দোল উৎসব,চাঁচর উৎসব এবং হোলি উৎসব।
দোলপূর্ণিমা একটি হিন্দু উত্সব।রাধাকৃষ্ণের দোলনায় দোলা থেকেই ‘দোল’ কথাটির উৎপত্তি। ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোল উত্সব পালন করা হয়। দোল উত্সবের অনুষঙ্গে ফাল্গুনী পূর্ণিমাকে দোলপূর্ণিমা বলা হয়। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, দোল পূর্ণিমায় বৃন্দাবনের নন্দন কাননে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার সখী দেবী রাধিকা দোলনায় দোলেছিলেন এবং দেবী রাধিকা ও গোপী-গণের সাথে রঙয়ের খেলায় মেতেছিলেন। রাধা-কৃষ্ণ দোল উত্সব করতেন পুষ্পরেণুর মাধ্যমে। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণু 'আবির' নামের লাল রঙের এক ধরনের পাউডারে রূপান্তরিত হয়েছে । দ্বাপর যুগ থেকে শ্রীকৃষ্ণের এ দোলযাত্রা বা দোল উত্সব চলে আসছে।
রাধা ও কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরের রঙে স্নাত করে দোলায় চড়িয়ে কীর্তনগান সহকারে শোভাযাত্রা বার করে ভক্তেরা আবির ও রং নিয়ে পরস্পর রঙের খেলায় মেতে উঠেন যে উৎসবে সেই উৎসবের নাম দোল উৎসব বা দোলযাত্রা। এই উৎসবের অপর নাম বসন্তোৎসব।
চাঁচর উৎসব।
দোলের আগের দিন রাত্রিতে রাধা কৃষ্ণ কে চৌদলের উপর চাপিয়ে কোথাও কোথাও আবার কৃষ্ণ এবং বলরাম কে চৌদলের উপর চাপিয়ে ভক্তগনের দ্বারা নাম সংকীর্তন করে ভগবান কে নগর /গ্রাম ভ্রমণ করানোর উৎসব কে চাঁচর উৎসব বলা হয়। এই সময় ভগবান প্রত্যেক ভক্তের ঘরের সামনে উপস্থিত হন এবং এবং ভগবান কে নৈবিদ্য অর্পণ করা হয়।
বাংলার অনেক জায়গায় গৃহস্থের বাড়ীর আঙিনার সামনে অথবা গ্রামের পাড়ার মাঝখানে কোন এক জায়গায় উদ্ভিজ্জ দাহ্যবস্তু (যেমন: বাঁশ, কাঠ, শুকনো লতা/পাতা ইত্যাদি)দ্বারা নির্মিত পিরামিড আকারের একটি ঘর বা কুমা রাখা হয়। এরপর পূজার্চনা করে সেটিতে অগ্নি প্রদান করা হয়। প্রজ্জ্বলিত 'মেড়া'টির চারপাশে বিগ্রহমূর্তিটিকে শোভাযাত্রা সহকারে ঘোরানোও হয়।
হোলি উত্সব:-
হোলি প্রসঙ্গে নানা পৌরানিক উপাখ্যান ও লোককথা রয়েছে। তার মধ্যে হোলিকাদহন ও রং খেলার কাহিনি বিশেষভাবে প্রচলিত।
বিষ্ণু পুরানে হোলিকা ও প্রহ্লাদ উপাখ্যান বর্ণিত আছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে,দৈত্যদের রাজা হিরণ্যকশিপুর বোন ছিলেন সিঙ্গিকা /সিংহিকা, যে ছিলেন কামরূপের রাজা বিপরীচিত্রীর পত্নী । ব্রহ্মার বরে হিরণ্যকশিপু নিজেকে অপরাজেয় ভাবতে শুরু করেন। হিরণ্যকশিপু দেবতাদের মানতেন না, কিন্তু তার পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত। নিজ পুত্রের ব্যবহারে ক্ষুন্ন হয়ে হিরণ্যকশিপু প্রহ্লাদকে মারার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ,এই সময় হিরণ্যকশিপুর, বোন সিংহিকা দাদার সাথে ষড়যন্ত্র করে প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্যে দোল উত্সবের/ বসন্ত উৎসবের (অসুররা এই উৎসব কে মদিরা উৎসব বলতেন কারণ এই দিনে তারা রং খেলার সাথে মদ্য পান করিতেন)সন্ধ্যায় প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনের চিতায় প্রবেশ করেন। সিংহিকার বৈশিষ্ট্য ছিল, অগ্নি দেবের বরে আগুনে তাঁর শরীর পুড়ত না, কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর কৃপায় প্রহ্লাদ অক্ষত থাকেন, উল্টে সিংহিকা আগুনে পুড়ে মারা যান এবং তার শরীর পুড়ে পাস হয়ে যায় ,যার নাম হয় হোলি /হোলিকা। এই কাহিনি অবলম্বন করে হোলির আগের দিন হোলিকাদহন প্রথা চালু রয়েছে। এই অন্যায় শক্তির ধ্বংসের আনন্দ মহাআনন্দে রঙয়ের উত্সবে পরিণত হয়। এই থেকেই হোলি কথাটির উৎপত্তি এবং রং নিয়ে আনন্দ করার উৎসব টির নাম হয়ে যায় হোলি উত্সব। হিন্দু ধর্মালম্বীদের মতে এই ঘটনাটি পূর্বের ভারতবর্ষ, বর্তমান পাকিস্তানের শহর মুলতানে ঘটেছিল ।সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয় হোক। 🙏হে প্রভু আমাকে শুধু জ্ঞান দাও , ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏
হোলি প্রসঙ্গে নানা পৌরানিক উপাখ্যান ও লোককথা রয়েছে। তার মধ্যে হোলিকাদহন ও রং খেলার কাহিনি বিশেষভাবে প্রচলিত।
হোলিকা দহন |
*দেখুন #হোলির- ভিডিও #
....
লেখক পরিচিতি:- প্রবীর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। প্রবীরের বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।
Comment of Author:-This article has been penned under the divine inspiration of Lord Jagannath. If anybody or any organization doesn't agree with any content of this article, he or they may mention it in the comments with documentary evidence and it will be corrected. Any comments in this regard without documentary evidence and source of Information will be treated as mala fide and will be deleted.