শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীকৃষ্ণ লীলা এবং প্রভু জগন্নাথ।

হে প্রভু ,হে শ্রী হরি, হে নারায়ণ ,আপনিই অনন্ত ,আপনিই এই সৃষ্টির  স্রষ্টা এবং আপনি ই আদি এবং আপনিই অন্ত। এই লেখাটিতে আপনার কথা বর্ণনা করিলাম,ভুল ত্রুটি মার্জনা করিবেন। আপনার শ্রী চরণে অনন্ত কোটি বার প্রণাম। 🙏


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ,অর্জুনকে মহাভারতের যুদ্ধে উপদেশ দেবার সময় বলেছিলেন।
"যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত;
অভ্যুত্থানম
ধর্মস্য, তদাত্মানং সৃজাম্যহম্।।
পরিত্রাণায় সাধুনাং, বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্,
ধর্ম সংস্থাপনায় সম্ভবামি যুগে যুগে!!"
কুরুক্ষেত্রে-ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিরাট রূপ।
শ্রী মহা বিষ্ণুর ষোড়শ (১৬) নাম স্তোত্রম। 

যার বাংলা অর্থ-যদা যদা  (যখন যখন),-হি ( ইন্দ্রিয়গোচর/বাস্তব/),- ধর্মস্য (ধর্মের),- গ্লানিঃ ( গ্লানি),- ভবতি (হয়),-ভারত (হে ভরতবংশী অর্জুন),- অভ্যুত্থানম্ (অভ্যুত্থান ঘটে),- অধর্মস্য (অধর্মের),-তদা ( তখনি ), -আত্মানং  ( নিজের রূপকে রচনা করি),-সৃজামি (লোকের সামনে প্রকট হই),-অহম ( আমি )॥
পরিত্রাণায় (পরিত্রাণ হেতু),-সাধুনাং (সাধুদের),- বিনাশায় (বিনাশ নিমিত্ত),- চ (এবং),- দুষ্কৃতাং (দুষ্কৃতীকারীদের),- ধর্মসংস্থাপনায় (ধর্ম সংস্থাপনের জন্য),-সম্ভবামি (অবতীর্ণ হই),- যুগে যুগে (যুগে যুগে) ॥
উপরোক্ত অর্থ হইতে একসাথে বলা যায়:-
“যখনই ধর্মের গ্লানি  ইন্দ্রিয়গোচর হয়, অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে তখনই হে ভরতবংশী (অর্জুন), পাপীদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতীদের বিনাশ নিমিত্তে এবং  ধর্মসংস্থাপন করার জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।”
 




ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতারের অষ্টম অবতার। এই ভগবান শ্রী কৃষ্ণই  হলেন ধরাতলে অবতীর্ণ শ্রী হরি বিষ্ণুর  অবতার  গুলির মধ্যে ১৬ কলাতে পূর্ণ ও  পরম ব্রহ্মের পূর্ণ অবতার


 ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
দ্বাপর যুগে কংস নামক এক অত্যাচারী রাজার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দেবতারা ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলে, ব্রহ্মা সকল দেবতাদের নিয়ে ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা  করেন। ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের  আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে  বললেন যে, তিনি মথুরায়, বসুদেবের (পূর্ব জন্মে মহর্ষি কাশ্যপ) সহধর্মিণী দেবকীর (পূর্ব জন্মে মাতা অদিতি) অষ্টম গর্ভে জন্ম গ্রহণ করবেন, এবং তিনি কংসাসুরকে বধ করবেন। ওই  সময় তাঁর সহযোগী হবে শেষ নাগ, যার নাম হবে  বলরাম। 
দেবকীর পিতা দেবক ও কংসের পিতা উগ্রসেন আপন দুই ভাই ছিলেন। সেই সূত্রে কংস ছিলেন দেবকীর কাকাতো ভাই অর্থাৎ কংস ছিলেন শ্রীকৃষ্ণের মামা। বসুদেব এবং দেবকীর বিবাহের পর,দেবকীর শ্বশুরবাড়ি গমনের সময় আকাশবাণীর মাধ্যমে  কংস, ভগবান কৃষ্ণর জন্মের কথা জানতে পারেন । এই সংবাদ পেয়ে কংস, দেবকী (পূর্ব জন্মে মাতা অদিতি)  ও বসুদেব (পূর্ব জন্মে মহর্ষি কাশ্যপ)  কে কারাগারে নিক্ষেপ করেন এবং দেবকীর গর্ভজাত সকল সন্তানকে জন্মের পরই হত্যা করতে থাকলেন। এরই মধ্যে দ্বাপর যুগের শেষে ভাদ্র-রোহিণী নক্ষত্রে, এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাত্রিতে,কংসের কারাগারে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়। কৃষ্ণের জন্মদিন,জন্মাষ্টমী বা কৃষ্ণজন্মাষ্টমী হিসেবে পালিত হয়। এর অপর নাম কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, ইত্যাদি। 

দেবী  যোগ মায়ার নির্দেশে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পরই বসুদেব,
শ্রীকৃষ্ণ কে  গোকুলে  নন্দের বাড়িতে রেখে আসেন এবং তাঁর সদ্যজাতা কন্যাকে  
কংসের কারাগারে আনেন। ব্রহ্ম-বৈবর্ত্ত পুরাণের মতে এই কন্যা ছিলেন দেবী যোগ মায়া যাকে আমরা  বলি মা দূর্গা । এই পুরাণে এই সদ্যজাতা কন্যাকে অংশা নামে অভিহিত করা হয়েছে। ভগবান বিষ্ণুর আদেশে  তিনি যশোদার গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এদিকে কংস যখন ওই সদ্য জাত  কন্যা কে দেবকীর অষ্টম সন্তান ভেবে তাঁকে  হত্যা করতে চেষ্টা করেন ,তখন ওই সদ্য জাত  কন্যা দেবী রূপ ধারণ করে আকাশে উঠে গিয়ে বলেন, " তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে।


 এর পর একদিকে নন্দপত্নী যশোদা কৃষ্ণকে আপন পুত্র হিসাবেই লালন পালন করতে লাগলেন। অন্য দিকে শ্রীকৃষ্ণের জন্মের পর থেকেই  তাঁকে হত্যা করার জন্য- কংস বেশ কিছু দৈত্য-দানব গোকুলে পাঠাতে শুরু করলেন ।ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এদের সবাইকে বিভিন্ন কৌশলে বধ করেন এবং একই সাথে বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকাণ্ড গোকুলে ঘটতে থাকে । 


পুতনা উদ্ধার  : -
কংস. কৃষ্ণকে হত্যা করতে  পুতনা নামক এক দানবীকে প্রেরণ করেন। পুতনা মায়াবলে সুন্দরী স্ত্রী-মূর্তি ধারণ করে নন্দের গৃহে আসেন। সেখানে কৃষ্ণকে কপট স্নেহে আদর করতে করতে বিষ মাখা স্তন কৃষ্ণের মুখে দেন।
কিন্তু কৃষ্ণ পুতনার স্তনপানকালে তাঁর জীবনীশক্তি শোষণ করে তাঁকে বধ করেন। মৃত্যুকালে পুতনা দানবীর রূপ ধারণ করে চিৎকার করতে করতে বিশাল জায়গা জুড়ে পতিত হন।
তৃণাবর্ত বধ : -
এরপর কংস কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তৃণাবর্ত নামক অনুচর কে  পাঠান। তৃণাবর্ত মথুরায় এসে ঘূর্ণিবায়ু সৃষ্টি করে কৃষ্ণকে আকাশে উঠিয়ে নেন। এই সময় কৃষ্ণ নিজের শরীরকে এতটা বৃদ্ধি করেন যে- তৃণাবর্ত কৃষ্ণকে বহন করতে অসমর্থ হন। এই সময় ভগবান কৃষ্ণ তৃণাবর্তের গলা টিপে বধ করেন 
বৎসাসুর  ও বকাসুর বধ : -
বৎসাসুর বধ


বকাসুর বধ
এর কিছুদিন পর  কংস কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য ‘বৎসাসুর’ নামক এক অসুরকে পাঠান। এই অসুর বৎসরূপ  (বাছুরের রূপ) ধরে অন্যান্য গরুর সাথে বিচরণ করতে থাকেন। কৃষ্ণ এই বিষয়ে অবগত হয়ে বাছুররূপী অসুরের পিছনের দুই পা ধরে মাথার উপর ঘুরিয়ে  উপর নিক্ষেপ করে বধ করেন। এরপর কংসের আদেশে বকাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য পাখির রূপ ধরে  উপস্থিত হন। ইনি কৃষ্ণকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে কৃষ্ণ তাঁর দুই ঠোঁট ধরে  চিরে ফেলে বকাসুরকে বধ করেন।
কেশী বধ : -
এরপর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য কংস তাঁর দানব অনুচর কেশীকে প্রেরণ করেন। কেশী ঘোড়ার রূপ ধরে গোপদের উপর অত্যাচার শুরু করলে- কৃষ্ণ এর প্রতিকার করার জন্য কেশীর মুখোমুখি হন।
 কেশী বধ 

কেশী কৃষ্ণকে গ্রাস করতে উদ্যত হলে- কৃষ্ণ তাঁর বিশাল বাহু কেশীর মুখের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে শ্বাসরোধ করে বধ করেন।
অঘাসুর বধ : -
অঘাসুর বধ

এরপর কংসের আদেশে অঘাসুর কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য আসেন। অঘাসুর ছিলেন  পূতনা ও বকাসুরের ভাই। ইনি কংসের একজন সেনাপতি হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। অঘাসুর  এসে মায়াবলে অজগর রূপ ধরে মুখ প্রসারিত করে শ্রীকৃষ্ণের অপেক্ষায় ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের বালক সহচরেরা, এই প্রসারিত মুখ দেখে পর্বতগুহা মনে করে তাতে প্রবেশ করেন। শ্রীকৃষ্ণ অঘাসুরের প্রকৃত পরিচয় জেনেও উক্ত মুখে প্রবেশ করে আপন দেহকে প্রসারিত করলে, অঘাসুর  মারা যান।
কালিয় দমন : -
শ্রীকৃষ্ণের কালীয় নাগ দমন

এরপর কৃষ্ণ কালিয় নামক একটি বিষাক্ত সাপকে দমন করেন। উল্লেখ্য যমুনা নদীর এক আবর্তে বহুফনা বিশিষ্ট এই সাপ বহুদিন ধরে বসবাস করতো।  এই সাপটি দীর্ঘদিন ধরে তার স্ত্রী, পুত্র, পৌত্র নিয়ে এই হ্রদে বসবাস করতো। এই সাপের বিষে আবর্তের জল বিষাক্ত হয়ে পড়েছিল। বিষের কারণে এই জলাশয়ের নিকটে কোন গাছ জন্মাতো না বা আবর্তের উপর দিয়ে কোন পাখি উড়ে যেতে পারতো না। জীবদের রক্ষার জন্য কৃষ্ণ লাফ দিয়ে উক্ত আবর্তে প্রবেশ করেন। এরপর কালিয়-এর ফনার উপর নৃত্য করে করে কৃষ্ণ তাকে দমন করেন  কালীয়নাগকে এই জায়গা ছেড়ে অন্যত্রে চলে যেতে বলেন,  একেই কালিয়দমন বলা হয়। 
কৃষ্ণের গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন :-
শ্রীকৃষ্ণের গোবর্ধন পর্বত উত্তোলন

বৃন্দাবনের গোপরা প্রতিবৎসর ইন্দ্রযজ্ঞ করতে
। ইন্দ্রর মনে অহংকার সৃষ্টি হওয়ায়, দর্পহারী কৃষ্ণ-মুরারি এর বিরোধিতা করেন  ফলে সে বৎসর ইন্দ্রযজ্ঞ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ইন্দ্র ক্ষুব্ধ হয়ে বৃন্দাবনে প্রবল বর্ষণ ঘটালেন  কৃষ্ণ এর প্রতিকারের জন্য নিকটস্থ গোবর্ধন পর্বত উঠিয়ে উপর তুলে ধরলেন। ফলে প্রবল বৃষ্টি থেকে বৃন্দাবন রক্ষা পায়। কৃষ্ণ এক সপ্তাহ এই পর্বত ধারণ করার পর ইন্দ্র পরাজয় মেনে বৃষ্টিপাত বন্ধ করে দেন এবং তার ভুল বুঝতে  পেরে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্তুতি করেন  এবং শ্রীকৃষ্ণ কে গোবিন্দ  নামে অভিহিত করেন। এখানে গোবিন্দ কথার অর্থ হলো গাভী(গাই গরু)দের ইন্দ্র (রাজা) 
রাধাকৃষ্ণ-লীলা
রাধাকৃষ্ণ

এই ঘটনার পরই ঘটে বৃন্দাবনে রাধাকৃষ্ণের লীলা, রাধাকৃষ্ণের লীলা স্বচক্ষে প্রত‍্যক্ষ করার জন‍্য স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব নেমে আসেন মর্ত‍্যে।



রাধা কে ? শ্রীরাধা মা লক্ষ্মীর অবতার এবং উনি মা লক্ষ্মীর আত্মা 
শ্রী রাধা, কৃষ্ণের আনন্দ অংশের হ্লাদিনী শক্তি, উনি পরম সত্ত্বা শ্রীকৃষ্ণের (পরমাত্মার প্রতীক) সর্বোত্তম প্রেয়সী। রাধা হলেন  শ্রী কৃষ্ণের সর্বপ্রিয় আরাধিকা। কৃষ্ণের সঙ্গে, রাধাকে সর্বোচ্চ দেবী হিসাবে স্বীকার করা হয়, কেননা, তিনি নিজের প্রেমের মাধ্যমে কৃষ্ণকে নিয়ন্ত্রণ করেন। যে, কৃষ্ণ জগৎ সংসারকে মোহিত করেন, কিন্তু রাধিকা তাকেও মোহিত করেন। শ্রী রাধারাণীর জন্ম দিনটি কে  রাধাষ্টমী বলা হয় ,এই দিনটিও মহা  ধুমধামে পালন করা হয়। এটি কৃষ্ণের জন্মের ১৫ দিন পর পালিত হয়। শ্রী রাধা রানী কে বৃন্দাবনের অধিষ্টাত্রী দেবী বলা হয়। বৃন্দাবনে শ্রী রাধা রানী  এবং শ্রীকৃষ্ণের  যে  লীলা  সেটিই  হলো রাধাকৃষ্ণ-লীলা এখানে  গোপীরা  কৃষ্ণের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য কুঞ্জবনে আসেন, এবং সেখানে গোপীরা ঈশ্বর জ্ঞানে তাঁর সাথে মিলিত হ। কথিত আছে কৃষ্ণ নিজেকে গোপীদের মাঝে ছড়িয়ে দেন। ফলে প্রতি গোপীই একই সময়ে কৃষ্ণের সান্নিধ্য পান। রাধাকৃষ্ণের লীলা স্বচক্ষে প্রত‍্যক্ষ করার জন‍্য স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব নেমে আসেন মর্ত‍্যে।
শ্রীরাধারানীর পরবর্তী জীবন। 
কথিত  আছে যে -শ্রী  কৃষ্ণ দ্বারকার  রাজা হয়ে যখন দ্বারকা চলে যান তখন  শ্রীরাধা ও দ্বারকা চলে যান এবং শ্রীকৃষ্ণের রাজ্ ভবনে দেবদাসী  হয়ে জীবন কাটাতে থাকেন ,একদিন হঠাৎ শ্রী রাধা রানী দ্বারকার রাজভবন থেকে চুপচাপ  বার হয়ে যান এবং বিনা উদ্দেশ্য  নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাটতে  শুরু করেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন,তখন শ্রীকৃষ্ণ সেখানে অবতারিত  হয়ে শ্রীরাধা কে তার অন্তিম ইচ্ছা  জিজ্ঞাসা করেন এবং তখন শ্রী রাধা রানী শ্রীকৃষ্ণের বাঁশির সুর  শুনতে চান,এরপর শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি শুনতে শুনতে শ্রী শ্রীকৃষ্ণের কোলে মাথা রেখে দেহত্যাগ করে বৈকুন্ঠে  গমন করেন। 

