অক্ষয় তৃতীয়া এবং অক্ষয় তৃতীয়ার পূজা ।


সংস্কৃত ভাষায়, "অক্ষয়" (अक्षय) শব্দটি অর্থ "যাহার ক্ষয় হয় না,যাহা  চিরস্থায়ী"। অক্ষয় তৃতীয়া আমাদের দেশে একটি পুণ্যতিথি রূপে বিবেচিত। এটি বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়াতে পড়ে।অক্ষয় তৃতীয়া (ইংরেজি: Akshaya Tritiya) হল  বৈশাখ মাসের শুক্লাতৃতীয়া অর্থাৎ শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথি। হিন্দু ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ তিথি।
অক্ষয়তৃতীয়ার গুরূত্ব :-
১)বদ্রিনারায়ণ থেকে সামান্য দূরে  মানা গ্রাম। এই গ্রামের ব্যাস গুহায় বসে  ব্যাসদেব শ্রুতিলিখনকারী গণেশজিকে সঙ্গে নিয়ে অক্ষয় তৃতীয়ার পবিত্র দিনে শুরু করেছিলেন  মহাভারত রচনা। 
২) এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
৩) এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।


৪) এদিনই সত্যযুগের সূচনা হয়।
৫) এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
৬) এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নেন পৃথিবীতে। সেই  জন্য এই দিনটি পরশুরাম জয়ন্তী হিসেবে পালিত হয়


৭)এদিনই ভক্ত সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দু:খ মোচন করেন।
৮)এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন ।


৯) এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
১০)  গঙ্গোত্রী  
এবং যমুনোত্রীর যে মন্দির ,এইদিনেই তার দ্বার খোলা হয়।


) রাজা যুধিষ্ঠির অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে পেয়েছিলেন অক্ষয়পাত্র। এই পাত্রের সাহায্যে রাজা যুধিষ্ঠির বনবাসের সময় অতিথি এবং নিজেদের ক্ষুধা নিবারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং পরে  সারা রাজ্যের সমস্ত দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন
এহেন অক্ষয়তৃতীয়াতে যেকোন শুভকাজ শুরু করা ভালো। এদিনের  বিশেষত্ব হচ্ছে - এদিন যে কাজ করা হোক না কেন তার ফল হয়ে দাঁড়ায় অক্ষয়।
যদি ভালো কাজ করা হয় তার জন্যে আমাদের অক্ষয় পূণ্যলাভ হয়  আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে অক্ষয় পাপলাভ হয় । তাই এদিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিত।খেয়াল রাখতে হয় ভুলেও যেন কোনো খারাপ কাজ না হয়ে যায়।কখনো যেন মুখ থেকে কটু কথা না বেরোয় ।তাই এদিন কারোও ক্ষতি,অথবা মনে আঘাত দেত্তয়া উচিত নয়।  এদিন যথাসম্ভব মৌন থাকা জরুরী।  এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান,অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে।
লোকপরম্পরাগত কথা, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন গঙ্গা থেকে জোয়ারের জল পুণ্যঘটে এনে ঘরে বা ব্যবসায় ক্ষেত্রে ছেটানো মঙ্গলজনক।এই পুণ্যতিথির গঙ্গাজল সার্বিক দুর্ভোগ দূরকারক।
অক্ষয় তৃতীয়ার পূজা 
অক্ষয় তৃতীয়ার  দিনে ব্রহ্ম মুহুর্তে উঠে (সমুদ্র বা গঙ্গায়) স্নান করার পরে শান্ত মনে  ভগবান বিষ্ণুর পূজা করার  বিধান রয়েছে। যব বা গমের ছাতু , শসা, ছোলা,গুড়,ডাল, ডালপানা ইত্যাদি  নৈবেদ্য [ দেবতার উদ্দেশে নিবেদনীয় দ্রব্য] দেবতাকে অর্পণ করা হয়।এরপরে ব্রাহ্মণকে ফল,খাদ্য,এবং বাসন,  কাপড় ইত্যাদি  দান,এবং দক্ষিণা দেওয়া হয়
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, এই দিনে ছাতু অবশ্যই খাওয়া উচিত এবং এই দিনে মহিলারা নতুন পোশাক এবং গহনা পরেন। এই দিনে গরু, জমি, সোনার পাত্র ইত্যাদি অনুদানও  করা হয়।
 
 অক্ষয় তৃতীয়ার  দিনে মাটির কলসি,পাখা, ছাতা, চাল, লবণ, ঘি, তরমুজ, শসা, শাক, তেঁতুল,ছাতু  ইত্যাদি গ্রীষ্মে উপকারী জিনিস দানকে পুণ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই দিনে লক্ষ্মী নারায়ণকে সাদা পদ্ম বা সাদা গোলাপ বা হলুদ গোলাপ দিয়ে উপাসনা করা হয় অক্ষয় তৃতীয়ার আগের রাতে মা ভবতারিণীর পুজোয় জীবনে তুমুল উন্নতি ও শক্তির সঞ্চার ঘটে। অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে মা বৈভব-লক্ষ্মীর  শিবের,গণেশের ও কুবের দেবতার পূজা   করা হয় ৷ সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর  কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয়  হোক। 🙏





 প্রবীর  ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের  উৎকল ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  প্রবীরের  বইগুলি Amazon.com. flipkart.com, abebooks.com এর মাধ্যমে বিক্রি হয়। গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এখনো পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি লোক  প্রবীরের লেখা আর্টিকেল গুলি পড়েছেন।
Comment of Author:-This article has been penned under the divine inspiration of Lord Jagannath. If anybody or any organization doesn't agree with any content of this article, he or they may mention it in the comments with documentary evidence and it will be corrected. Any comments in this regard without documentary evidence and source of Information will be treated as mala fide and will be deleted.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সত্য,ত্রেতা,দ্বাপর,কলি এই চার যুগের সময়,পরিমাণ,বৈশিষ্ট্যসমূহ ও অবতার এবং যুগ পরিবর্তন ও কল্কি অবতার।

ষড়রিপু এবং মানব জীবনে ষড়রিপুর প্রভাব:ষড়রিপু কে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করার উপায়।

আরতি কি ? আরতি কি ভাবে করবেন ? সন্ধ্যা দেওয়ার নিয়ম কি ? পড়ুন এবং দেখুন ।