হয় , এই সব মানুষদের  চিনতে অনেক সময় লাগে,এরা সাধারণত মায়াবী ,স্মার্ট এবং মিষ্টি ও মিথ্যা কথার জাদুকর হয়,এঁরা প্রথমে মানুষের আস্থা /বিশ্বাস /ভরসা অর্জন করে তার পরে ব্ল্যাকমেল ,দাগাবাজি শুরু করে  তাই হঠাৎ করে কেউ যদি আপনার আস্থা /বিশ্বাস /ভরসা অর্জন করতে চায় ,তাহলে তার আগের ইতিহাস /কার্য কলাপ,- সৎ ,সহিষ্ণু ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি ও বস্তুর (Reliable Source) কাছ থেকে অবশ্যই জানুন। 

☯.খারাপ মানুষেরা  নানান ভাবে মানুষের মাঝে বৈষম্য  করতে ও মানুষকে হেয় করতে ভালোবাসে । এরা অনেক সময় নারীদের কাছে পৌরুষের ঔদ্ধত্য দেখায়। এই খারাপ মানুষ গুলি যখন খারাপের চরম সীমায় পৌঁছে যান ,তখন তারা হয়ে যান হিংসুক।

★★★ ভালো মানুষের  লক্ষণ/বৈশিষ্ট্য।

☯.এক কথায় খারাপ মানুষের  লক্ষণ/বৈশিষ্ট্য গুলি যাদের মধ্যে নেই ,তারাই ভালো মানুষ ।

.মানুষ কে চেনার জন্য ভালো পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকা চাই। এছাড়া মানুষের কথা বার্তা (সামনে ও আড়ালে ) বিশ্লেষণ করে তার মন কে বুঝার  ক্ষমতা থাকা চাই। তবেই মানুষ কে চেনা যায়।


💥লেখকের মন্তব্য:-

এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন  তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। ডকুমেন্টারি প্রমাণ এবং তথ্যের উৎস  ছাড়া এই বিষয়ে যে কোনও মন্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং  অসাধু বলে গণ্য করা হবে এবং মুছে ফেলা হবে।

 সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক , ধর্মের জয়  হোক। 🙏হে প্রভু আমাকে শুধু জ্ঞান দাও , ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏


লেখক পরিচিতি:- প্রবীর মহান্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন। 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।

শ্রী শ্রী মা ষষ্ঠীদেবীর পূজা এবং তাঁর ধ্যান মন্ত্র,প্রণাম মন্ত্র ও ব্রত পালন ।

কলি যুগের অবসান/সমাপ্তি ও কল্কি অবতার - সত্য যুগের পুনঃপ্রতিষ্ঠা- সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ।