দীপাবলি ও ধনত্রয়োদশী বা ধনতেরাস ।
দীপাবলি ও ধনত্রয়োদশী বা ধনতেরাস ।
দীপাবলি" শব্দটির(নামটির) অর্থ " দীপের সমষ্টি। এই দিন সনাতন ধর্মের লোকেরা (হিন্দুরা) তাঁদের ঘরের বাহিরে ও ভিতরে সারি সারি দীপ জ্বালিয়ে তাঁদের ঘর ও বাহির আলোকিত করেন , কারণ জনশ্রুতি অনুসারে এই দিনে ভগবান রাম, রাবণকে পরাজিত করার পরে এবং তাঁর নির্বাসনের ১৪ বছর পূর্ণ করার পরে তাঁর রাজ্য অযোধ্যাতে ফিরে আসেন। অযোধ্যার লোকেরা তাদের প্রিয় রাজার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে উপলক্ষ্য করে তাঁদের ঘর ,নগর সাজিয়ে মাটির প্রদীপ দিয়ে আলোকিত করে এই দিনটি উদযাপন করেছিলেন।
২.সমুদ্র মন্থনের সময় , দেবী লক্ষ্মী ক্ষীর সাগর থেকে আদি লক্ষ্মীরূপে উত্থিত হয়েছিলেন এবং ভগবান বিষ্ণু তাঁকে এই দিনে তাঁর স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। সেইজন্য এই শুভ দিনে, দেবী আদি লক্ষ্মী, শ্রী হরি বিষ্ণুর এবং ভগবান গনেশের পূজা করা হয়।
৩. ভগবান কৃষ্ণ নরকাসুরের শিরশ্ছেদ করার পর, লোকেরা তাঁদের ঘর ,নগর সাজিয়ে মাটির প্রদীপ দিয়ে আলোকিত করে এই দিনটি উদযাপন করেছিলেন ।
দীপাবলি/দিওয়ালি: পূজার আচার অনুষ্ঠান;-
উপরিউক্ত কারনে সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে দীপাবলি একটি অতন্ত্য শুভ দিন,আনন্দের দিন এবং উৎসবের দিন। এই শুভ দিনে, দেবী আদি লক্ষ্মী, ভগবান গণেশ এবং শ্রী হরি নারায়ণের পূজা করা হয়।
দীপাবলি পূজা করার পূর্বে কি কি করবেন ?
১.লক্ষ্মী পূজার আগে পবিত্রতার জন্য বাড়িটি পরিষ্কার করুন এবং পবিত্র গঙ্গা জল ছিটিয়ে দিন। মোমবাতি, মাটির প্রদীপ এবং রঙ্গোলির সাহায্যে ঘরটি সাজান।
২.একটি পূজা বেদী তৈরি করুন। এটির উপরে একটি লাল কাপড় রাখুন এবং এটিতে মা লক্ষ্মী এবং গনেশের মূর্তি রাখুন। উভয়ের একটি ছবি একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। বেদীর কাছে জলে ভরা ঘট্ (কলশ )রাখুন। কেবলমাত্র মা লক্ষ্মীর প্রতিমা বা মূর্তি বা ঘটে ও পূজা করা যেতে পারে।
৩.দেবী লক্ষ্মী ও ভগবান গণেশের উপরে হলুদ ও কুমকুমের তিলক লাগান। একটি দিয়া (মাটির প্রদীপ) জ্বালান, এবং লক্ষ্মী নারায়ণ, গণেশ এবং সমস্ত ভগবান কে উৎসর্গ করুন।
৪.লক্ষ্মী পূজার পরে আচার অনুসারে দেবী সরস্বতী, দেবী কালী, ভগবান বিষ্ণু এবং ভগবান কুবেরের উপাসনা করুন ।
৫.পূজা অনুষ্ঠানগুলি পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুদের সাথে একসাথে করা উচিত।
৬.লক্ষ্মীপূজা করার পর বই, ব্যবসায় বা অন্যান্য সম্পদ সম্পর্কিত সরঞ্জামগুলিতে শ্রদ্ধা অর্পণ করুন ।
৭.পূজা শেষ হওয়ার পরে প্রসাদ ও মিষ্টি বিতরণ।
দীপাবলি,যমদ্বিতীয়া ধনত্রয়োদশী তে করণীয়।
১. দীপাবলি,যমদ্বিতীয়া ধনত্রয়োদশী তে যখনই দীপ জ্বালাবেন ,তখন একটি দীপ আমাদের পূর্বপুরুষ জন্য উৎসর্গ করতে হয় কারণ এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের আত্মার স্বর্গে উত্তরণের জন্য লাভ দায়ক হয় ও তারা শান্তিতে সেখানে থাকতে পারেন। যমদ্বিতীয়ার দিনে যমের উদ্যেশে একটি প্রদীপ অবশ্যই প্রজ্বলিত করুন ,এতে অকাল মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
২.সন্ধ্যের সময়ই প্রদীপ জ্বালানো উচিত ।
ধনতেরাস বা ধনত্রয়োদশী ।
কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ( পূর্ণিমন্ত ) ত্রয়োদশী তিথিতে সমুদ্র মন্থনের সময় ভগবান ধন্বন্তরি অমৃতের কলস নিয়ে আবির্ভূত হন , তাই এই তারিখটি ধনতেরাস বা ধনত্রয়োদশী নামে পরিচিত ।
ধন্বন্তরী যখন আবির্ভূত হলেন, তখন তাঁর হাতে অমৃতে পূর্ণ একটি কলস ছিল । যেহেতু ভগবান ধন্বন্তরী একটি কলস নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন, তাই এই উপলক্ষে পাত্র কেনার প্রথা রয়েছে, ধনতেরাসের দিনে সোনা কেনা অত্যন্ত মূল্যবান বলা হয়, কারণ এটা বিশ্বাস করা হয় যে সোনা ভগবান সূর্য নারায়ণের প্রতীক, যেমন ভগবান সূর্যনারায়ণ আমাদের জীবনের অন্ধকার দূর করে আলো ছড়িয়ে দেন, তেমনি ধন তেরাসের দিনে সোনা কিনলে সেই সোনা, জীবন চলার পথের অন্ধকার দূর করে এবং আমাদের জীবনে আলো ছড়ায়। ধনতেরাসের দিনে রৌপ্য কেনাকেও খুব শুভ বলা হয়, কারণ এটা বিশ্বাস করা হয় যে রৌপ্য চন্দ্রের প্রতীক, চাঁদ যেমন আমাদের শীতলতা দেয়, তৃপ্তি দেয়, তেমনি ধনতেরাসের দিনে রূপা কেনা আমাদের জীবনে শীতলতা এবং তৃপ্তি নিয়ে আসে। । ধনতেরাসের সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে এবং উঠানে প্রদীপ জ্বালানোর প্রথাও রয়েছে। ভারত সরকার ধনতেরাসকে জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয় হোক। 🙏নমস্কার।