মানুষ কি ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে ? শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক কি? আসল/প্রকৃত শিক্ষিত মানুষ চেনার সহজ উপায়।




মাতেব রক্ষতি  পিতেব হিতে নিযুঙক্তে, কান্তেব চাভি রময়ন্তপনীয় খেদম।
লক্ষ্মী  তনোতি বিতনোতি চ  দিক্ষু কীর্তিম, কিং কিং ন সাধয়তি কল্পলতেব বিদ্যা ।।

এর বাংলা অর্থঃ-বিদ্যা মায়ের মতো রক্ষা করে, পিতার মতো উপকার করে, স্ত্রীর মতো ক্লান্তি দূর করে, মনকে প্রসন্ন করে, লক্ষ্মীকে (ধন) প্রসারিত করে, চারিদিকে খ্যাতি ছড়িয়ে দেয় , কল্পলতার মতো অসম্ভবকে সম্ভব করে। 
এই জন্য বলা হয়-জ্ঞানং পরমং বলম 

শিক্ষা এবং বিদ্যা ও বুদ্ধি।

শিক্ষা:-সহজ সরল ভাষায় এবং এক কথায় ,কোনো কিছু শিখা বা  জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনকেই শিক্ষা বলা হয়। 

বুদ্ধি:-সংক্ষেপে এবং সহজ সরল ভাষায় ,  জ্ঞান অর্জন এবং জ্ঞান কে প্রয়োগ কারণ ক্ষমতা কে বুদ্ধি বলা হয়।
বিদ্যা :-বিদ্যার  অর্থ হলো- জ্ঞান।
অধ্যয়ন বা শিক্ষার দ্বারা অর্জিত জ্ঞানকে  বিদ্যা বলা হয় ।

মানুষ  কি ভাবে শিক্ষা গ্রহণ করে ।






মানুষ অধ্যয়নের থেকে (পড়ার থেকে)অভ্যাস (প্র্যাকটিস) করে বেশি শিখে তবে ভুল থেকে মানুষ সবচেয়ে বেশি ও ভালোভাবে শিখে, কিন্তু সে ভুলটি যেন না হয় জীবনের শেষ ভুল। ভুল থেকে শিখতে হলে ভুলের কারণ অন্বেষণ করা/খুঁজা দরকার। তা না হলে ভুল থেকে শেখার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।

 শিক্ষা ও বুদ্ধির সম্পর্ক।

শিক্ষা যেমন শিক্ষার্থীকে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে ও পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে, বুদ্ধি  ঠিক  সেই  রকম ব্যক্তিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ করতে, যুক্তিপূর্ণভাবে চিন্তা করতে এবং সার্থকভাবে পরিবেশের সঙ্গে  অভিযােজন (ইংরেজি:Adaptation) করতে সাহায্য করে। শিক্ষার সঙ্গে বুদ্ধির একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কেননা ব্যক্তির বুদ্ধি না থাকলে শিক্ষা সার্থক হয় না।আজকালকার সময়ে  শিক্ষা দুই প্রকার :- প্রকৃত শিক্ষা এবং ডিগ্রি ভিত্তিক শিক্ষা ।

প্রকৃত শিক্ষা এবং ডিগ্রি ভিত্তিক শিক্ষা ।

আজকাল শিক্ষা বলতে আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা প্রদত্ত ডিগ্রি এবং ডিপ্লোমা  ভিত্তিক শিক্ষাকেই বুঝি। আজকালকার দিনে  এবং  ডিগ্রি /ডিপ্লোমা  ভিত্তিক শিক্ষা এতই প্রবল আকার ধারণ করেছে যে  প্রকৃত শিক্ষা তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলতে চলেছে।    এমন কি মানুষ ভুলতে বসেছে   প্রকৃত শিক্ষা কি ? 

প্রকৃত শিক্ষা:-

যে শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা প্রদত্ত ডিগ্রি ভিত্তিক পুঁথিগত শিক্ষার  সাথে মানুষ কে কলা ও কৌশল  শিখিয়ে স্বনির্ভর করবে এবং মানুষকে মানবতা শিখাবে, বড়দের সম্মান করতে শিখাবে,ছোটদের আদর করতে শিখাবে,এবং মানুষ কে কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ(অহংকার) ও মাৎসর্য্য (হিংসা) থেকে মুক্ত (রইতে)হতে শিখাবে সেই শিক্ষাই  প্রকৃত শিক্ষা। 

উদাহরণ হিসেবে একজন সার্জেনের (শল্যচিকিৎসক) কথা ধরা যাক। একজন সার্জেনকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেশ কয়েক বছর পড়াশুনা করতে হয়,ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এই দীর্ঘ পড়াশুনা ও প্রশিক্ষণ, অস্ত্রোপচারের কাজে তাঁকে দক্ষ করে তোলে।  সার্জেনের ওপর রোগীর জীবন-মৃত্যু নির্ভর করে, দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ ডিগ্রি এবং ডিপ্লোমার মাধ্যমে তাঁর যোগ্যতার প্রমান পত্র দেন,যাতে মানুষ তার উপরে ভরসা করতে পারে । কিন্তু তিনি প্রকৃত শিক্ষায় কতটা শিক্ষিত হয়েছেন, ডিগ্রি এবং ডিপ্লোমা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারে না।

আজকালকার  পত্র, পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানতে পারা যায়, অনেক মানুষ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার  করে ,ভ্রষ্টাচার ও চুরি করে কোটি কোটি টাকার  বাড়ি,গাড়ি অর্থ সম্পদ  করেছেন। তাঁরা সবাই কিন্তু ডিগ্রি অথবা  ডিপ্লোমা প্রাপ্ত ব্যক্তি, কিন্তু চুরি করে বিশাল সম্পদের অধিকারী হতে তাঁদের এক বিন্দু দ্বিধাবোধ হয় নি এবং তাদের অন্তর আত্মা ও জাগেনি। তার প্রধান কারণ  এ ধরনের ডিগ্রি প্রাপ্তরা সত্যিকার অর্থে শিক্ষালাভ করতে পারেননি। এই কারণেই আজ- প্রকৃত ( আসল/খাঁটি) শিক্ষিত  মানুষ চেনা  খুবই মুশকিল। 

★আসল/প্রকৃত শিক্ষিত  মানুষ চেনার সহজ উপায়।

এঁরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি দ্বারা প্রদত্ত ডিগ্রি ভিত্তিক পুঁথিগত শিক্ষা অর্জন করার সাথে  কলা ও কৌশল বিদ্যায় পারদর্শী হন। এঁদের মধ্যে মানবতাবোধ  দেখতে পাওয়া যায়,এঁরা বড়দের সম্মান  করেন, ছোটদের আদর করেন এবং এঁরা  কাম-ক্রোধ-লোভ-মোহ-মদ(অহংকার) ও মাৎসর্য্য (হিংসা) ইত্যাদির উপর নিয়ন্ত্রণ  রাখতে পারেন ।

.এঁরা বড় হতে চান  তবে কাউকে ছোট করে নয়, জীবনে সুখী হতে চান  তবে কাউকে দুঃখী করে নয়,এরা জীবনে অর্থ উপার্জন করতে চান  তবে কাউকে প্রতারণা করে ,লুট করে অথবা চুরি করে নয়।

. এঁরা মানবতাবাদী দর্শন ও  সহিষ্ণুতার প্রতীক হন।

.গাছে ফল ধরলে গাছ যেমন ঝুঁকে যায় ,তেমনি এঁরা তাঁর  (শিক্ষা) জ্ঞান ও বুদ্ধির ভরে ঝুঁকে যান অর্থাৎ এঁরা বিনম্র ও অহংকারহীন হন।

 এঁরা ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা হন। অর্থাৎ ভবিষতে যে যে ঘটনা ঘটবে/ঘটতে পারে  তার অনেকখানি পূর্বানুমান এঁরা করতে পারেন এবং সেই হিসাবে কাজ করেন। 

. এঁরা অন্যায় ও অবিচার করেন না। 

. এঁরা কোনো জিনিস না জানলে সেটি জানার জন্য চেষ্টা করেন,অর্থাৎ জ্ঞান পিপাসু  হন। 

.এঁরা উদার প্রকৃতির হন এবং নিজের ভুল স্বীকার  করেন। 

.এঁরা অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও বিনয়ী   হন।

.এঁরা আফসোস করে সময় নষ্ট করেন না।

.এঁরা পরিবর্তনকে ভয় পান না। এঁরা অকাজে মাথা গলান না।

.এঁরা একই ভুল বারবার করেন না এবং ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন ।

.এঁরা তথ্য এবং যুক্তির উপর ভিত্তি করে কথা বলেন,অযথা তর্ক /বাদানুবাদ কে এড়িয়ে চলেন। 

এঁরা সবসময় কোনো বিষয় সম্পর্কে গভীর ভাবে ভাবতে পছন্দ করেন।


জীবনে সুখ, শান্তি, মহৎ কার্য সম্পাদন, সৃজনশীলতা  এবং সমাজ ,সংসার ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে  মানুষ কে সর্বদা প্রকৃত শিক্ষিত,বুদ্ধিমান ও প্রজ্ঞাবান মানুষের সাথে,সংস্পর্শে ও পাশে থাকতে হয় কারণ-জ্ঞানং পরমং বলম । জ্ঞান-মায়ের মতো আমাদের রক্ষা করে, পিতার মতো উপকার করে, স্ত্রীর মতো ক্লান্তি দূর করে, মনকে প্রসন্ন করে।  জ্ঞান,অভাব ,অনটন দূর করে ,ঘরে ধন দৌলত নিয়ে আসে ,জ্ঞান খ্যাতি ছড়ায় এবং  কল্পলতার মতো অসম্ভবকে সম্ভব করে।

 সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক। 🙏




প্রবীর  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।

শ্রী শ্রী মা ষষ্ঠীদেবীর পূজা এবং তাঁর ধ্যান মন্ত্র,প্রণাম মন্ত্র ও ব্রত পালন ।

কলি যুগের অবসান/সমাপ্তি ও কল্কি অবতার - সত্য যুগের পুনঃপ্রতিষ্ঠা- সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ।