সনাতন হিন্দুধর্মের আসল পতাকা (flag)এবং সনাতন ধর্মে বর্ণিত ১৪ লোকের বিবরণ ও সনাতন ধর্মে ব্যবহৃত শব্দাবলীর সঠিক অর্থ।

 পতাকা হল সাধারণত কাপড়ের তৈরি কোন ব্যক্তি ,বস্তু অথবা সংস্থার একটি বিশেষ অর্থবহ নিশান। পতাকা শব্দের  প্রতিশব্দ হল ,কেতন, ধ্বজা,বৈজয়ন্তী (উর্দ্দু: ঝাণ্ডা)ইত্যাদি । যেমন সমস্ত দেশের নিজস্ব পতাকা আছে ,তেমনি সমস্ত ধর্মেরও  নিজস্ব পতাকা আছে ,কিন্তু অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডে ও চিন্ময় জগতে যে সনাতন বৈদিক ধর্ম বিদ্যমান সেই সনাতন হিন্দু  ধর্মের বেশির ভাগ লোকই জানেন না যে সনাতন হিন্দু  ধর্মের আসল পতাকা কোনটি ? সনাতন ধর্মের আসল পতাকা টি পাঁচ টি রং দিয়ে তৈরি। এই রং গুলি হল শ্বেত ,লোহিত ,পীত ,হরিৎ ,নীল অর্থাৎ  সাদা ,লাল ,হলুদ ,সবুজ ,ও নীল। সাদা রং সত্যের প্রতীক। লাল রং ক্ষমার প্রতীক। হলুদ রং দয়ার প্রতীক। সবুজ  রং শান্তির প্রতীক। নীল রং বিশ্বমৈত্রীর প্রতীক। এর মাঝে  গোলাকার রিংয়ের মধ্যে স্টার এবং তার মধ্যে স্বস্তিক চিহ্ন বিদ্যমান ,এই পতাকা টিই  ভগবান শ্রী কৃষ্ণ ব্যবহার করতেন।

সনাতন ধর্মের আসল পতাকা


সনাতন ধর্মে বর্ণিত ১৪ লোকের বিবরণ।
 পুরাণ ও অথর্ববেদে চোদ্দটি লোকের উল্লেখ করা রয়েছে – সাতটি ঊর্ধ্বলোক এবং সাতটি নিম্নলোক। ঊর্ধ্বলোকগুলো হল – ভূ (ভূমি), ভূবঃ (বায়ু), স্ব (স্বর্গ), মহঃ, জন, তপ ও সত্য (ব্রহ্ম-লোক); এবং নিম্নলোকগুলো হল – অতল, বিতল, সুতল, রসাতল, তলাতল, মহাতল ও পাতাল।



আমরা সনাতন ধর্মের লোকেরা এমন অনেক শব্দ ব্যবহার  করি যার সঠিক  অর্থ (মানে) আমরা জানি না ,কারণ এই শব্দ গুলি আজকালকার শিক্ষার পাঠ্য ক্রমে অন্তর্ভূক্ত নয় ।  সেইজন্য এগুলি আজ গুরুত্বহীন। তাই আসুন জানা যাক এই শব্দগুলির  সঠিক অর্থ কি ?

1.গুরু: গু এর  অর্থ অন্ধকার এবং রু এর অর্থ প্রকাশ । অর্থাৎ যিনি অন্ধকার থেকে  আলোর রাস্তায় নিয়ে যান  তিনি হলেন গুরু। উদাহরণ;দেব গুরু(বৃহস্পতি ), রাজগুরু ইত্যাদি। 

2.আচার্য: যার বেদ এবং শাস্ত্রের জ্ঞান আছে  এবং যিনি গুরুকুলে  ছাত্রদের  শিক্ষা প্রদান করেন তাকে আচার্য বলা হয় ।মহান আচার্য্যের উদাহরণ - কৃপাচার্য,দ্রোণাচার্য্য । 

3.পুরোহিত;- পুরোহিত দুটো শব্দ দিয়ে তৈরি :-পর এবং হিত অর্থাৎ যিনি অন্যের (হিত ) ভালো করেন। উদাহরণ;-রাজ পুরোহিত ,কুলপুরোহিত ইত্যাদি। 

4.পুজারি:- যিনি মন্দির বা অন্য কোন স্থানে পূজা পাঠ করেন তিনি হলেন পূজারী।পূজারীগণ পূজা, আরতি, ভগবানের মূর্তির যত্ন নেওয়া সহ মন্দিরের নিত্যকর্মসমূহ সম্পাদন করেন।

5নৈবেদ্য:- শব্দের অর্থ হল ভগবান কে অর্পণ করা খাদ্য দ্রব্য /পদার্থ। নৈবেদ্য ভগবান কে অর্পণ করার  পর যখন ভক্তদের মধ্যে বিতরণ হয় তাকে বলে প্রসাদ। নৈবেদ্যর অন্য  অর্থ হল  প্রয়োজন ।

6.কুটুম্ব:- (কথ্য) কুটুম;-কুটুম্ব মানে রক্তের সম্পর্ক।

7.পরিবার:-পরিবার মানে 

প্রথমত ;মাতা,পিতা ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের কেন্দ্র করে হতে পারে।

দ্বিতীয়ত: একসঙ্গে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজন সমবায়ে একটি প্রসারিত পরিবারও হতে পারে। 

তৃতীয় ধরনের পরিবার হলো একটি বৃহৎ সংসার, যেখানে অন্যান্য আত্মীয় ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কিংবা তাদের ছাড়া অনাত্মীয়রাও যুক্ত হয়। 


8.নমস্কার :- এটি নমন এবং কার শব্দ এই  দুই শব্দের  মিলনে  তৈরি হয়েছে। নমন এর অর্থ -অহংকার রহিত/বর্জিত সম্মান। নমস্কার ,বন্ধু ,বান্ধব ,বয়সে বড় ,পরিচিত ,অপরিচিত  সবাইকে করা যায়। 

9.প্রণাম:- প্রণাম শব্দটির উৎপত্তি  প্রণত শব্দ থেকে , যার অর্থ বিনীত বা বিনম্র হয়ে  মাথা নিচু করা। প্রণাম সাধারণত  - দেবী ,দেবতা ,মাতা ,পিতা,বাড়ীর বড়দের, আত্মীয় ,আত্মীয়া এবং গুরু, আচার্য,পুরোহিত,ব্রহ্ম জ্ঞানী,(ব্রাহ্মণ)পূজারী, এদের করা হয়।

10.আশীর্বাদ;-যে শুভকামনার দ্বারা আয়ু ,বল (শক্তি) বিদ্যা ও বুদ্ধি,  বৃদ্ধি হয় সেটি হলো আশীর্বাদ।

 প্রণাম ও আশীর্বাদ।

কেউ প্রণাম করলে  তাকে আশীর্বাদ করতে হয়। তাই যাঁরা প্রণাম গ্রহণ করেন ,তাদের ভাবতে হয়,আশীর্বাদ দেবার  শক্তি আছে কি তাদের ভিতরে ? যদি না থাকে তাহলে প্রণাম ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।কেউ প্রণাম করলে যদি বাধ্য হয়ে প্রণাম নিতে হয় বা প্রণাম ফেরানোর উপায় না থাকে,সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলে সেই শ্রদ্ধার অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয় সর্বশক্তিমানের শ্রী চরণে,এবং সর্বশক্তিমানের কাছে চাইতে হয় ,যিনি প্রণাম করছেন ,তার জন্য  আশীর্বাদ।

11.পরিশ্রম;- কোন (কঠিন, বড় বা দুঃসাধ্য) কাজ করার জন্য সঠিক ও বিশেষভাবে (সঠিক দিশা নির্দেশে ) এবং মন দিয়ে, মানসিক অথবা শারীরিক শ্রম করা  কে পরিশ্রম বলাহয়।

 12.অপমান - অপমান' শব্দের 'অপ' উপসর্গটি বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত। আমরা জানি ,মান শব্দের অর্থ  সম্মান/ সমাদর (মানীর মান)/ মর্যাদা,সেইজন্য  অপমান' শব্দের অর্থ হবে অসম্মান ,অমর্যাদা ইত্যাদি । সাধারণ ভাবে যখন  কারও মনকে  অভদ্র ভাষা ,ব্যবহার ,ভঙ্গিমা ইত্যাদির  দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আঘাত  করা হয় ,তখন  এটি  অপমানের  শ্রেণীতে আসে। অনেক সময় আমাদের  অহংকারের (আমিত্ব) ফলে আমরা নিজেই  ভাবী  আমাকে  অপমান করা হয়েছে ,এটি  কিন্তু ঠিক নয় ।

13.আমিত্ব

আমিত্ব’ আর ‘পশুত্ব’ একে অন্যের বন্ধু । মানুষের মধ্যে আমিত্ব  বাসা বাঁধলেই পশুত্ব শিকড় গাড়ে। যার ফলে  মানবতাবোধ পালায় এবং পাশবিকতা তার ডালপালা গজায় । আমিই ঠিক, আর বাকি সবাই ভুল। ওঁরা  কিচ্ছু জানেনা, আমিই জানি সব। আমিই শুধু খাব,অন্য কাউকে খেতে দেব না,আমিই শুধু বলব, আর কাউকে বলতে দেব না, আমার কথার বাইরে ভিন্নমত আমি সহ্য করব না ,আমিই সবচেয়ে বড় ,আমার চেয়ে কেউ বড় নয়, এটাই  তো আমিত্ব আর এই আমিত্বই সর্বনাশা । তাই এই সর্বনাশা-আমিত্ব থেকে দূরে  থাকাই ভালো।

14.আত্মীয় । যাঁদের সাথে আত্মার সম্পর্ক তারা হলেন  আত্মীয় অর্থাৎ যাঁদের বিদেহী আত্মা পিন্ড গ্রহণের এবং পিন্ড দানের অধিকারী তাঁরা হলেন তারা হলেন আত্মীয়। উদাহরণ মেসো ,মাসি ,পিসা ,পিসি ,মামা, মামী ,মামা দাদু ,মামা দিদি,শ্বশুর-শাশুড়ি ইত্যাদি। গয়ায় মাতা ,পিতা,পুত্র ,কন্যা ইত্যাদির অন্তিম পিন্ড দানের সময় সমস্ত মৃত আত্মীয়দের ও বট বৃক্ষ ইত্যাদি এবং  ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণু কে  পিন্ড দান করতে হয়।

15.সমালোচনা ও সমালোচক

সমালোচনা কথার  অর্থ  দোষগুণের সম্যক্‌ আলোচনা বা বিচার।

যিনি সমালোচনা করেন তিনি হলেন সমালোচক।

 যদি কোন ব্যক্তি স্রেফ নিন্দা করেন অথবা দোষ  ধরেন,কিন্তু প্রশংসা করেন না, তিনি স্রেফ নিন্দুক অথবা শত্রু অথবা পাজী/দুষ্টাত্মা । এই সমস্ত লোকের কথায়  কান না দেওয়া এবং দূরে থাকাই  শ্রেয়।  

16.বন্ধু :-মনে মনে বা প্রকাশ্যে ভালোবাসে ,আস্থা  রাখে ,মনে মনে বন্ধন আছে  এমন ব্যক্তি।

17.শত্রু :-মনে মনে বা প্রকাশ্যে ঘৃণা করে কিংবা ক্ষতিসাধন করে এমন ব্যক্তি।

18.পুত্র মানে -যে (পুলিঙ্গ/পুরুষ)পুত (অগ্নি পুরানে বর্ণিত-নরক)নামক নরক থেকে রক্ষা করে। 

19.পুত্রী মানে-যে (স্ত্রী লিঙ্গ/ কন্যা )পুত (অগ্নি পুরানে বর্ণিত-নরক)নামক নরক থেকে রক্ষা করে।

সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক। 🙏

হে প্রভু আমাকে শুধু জ্ঞান দাও,ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏  



লেখক পরিচিতি:- প্রবীর  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।
Comment of Author:-This article has been penned under the divine inspiration of Lord Jagannath. If anybody or any organization doesn't agree with any content of this article, he or they may mention it in the comments with documentary evidence and it will be corrected. Any comments in this regard without documentary evidence and source of Information will be treated as mala fide and will be deleted.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।

শ্রী শ্রী মা ষষ্ঠীদেবীর পূজা এবং তাঁর ধ্যান মন্ত্র,প্রণাম মন্ত্র ও ব্রত পালন ।

কলি যুগের অবসান/সমাপ্তি ও কল্কি অবতার - সত্য যুগের পুনঃপ্রতিষ্ঠা- সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ।