কলিযুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং কলিযুগের পতন -
কলিযুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ: কলিযুগের পতন -
☯ এই যুগে মানুষ মেশিনের সাহায্যে নতুন নিত্য আবিষ্কার করবে।নতুন ইতিহাস তৈরি করবে,অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করবে। অমরত্বের সন্ধানে মানুষ অমরত্বের কাছাকাছি পৌঁছাবো। মানুষ মেশিনের সাহায্যে গ্রহ এবং মহাকাশে গ্যালাক্সির মধ্যে ভ্রমণ করবে,অনেক অজানাকে জানবে। মানুষ এবং মেশিন খুব বেশি শক্তিশালী হবে। কলি যুগে চতুরাশ্রম প্রথা টি সম্পূর্ণ ভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ,যার ফলে নানা প্রকার সামাজিক ব্যাধি দেখা যাবে।
কলিযুগের মানব সম্পর্কে ঋষি মার্কণ্ডেয়র বক্তব্য :-
☯কলিযুগের মানুষের প্রধান গুন হবে - লোভ এবং ক্রোধ ।
☯কলিযুগে মানুষ খোলাখুলিভাবে একে অপরকে ঘৃণা প্রদর্শন করবে। ধর্মের জ্ঞানহীনতা(অজ্ঞতা) ঘটবে।
☯কলিযুগে মানুষ মানুষকে সামান্য ঝগড়া,বকাবকি ও বিবাদের জন্যে খুন করবে এবং এর জন্য অপরাধবোধ হবে না।
☯কলিযুগে লালসা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হবে এবং যৌন সংসর্গকে জীবনের কেন্দ্রীয় প্রয়োজন হিসাবে দেখা হবে।
☯কলিযুগে পাপ দ্রুত বৃদ্ধি হবে । মানুষ মাদকদ্রব্য ও ওষুধের আসক্ত হয়ে উঠবে।
☯ ব্রাহ্মণরা জ্ঞানবান্,বিচক্ষণ,হতে পারবেন না ,তারা সম্মান,শ্রদ্ধা হারাবেন, ক্ষত্রিয়রা সাহসী হবেন না,ব্যবসায়ী বনিকরা ন্যায়সঙ্গত লেনদেন ভুলে,অসাধু হবেন ।
কলিযুগের শাসকের বৈশিষ্ট্যসমূহ:-
ঋষি মার্কণ্ডেয়র মতে কলিযুগের শাসকরা ন্যায়বিরূদ্ধ,নিয়মবিরূদ্ধ,নিয়মশৃঙ্খলাহীন এবং অযৌক্তিক হয়ে উঠবেন এবং তারা অন্যায়ভাবে কর আদায় করবেন। শাসকেরা তাদের প্রজাদের রক্ষা করার দায়িত্ব এবং আধ্যাত্মিকতাকে বজায় রাখার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন না এছাড়া তাদের মধ্যে অনেকেই সৎ, নিষ্ঠাবান ও কর্তব্য পরায়ণ হবেন না। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোক নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যক্তি, সমাজ এবং বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবেন
কলিযুগে দিব্য জ্ঞানীরা দূর্লভ হবেন। কলিযুগের বেশির ভাগ চিকিৎসকদের সেবা ভাব কম অর্থ উপার্জন ভাব প্রবল হবে।
☯কলি যুগে শিক্ষা ব্যবসাতে পরিণত হবে। ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে হিংসা ,ঈর্ষা ও দ্বেষযুক্ত অসুস্থ প্রতিযোগিতা হবে।
☯কলিযুগের মানুষেরা বেদ অধ্যয়ন করবেন না। মানুষ অশাস্ত্রীয় তপস্যা করবেন ।
☯কলিযুগে মাতা পিতা এবং সন্তান সন্ততির মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিম্নকোটির হবে। কলি যুগের অন্তিম কালে পুত্র এবং কন্যা পিতৃ এবং মাতৃ হত্যা এবং পিতা এবং মাতা পুত্র এবং কন্যাকে হত্যা করতে কুন্ঠিত হবেন না ।কলিকালে মানুষ,নিজ ভাই ও ভগিনীর সাথে অভিঘাতী,প্রতিদ্বন্দ্বী,বিরোধী ও শত্রু ভাব পোষন করবেন। কলি যুগের অন্তিম কালে পুত্র ,কন্যা কামান্ধ হয়ে পিতা ,মাতার অবাধ্য হবেন ও তাদের পরামর্শ ছাড়াই বিবাহ করবেন এবং পরে অবহেলা করবেন ও প্রয়োজনে হত্যা করতেও কুন্ঠিত হবেন না। কলি যুগের অন্তিম কালে পিতা ,মাতাদের ও অন্তঃকরণ হবে অতিশয় অপবিত্র তারা পুত্রবধূ দের আপন করতে পারবেন না ,পুত্রবধূ দের সহ্য করতে না পেরে তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করবেন এবং আত্মহত্যার জন্য প্ররোচিত করবেন অথবা পুত্রবধূ কে হত্যা করবেন।
☯কলিযুগে স্ত্রীলোকদের অনেকেই নিজেকে অত্যন্ত সুন্দরী বলে মনে করবেন ও বিলাস উপকরণে অতিশয় অনুরাগিণী হবেন। এছাড়া অনেকেই স্বেচ্ছাচারিণী,সর্বভোজী ও বহু ভোজনশীল হবেন ,পতিকে অবহেলা করবেন এবং যার তার সাথে বন্ধুত্ব করবেন, নিজের দেহ পোষণে ব্যস্ত থাকবেন এবং নিরন্তর কঠোর ও মিথ্যা বাক্য বলবেন।
☯কলিযুগের পুরুষগণ মদ,মাংস,মহিলা,মায়া এবং টাকা পয়সা-ধনসম্পদের প্রতি খুব বেশী আকৃষ্ট হবেন।কলিযুগের পুরুষ ও নারীগণ অঙ্গপ্রদর্শন করবেন । অবিবাহিত পুরুষ ও নারীগণ একসাথে বসবাস করবেন ।
☯ কলিযুগের মানুষ একটি দেশ থেকে কাজের এবং খাদ্য সন্ধানে জন্য অন্য দেশে চলে যাবেন।
☯কলি যুগের বেশির ভাগ মানুষ নির্দয়ী হবেন প্রচুর ধন সম্পত্তি থাকার পরেও এরা ক্ষুদার্ত কে অন্নদান ,বস্ত্রহীন কে বস্ত্রদান করবেন না।
☯.কলি যুগের বেশির ভাগ মানুষের ইচ্ছা (আকাঙ্খা) হবে ছলে বলে কৌশলে ধন সম্পত্তি অর্জন ও অন্যায় ও অবিচার,যৌনাচার ও ব্যাভিচার। ধর্ম,পাপ ,পুন্য এগুলি তাদের কাছে হবে অর্থ হীন ও মিথ্যা,ঈশ্বর তাদের কাছে হবেন শ্রেফ এক কল্পনা ও কাহিনী মাত্র।
☯কলি যুগের অন্তিম কালে কলিযুগের মানুষ মৃত দেহ নিয়ে শোক প্রকাশের জায়গায় আনন্দ ফুর্তি করবেন।
☯কলিযুগে চৌর্যবৃত্তি,ঠগবৃত্তি প্রবল আকার ধারণ করবে এবং রক্ষকরাই ভক্ষক হবেন।
☯ কলিযুগে মানুষের হিংস্রতা এত বেশি প্রকট আকার ধারণ করবে, যার জন্য মানুষ আর পশুতে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। কলি যুগে মানুষ পশু ,পাখির উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার ও দুর্ব্যবহার করবে ,প্রকৃতি কে দোহন করবে। মানুষের অত্যাচারে যখন পশু পাখি ত্রাহিমাম করবে তখন কলিযুগের পতন হবে।
কলিযুগের পতনের গ্রহ স্থিতি।
শ্রীমদ ভাগবত মহাপুরাণে বলা হয়েছে যখন "যদা চন্দ্রশ্চ সূর্যশ্চ তথা তিষ্যবৃহস্পতী। একরাশৌ সমেষ্যন্তি ভবিষ্যতি তদা কৃতম্।।" অর্থাৎ যখন যখন চাঁদ, সূর্য এবং বৃহস্পতি এক রাশিতে অবস্থান করবে তখন সত্য যুগের যুগ সন্ধ্যা শুরু হবে।
শ্রী জগন্নাথ দাস ভবিষ্য মালিকায় লিখেছেন যে অনন্ত যুগে মানুষ কে কল্কি মন্ত্রের জপ করতে হবে।