কৃষ্ণ-বলরাম কর্তৃক কংসবধ : -
শ্রীকৃষ্ণের কংসবধ

কৃষ্ণকে হত্যা করার কৌশল হিসাবে কংস একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এই আয়োজনে যোগদানের জন্য কংস অক্রুর নামক এক যাদবকে পাঠান। এই আমন্ত্রণ কৃষ্ণ-বলরাম গ্রহণ করেন এবং কংসের দরবারের পথে রওনা দেন। পথে একজন কুব্জার সাথে দেখা হয়। কৃষ্ণ তাঁকে সুন্দরী নারীতে রূপান্তরিত করে দেন। এরপর কৃষ্ণ-বলরাম কংসকে বধ করে কংসের পিতা উগ্রসেনকে মথুরার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করেন।
শঙ্খাসুর বধ : -
কংস বধের পর কৃষ্ণ-বলরাম গুরু সন্দীপন মুনি কাছে ধনুর্বেদ ও আয়ুর্বেদ শেখেন। প্রভাসতীর্থে স্নানের সময় পঞ্চজন নামক এক শঙ্খাসুর সন্দীপন মুনি পুত্রকে সাগর গর্ভে নিয়ে যান। এই অসুর একটি বিশাল দুর্ভেদ্য শঙ্খের মধ্যে বসবাস করতেন। কৃষ্ণ-বলরামের শিক্ষা শেষে গুরুদক্ষিণা হিসাবে সন্দীপন মুনি কৃষ্ণ-বলরামের কাছে দাবী করেন যে-  তাঁর পুত্রকে এনে দেন। এই দাবী অনুসারে কৃষ্ণ-বলরাম এই অসুরকে বধ করে মুনির পুত্রকে উদ্ধার করেন। এই অসুরের আবাসস্থলের শঙ্খ দিয়ে কৃষ্ণ পাঞ্চজন্য শঙ্খ তৈরি  করেন।
জরাসন্ধের সাথে দ্বন্দ্ব: -
কংসের দুই স্ত্রী ছিলেন জরাসন্ধের দুই কন্যা অস্তি ও প্রাপ্তি । কৃষ্ণ কংসকে বধ  করার পর জরাসন্ধ পর পর সতের বার মথুরা আক্রমণ করেন। কিন্তু রণ কৌশলের কারণে, মথুরা দখল করতে সক্ষম হন নি। বারবার আক্রমণে অতীষ্ট হয়ে কৃষ্ণ দ্বারকায় যাদবদের পুরী নির্মাণ করতে আদেশ দেন। কিন্তু যাদবরা দ্বারকায় যাবার আগেই জরাসন্ধ আবার মথুরা আক্রমণ করেন।
 কালযবন
এবার সঙ্গী ছিল কালযবন নামক এক কৃষ্ণ বিদ্বেষী রাজা। কৃষ্ণ এবার কালযবনকে বধ করার জন্য একটি কৌশলের আশ্রয় নিলেন। ইনি কালযবনকে কৌশলে দেখা দিলে, কালযবন কৃষ্ণকে হত্যা করার জন্য তাঁকে অনুসরণ করতে থাকে। কৃষ্ণ পলায়নের ভান করে দূরবর্তী এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। এই গুহায় মুচুকুন্দ নামক এক ঋষি ঘুমিয়ে ছিলেন। কালযবন কৃষ্ণের অনুসরণ করে উক্ত গুহায় প্রবেশ করে এবং অন্ধকারে মুচুকুন্দকে কৃষ্ণ মনে করে পদাঘাত করে। মুচুকুন্দ ঘুম ভেঙে কালযবনের দিকে দৃষ্টিপাত করা মাত্র- কালযবন ভষ্মীভূত হয়। এরপর জরাসন্ধ নিজেই আক্রমণ করতে এলে, জরাসন্ধের হংস নামক একজন অনুচর বলরামের হাতে নিহত হন। হংসের ভাই ডিম্বক এই দুঃখে যমুনা নদীতে আত্মহত্যা করেন। এই দুই বীরে মৃত্যুর পর জরাসন্ধ দুঃক্ষভারাক্রান্ত মনে নিজ রাজত্বে ফিরে যান।
রুক্মিণীকে বিবাহ : -রুক্মিণী কে ? : -মা রুক্মিণী মা লক্ষ্মীর অবতার এবং  উনি মা লক্ষ্মীর শরীর 


শ্রীকৃষ্ণের রুক্মিণী হরণ

বিদর্ভরাজ ভীষ্মকের কন্যা রুক্মিণী কৃষ্ণকে মনে মনে পতিত্ব বরণ করে চর মুখে কৃষ্ণের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দে। । এদিকে ভীষ্মক তার কন্যার জন্য স্বয়ংবর সভার আয়োজন করলে- কৃষ্ণ-বলরামকে সাথে নিয়ে,  রুক্মিণীকে হরণ করেন। এই অপহরণ কালে শিশুপাল নামক একজন রাজা বাধা দিলে- সে কৃষ্ণের কাছে পরাজিত হয়ে স্বদেশে পলায়ন করে। রুক্মিণীর গর্ভে শ্রীকৃষ্ণের দশটি পুত্র ও একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করে। এঁরা ছিলেন- পুত্র : প্রদ্যুম্ন, চারুদেষ্ণা, সুদেষ্ণ, চারুদেহ, সুষেণ, চারুগুপ্ত, চারুবিন্দ, সুচারু, ভদ্রাচারু ও চারু। কন্যা : চারুমতী।
নরকাসুর বধ :-
নরকাসুর প্রাগজ্যোতিষের অধিপতি ছিলেন।  নরকাসুর স্বর্গ আক্রমণ করেন এবং ইন্দ্র পালাতে বাধ্য হন।  নরকাসুর  দেব মাতা অদিতির কান ছিঁড়ে কুণ্ডল জোড়া নিয়ে নেন । ইন্দ্র অদিতির অপমানে ব্যথিত হইয়া,নরকাসুরকে বধ করিবার নিমিত্ত কৃষ্ণকে অনুরোধ করেন। কৃষ্ণ উক্ত অসুরকে বধ করে উক্ত কুণ্ডল উদ্ধার করেন। এই সময় কৃষ্ণ নরাকসুর কর্তৃক অপহৃত ১৬ হাজার গন্ধর্ব, মানুষ ও দেবকন্যা ও অপ্সরাদের উদ্ধার করেন। 
বাণের পরাজয় এবং ঊষা-অনিরুদ্ধের বিবাহ :-
বাণ নামক অসুরের কন্যা ঊষা একবার স্বপ্নে কৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধকে দেখে তাঁর প্রেমে পড়ে যান। পরে ঊষা তাঁর সখী চিত্রলেখার সাহায্যে গোপনে অনিরুদ্ধকে রাজভবনে এনে বিবাহ করেন। এই সংবাদ অবগত হয়ে বাণ অনিরুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। যুদ্ধে বাণের সকল সৈন্য পরাজিত হলে, বাণ নিজেই অনিরুদ্ধের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। এরপর বাণ অনিরুদ্ধকে পরাজিত করে তাঁকে বন্দী করেন।শ্রীকৃষ্ণ এই সংবাদ  জানার পর, প্রদ্যুম্ন ও বলরামকে সাথে নিয়ে বাণের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। এই যুদ্ধে মহাদেব বাণের পক্ষালম্বন করলেও কৃষ্ণের কাছে বাণের পরাজয় ঘটে। এরপর বাণ কৃষ্ণের দয়ায় মহাকাল নামে খ্যাত হয়ে মহাদেবের অনুচরদের অন্তর্গত হন। 
জাম্ববতী ও সত্যভামার সাথে বিবাহ :-
শ্রীকৃষ্ণ-জাম্ববতী
 সত্রাজিৎ নামক এক যাদব সূর্যকে সন্তুষ্ট করে স্যমন্তক নামক একটি মূল্যবান মণি উপহার হিসাবে পান। সত্রাজিত্ এই মণি কিছুদিন নিজের কাছে রেখে পরে তাঁর ভাই প্রসেনজিত্কে রাখতে দেন । প্রসেনজিত্ ছিলেন প্রবল অসংযমী। ইনি এই মণি নিয়ে বনে শিকার করতে গেলে, সিংহের হাতে প্রাণ হারান। সেই সময় সেখানে উপস্থিত ঋক্ষরাজ জাম্বুবান এর অপর নাম জাম্ববান, যিনি ত্রেতা যুগে ভগবান রামচন্দ্রকে সীতা উদ্ধারের জন্য সাহায্য করেছিলেন এই মণি নিয়ে পলায়ন করেন। এদিকে প্রসেনজিৎকে দীর্ঘসময় না দেখে সত্রাজিৎ ধারণা করেন যে, কৃষ্ণ প্রসেনজিৎকে বধ করে এই মণি অধিকার করেছেন। কৃষ্ণ এই বিষয় অবগত হয়ে প্রসেনজিৎকে খোঁজার জন্য বনে গিয়ে মৃত প্রসেনজিৎ ও সিংহকে দেখতে পান। এরপর জাম্বুবানের পদচিহ্ন অনুসরণ করে, জাম্বুবানকে খুঁজে বের করেন। যুদ্ধে কৃষ্ণ তাঁকে পরাজিত করেন  এই সময় তাঁর কন্যা জাম্বববতীকে বিবাহ করেন। কৃষ্ণ মণি উদ্ধার করে এবং সত্রাজিত্কে ফিরিয়ে দেন।  সত্রাজিৎ কৃষ্ণকে সন্দেহ করেছিলেন বলে অত্যন্ত লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে তাঁর পরমাসুন্দরী কন্যা সত্যভামার সাথে বিবাহ দেন।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে সত্যভামা ভূদেবী বা বসুমতী/বসুন্ধরার অবতার।
শ্রীকৃষ্ণ ও সত্যভামার দশটি পুত্রসন্তান জন্মে। সত্যভামার গর্ভে কৃষ্ণ যে দশটি পুত্র লাভ করেছিলেন তারা হলেন ভানু, সুভানু, স্বরভানু, প্রভানু, ভানুমান, চন্দ্রভানু, বৃহদ্ভানু, অতিভানু, শ্রীভানু এবং প্রতিভানু। 
শ্রীকৃষ্ণ -সত্যভামা
শতধন্বাকে বধ : -
শতধন্বা নামে এক ব্যক্তি রাত্রিতে ঐ সত্রজিৎকে বিনাশ করিয়া স্যমন্তক মণি হরণ করে। শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামার নিকটে সেই সম্বাদ শুনিয়া শ্রীকৃষ্ণ বলরামকে সাথে নিয়ে শতধন্বাকে বধ করেন।
দ্রৌপদীর স্বয়ংবরসভায় শ্রীকৃষ্ণ :-
দ্রৌপদীর স্বয়ংবর সভায় ইনি উপস্থিত ছিলেন। অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে দ্রৌপদী লাভ করলে পাণ্ডবদের সাথে অন্যান্য রাজাদের যুদ্ধের সূচনা হয়। যুদ্ধে পাণ্ডবরা প্রাথমিকভাবে জয়ী হলেও শ্রীকৃষ্ণ সকলকে এ যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত করতে সমর্থ হন। এরপর  তাঁর সাথে পাণ্ডবদের সাথে সখ্যতা স্থাপিত হয়।
অর্জুন কর্তৃক সুভদ্রা হরণে শ্রীকৃষ্ণর সাহায্য : -
অর্জুন দ্বাদশবর্ষ ব্রহ্মচর্য ব্রত পালন করে ঘুরতে ঘুরতে দ্বারকায় আসেন। যাদবরা রৈবত পর্বতে অর্জুনকে সংবর্ধনা দেন। এই সময় অর্জুন সুভদ্রাকে দেখে অনুরক্ত হন। শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের এই মনোভাব বুঝতে পেরে অর্জুনকে তাঁর ভগ্নি সুভদ্রাকে হরণ করে বিবাহের পরামর্শ দেন। অর্জুন সুভদ্রাকে অপহরণ করলে বলরাম অর্জুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আয়োজন করলে, শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে নিবৃত্ত করেন। পরে দ্বারকায় সত্যভামার উত্সাহে সুভদ্রার সাথে অর্জুনের বিবাহ হয়।
 শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুনের খাণ্ডববন দহন: -
এই বিবাহের পর, শ্রীকৃষ্ণ কিছুকাল ইন্দ্রপ্রস্থে অবস্থান করেন। । এই সময়  শ্রীকৃষ্ণ ও অর্জুন এই বনকে দগ্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
জরাসন্ধ বধ: -
এর কিছুদিন পর যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন করার ব্যাপারে পরামর্শের জন্য শ্রীকৃষ্ণকে ডেকে পাঠান। শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে- রাজসূয় যজ্ঞের বাধক/প্রতিবন্ধক হবেন মগধের রাজা  জরাসন্ধ। সে জীবিত থাকা অবস্থায় যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞ হতে পারে না। প্রথমে জরাসন্ধের সাথে বিবাদ করতে যুধিষ্ঠির রাজী হন নি, কিন্তু ভীম ও  অর্জুনের  পরামর্শে যুধিষ্ঠির এই যুদ্ধে সম্মতি দেন। যুধিষ্ঠিরের রাজসূয়যজ্ঞের পূর্বে কৃষ্ণ, ভীম ও অর্জুন ছদ্মবেশে মগধে যান। সেখানে কৃষ্ণের পরামর্শে, ভীম জরাসন্ধকে মল্ল যুদ্ধে পরাজিত করে বধ করেন।
শিশুপাল ও শাম্ব বধ : -
রাজসূয়যজ্ঞে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসাবে পিতামহ ভীষ্মের আদেশে মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে অর্ঘ দিলে চেদিরাজ শিশুপাল ঈর্ষান্বিত হয়ে শ্রীকৃষ্ণের নিন্দা করা শুরু করেন। শিশুপালের ১০০ দোষ পূর্ণ হবার পরেই শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্র দ্বারা শিশুপালের শিরশ্ছেদ করেন। শিশুপালের এক বন্ধুর নাম ছিল শাম্ব। শিশুপাল কৃষ্ণের হাতে নিহত হলে ইনি পৃথিবীকে যাদব-শূন্য করার প্রতিজ্ঞা নেন। শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরের রাজসুয় যজ্ঞে অবস্থান কালেই ইনি যাদবদের আবাসস্থল দ্বারকা আক্রমণ করে ধ্বংস করেন। শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকায় ফিরে এসে শাম্বকে শাস্তিদানের জন্য যাত্রা করেন। শাম্ব তখন সমুদ্রের উপর অন্যান্য দানবদের সাথে অবস্থান করছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ এই অবস্থায় আক্রমণ করেন। বহু মায়া যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ সুদর্শন চক্র দ্বারা শাম্বকে বধ করেন।
দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ ও শ্রীকৃষ্ণ-কর্তৃক তাঁর লজ্জা নিবারণ : -
যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞে ঈর্ষান্বিত হয়ে দুর্যোধন শকুনি মামার পরামর্শে কপট পাশাখেলায় আমন্ত্রণ জানান। এই খেলায় যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীসহ রাজ্যপাট হারান। দুর্যোধনের নির্দেশে দুঃশাসন রজস্বঃলা দ্রৌপদীর চুলধরে সভায় আনেন। কর্ণের পরামর্শে প্রকাশ্য সভায় দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করা শুরু করলে, দ্রৌপদীর কাতর আহ্বানে শ্রীকৃষ্ণ অলৌকিকভাবে তাঁকে অশেষ কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখেন।



কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকা :-



কুরুপাণ্ডবের এই যুদ্ধ নিবারণের জন্য 
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ  স্বয়ং দূত হিসাবে কাজ করেন। কুরুপাণ্ডবের যুদ্ধে উভয় পক্ষ তার সাহায্য প্রার্থনা করলে- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দুই অক্ষৌহিণী (এক অক্ষৌহিণী =১০৯৩৫০ পদাতিক সৈনিক, ৬৫,৬১০ অশ্বারোহী সৈনিক , ২১৮৭০ হস্তী, ২১,৮৭০ রথদুর্ধর্ষ নারায়ণী সৈন্য দুর্যোধনকে দিয়েছিলেন ,কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ  স্বয়ং পাপীদের পরিত্রাণ এবং দুষ্কৃতীদের বিনাশ নিমিত্তে এবং  ধর্মসংস্থাপন করার জন্য অর্জুনের রথের সারথী হয়েছিলেন। এই যুদ্ধের পূর্বে পাণ্ডবদের ইনি একবার সন্ধির প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু কৌরবরা তাতে অসম্মতি জানালে- সে প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরু ঠিক আগে শত্রুপক্ষে আত্মীয়, বন্ধু ও গুরুকে দেখে অর্জুন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। এই সময় শ্রীকৃষ্ণ তাকে ক্ষত্রিয় যোদ্ধার ধর্ম স্মরণ করিয়ে দিয়ে এবং বিভিন্ন প্রকার যোগশাস্ত্র ও বৈদান্তিক দর্শন ব্যাখ্যা করে তাকে যুদ্ধ করার জন্য উৎসাহিত করেন। ভগবানের  এই সময়ের মুখ নিঃসৃত বাণী কে গীতা/ভগবদ্গীতা বলা হয় গীতা মানব ধর্মতত্ত্বের একটি সংক্ষিপ্ত পাঠ এবংমানব জাতির জীবনচর্যার একটি ব্যবহারিক পথনির্দেশিকা    


                               

এই যুদ্ধে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৈষ্ণবাস্ত্র নিবারণ করে  অর্জুনকে রক্ষা করেছিলেন। জয়দ্রথ, দ্রোণ ও কর্ণবধের সময় কৃষ্ণ সাহায্য করেছিলেন। অশ্বত্থামা ব্রহ্মশির নিক্ষেপ করে উত্তরার গর্ভস্থ সন্তান পরীক্ষিত্কে হত্যা করলে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ  তাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন।মূলত কৃষ্ণের সহায়তাতেই পাণ্ডবরা কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে গান্ধারী তাকে অভিশাপ দিয়ে বলেছিল- এই জ্ঞাতিক্ষয় যুদ্ধ নিবারণে কৃষ্ণ সমর্থ হয়েও তা করেন নি বলে- কৃষ্ণের বংশ ধ্বংস হবে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি পাপ, পুন্য,অভিশাপ সবকিছুর উপরে ,তিনি কিন্তু গান্ধারীর এই অভিশাপ কে  মাথা পেতে নিয়েছিলেন।     
কৃষ্ণের শেষ জীবন : -
যুদ্ধ শেষে ইনি দ্বারকায় ফিরে যান। এর পর  ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, ধৰ্ম প্রতিষ্টার জন্য অনেক দৈত্য ও অসুর কে দমন করেন। 

কথিত আছে- একবার বিশ্বামিত্র, কণ্ব ও নারদ মুনিগণ দ্বারকায় গেলে যাদবেরা শ্রীকৃষ্ণের পুত্র শাম্বকে গর্ভবতী স্ত্রীবেশে সাজিয়ে মুনিদের কাছে নিয়ে যান এবং বলেন যে এ বভ্রুর স্ত্রী এবং তাঁরা ঋষিদের কাছে জানতে চান যে- এর গর্ভে কি আছে। মুনিরা প্রকৃত বিষয় অবগত হয়ে অভিশাপ দেন যে শাম্বের গর্ভে লৌহমুশল জন্মাবে। এবং উক্ত মুশল থেকেই যাদব-বংশ ধ্বংস হবে।
এই শাপে  পরদিন শাম্ব একটি লৌহমুষল প্রসব করেন। এই মুষল যাদবরা সমুদ্রে নিক্ষেপ করেন। শ্রীকৃষ্ণ চারদিকে অমঙ্গলের চিহ্ন দেখে সকলকে সমুদ্রতীরবর্তী প্রভাসতীর্থে দেবতাদের পূজা দিতে বলেন। এরপূর্বে কৃষ্ণ বলরাম, উগ্রসেন প্রমুখ নগরে কঠোরভাবে সুরাপান নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু পূজা উপলক্ষে একদিনের জন্য সুরাপানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু যাদবরা প্রচুর সুরাপান করে উন্মত্ত হয়ে উঠেন পরস্পর কলহ করতে থাকেন। একসময় উত্তেজিত সাত্যকি কৃতবর্মার শিরশ্ছেদ করে। অন্যান্যের পানপাত্রের আঘাতে সাত্যকি ও কৃষ্ণ পুত্র প্রদ্যুম্ন নিহত হন। এরপর শ্রীকৃষ্ণ একমুঠো ধুলো হাতে নিতেই সেখানকার সকল ঘাসই মুষলে পরিণত হয়। উক্ত মুষল নিয়ে সকল যাদব নিজেদের মধ্যে বিবাদ করে সকলেই মৃত্যুবরণ করেন।


যদুবংশ ধ্বংস প্রাপ্ত হওয়ার পর- কৃষ্ণ-বলরাম সংসার ছেড়ে বনে চলে যান। বনে যাবার সময় অর্জুনের কাছে তিনি তাঁর সারথি দারুককে পাঠিয়ে সকল বিষয় অবগত করান। বনে গিয়ে ইনি যোগাবলম্বনপূর্বক একস্থানে শয়ন করে থাকলেন। ইতিমধ্যে বলরাম দেহত্যাগ করেন। এই সময় জরা নামক এক শিকারী হরিণ মনে করে- শ্রীকৃষ্ণের পায়ে শরবিদ্ধ করে। এর পর শ্রীকৃষ্ণ দেহত্যাগ করেন এবং বৈকুন্ঠে  গমন করেন
প্রভু  শ্রীকৃষ্ণ  প্রভু জগন্নাথ;-
কথিত আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের  হৃদয় [ব্রহ্ম পদার্থ]রয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে।


বিশ্বাস করা হয়, এই জগন্নাথ মন্দিরে ভগবান জগন্নাথের মূর্তির ভিতরে এখনও শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় স্পন্দিত হয়।  ১২ বছর পর পর ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং তাদের বোন সুভদ্রার মূর্তি পরিবর্তন করা হয়। যখনই এই প্রতিমাগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়, তখনই পুরো শহরের বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মন্দিরের চারপাশে সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায়। মন্দিরের নিরাপত্তা সিআরপিএফ-এর হাতে তুলে দেওয়া হয় । এই সময় মন্দিরে কারও প্রবেশ করা চলে না। এই মূর্তিগুলি প্রতিস্থাপন করার জন্য শুধুমাত্র একজন পুরোহিতকে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। মূর্তি পরিবর্তন করার সময়, পুরোহিতের হাতে গ্লাভস থাকে এবং চোখ বেঁধে রাখা হয় যাতে তিনিও মূর্তিগুলি দেখতে বা সরাসরি অনুভব  করতে না পারেন। এই অন্ধকারেই প্রথা মেনে ভগবান জগন্নাথের পুরনো মূর্তি থেকে নতুন মূর্তিতে ব্রহ্ম পদার্থ (শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়) পরিবর্তন করা হয়। মূর্তি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল এই পুরানো মূর্তি থেকে ব্রহ্ম পদার্থকে (শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়) নতুনটিতে স্থানান্তর করা। যখন মূর্তি পরিবর্তন হয় তখন সবকিছুই নতুন হয় কিন্তু যা কখনোই পরিবর্তন হয় না তা হল এই ব্রহ্ম পদার্থ। এই ব্রহ্ম পদার্থ (শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়) সম্পর্কে একটি বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। কেউ যদি এই ব্রহ্ম পদার্থ দেখে ফেলেন, তবে সঙ্গে সঙ্গে তার মৃত্যু হবে। আজ পর্যন্ত যে সকল পুরোহিত ভগবান জগন্নাথের পুরানো দেব মূর্তি থেকে নতুন মূর্তিতে ব্রহ্ম পদার্থ স্থাপন করেছেন, তাঁরা জানান যে, পুরানো মূর্তি থেকে ব্রহ্ম পদার্থকে (শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়) নতুনটিতে স্থানান্তর করার সময় একেবারে অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, মনে হয় হাতের মধ্যে একটা নরম তুলতুলে খরগোশ যেন লাফাচ্ছে 

 লেখকের মন্তব্য:-এই নিবন্ধটি ভগবান জগন্নাথের ঐশ্বরিক অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে। যদি কেউ বা কোনও সংস্থা এই নিবন্ধের কোনও বিষয়বস্তুর সাথে একমত না হন  তবে তিনি বা তারা এটিকে দলিল প্রমাণ সহ মন্তব্যে উল্লেখ করতে পারেন এবং এটি সংশোধন করা হবে। ডকুমেন্টারি প্রমাণ এবং তথ্যের উৎস  ছাড়া এই বিষয়ে যে কোনও মন্তব্যকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং  অসাধু বলে গণ্য করা হবে এবং মুছে ফেলা হবে। 

সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক। 🙏হে প্রভু আমাকে শুধু জ্ঞান দাও ,ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏









আমি এই আর্টিকেল টি আমার এক মাত্র 
ছেলে ৺  >আকাশের< জন্য উৎসর্গ করিলাম।
Appreciation Mail of  Jérémie Lumbroso
lecturer Princeton University. USA



 জয় শ্রীকৃষ্ণ -জয় জগন্নাথ। আসুন প্রভু কে স্মরণ করে শোনা যাক ইস্কনের সচি  কুমার  দাসের  কন্ঠে গাওয়া  সুমধুর কৃষ্ণ নাম সংকীর্তন। সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন।🙏

শুনুন ধর্মনিষ্ঠ মহান কৃষ্ণ ভক্ত সচি কুমার দাসের 
কন্ঠে গাওয়া সুমুধুর হরিনাম সংকীর্তন।     

       
       

 প্রবীর  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ও কল্কি অবতার।

ষড়রিপু এবং মানব জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব:ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উপায়।

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।