সনাতন ধর্মের লক্ষণঃ শাস্ত্রগ্রন্থের সংখ্যা এবং ৩৩ কোটি দেবতার ধারণা।
ধর্মঃ।
ধারণাদ্ ধর্ম ইত্যাহুধর্মেণ বিধৃতাঃ প্রজাঃ।
যঃ স্যাদ্ ধারণসংযুক্তঃ স ধর্ম ইতি নেতরঃ ॥
ধারণাদ্ ধর্ম ইত্যাহুধর্মেণ বিধৃতাঃ প্রজাঃ।
যঃ স্যাদ্ ধারণসংযুক্তঃ স ধর্ম ইতি নেতরঃ ॥
অর্থাত্ ধারণ ক্রিয়া (ধৃ+মন্) থেকে ধর্ম শব্দের উত্পত্তি । ধর্ম সৃষ্টিকে বিশেষভাবে ধারণ করে রয়েছে । বৈষয়িক দর্শনে বলা হয়েছে-যতোহভ্যুদয়-নিঃশ্রেয়সিদ্ধি সঃ ধর্মঃ ॥ অর্থাত্ যা থেকে জাগতিক কল্যাণ ও মোক্ষলাভ হয়-সেটিই ধর্ম।
হিন্দু।
হিন্দু শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত সিন্ধু শব্দটি থেকে। সিন্ধু ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক নদীর নাম। ঐতিহাসিকভাবে সিন্ধুনদের পূর্বে বর্তমান ভারতকেই হিন্দুদের ভূমি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তীকালের আরবি সাহিত্যেও আল-হিন্দ শব্দটির মাধ্যমে সিন্ধু নদ অববাহিকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভারতের নামের সমার্থক শব্দ হিসেবে হিন্দুস্তান বা হিন্দুস্থান শব্দটির উৎপত্তি হয়। এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ "হিন্দুদের দেশ"।
হিন্দুধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
হিন্দুধর্মকে বলা হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম। কারণ এটি (হিন্দু ধর্ম ) প্রাচীনযুগে আর্বিভূত হয়েছে এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা একে সনাতন ধর্ম ("চিরন্তন নিয়ম বা চিরন্তন পথ") বলে আখ্যায়িত করেন। হিন্দু ধর্ম সনাতনি বা চিরন্তন কর্তব্যের কথা যেমন- সততা, অহিংসা, ধৈর্যশীলতা, সমবেদনা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আরো অনেক মানবিক উৎকর্ষ জনক উপায়ের কথা বলে এবং বাহ্যিক আচার বিচারের থেকে পরম সত্যের জ্ঞানকে সর্বদাই মুখ্য স্থান দেয়। অনাদি কাল থেকে এই পরম্পরা চলে আসছে।
হিন্দুধর্মের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে (কিন্তু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়) পুরুষার্থ, যা মানব জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য। এর মধ্যে আছে ধর্ম (নীতি), অর্থ, কাম এবং মোক্ষ (যার অর্থ ইহলোকে থেকে মুক্তি), কর্ম (কাজ, অভিপ্রায় ও ফল) এবং বিভিন্ন ধরনের যোগ সাধনা (মোক্ষ লাভের পথ)।
হিন্দুদের নিত্যকর্মের তালিকায় আছে পূজা, অর্চনা, ধ্যান, পারিবারিক সংস্কার , বার্ষিক অনুষ্ঠান এবং তীর্থযাত্রা। কেউ কেউ সমাজ ও ঐহিক(পার্থিব )সুখ ছেড়ে পারমার্থিক শান্তির আশায় ও মোক্ষ লাভের উদ্দেশ্যে সন্ন্যাস গ্রহণ করেন ।
হিন্দুধর্ম অনুগামীদের সংখ্যা।
জনসংখ্যার বিচারে হিন্দুধর্ম খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলামের পরেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মমত। এই ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা ১৩৫ কোটি। এদের মধ্যে ১১৫ কোটি হিন্দুমতে বিশ্বাসী মানুষ বাস করেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে। এছাড়া বাংলাদেশে (১কোটি ৩০ লক্ষ), নেপাল (৩৩,০০০,০০০), মরিশাস (২৫০,০০০) ও ইন্দোনেশীয় দ্বীপ বালিতে ( ৩০০,০০০) উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হিন্দুরা বাস করেন।
হিন্দুধর্মে শাস্ত্রগ্রন্থের সংখ্যা।
হিন্দুধর্মে শাস্ত্রগ্রন্থের সংখ্যা প্রচুর। হিন্দুশাস্ত্র শ্রুতি ও স্মৃতি নামে দুই ভাগে বিভক্ত।
এই গ্রন্থগুলিতে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও পুরাণ আলোচিত হয়েছে এবং ধর্মানুশীলন সংক্রান্ত নানা তথ্য বিবৃত হয়েছে। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বেদ সর্ব প্রাচীন, সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
এই গ্রন্থগুলিতে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও পুরাণ আলোচিত হয়েছে এবং ধর্মানুশীলন সংক্রান্ত নানা তথ্য বিবৃত হয়েছে। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বেদ সর্ব প্রাচীন, সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
হিন্দুধর্মে বেদের সংখ্যা চার: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ। প্রত্যেকটি বেদ আবার চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: সংহিতা (মন্ত্র ও আশীর্বচন), আরণ্যক (দর্শন ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান ও প্রতীকী যজ্ঞ),
ব্রাহ্মণ (ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও যজ্ঞাদির উপর টীকা) ও উপনিষদ্ (এতে পরমেশ্বর,পরমাত্মা ও জীবাত্মার স্বভাব ও সম্মন্ধ কে দাৰ্শনিক এবং জ্ঞান পূর্বক বর্ণনা করা হয়েছে।) অন্যান্য প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হল পুরাণ (১৮ টি ), ও ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ মহাভারত ও ভগবদ্গীতা ।
সনাতন ধর্মের মূল লক্ষণ :-মনুসংহিতা অনুসারে নিম্লোক্ত চারটিকে বলা হয় সনাতন ধর্মের মূল লক্ষণ।
ক) বেদ বা গীতা বা উপনিষদে বিশ্বাস একজন সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রধান লক্ষণ।
খ)স্মৃতি :বিভিন্ন স্মৃতি শাস্ত্রের (যেমনঃ মনুসংহিতা) অনুশাসন মানা একজন সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রধান লক্ষণ।
গ) সদাচার :মহাপুরুষদের সদাচার থেকে শিক্ষা নেওয়া একজন সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রধান লক্ষণ ।
ঘ) বিবেকের বাণী [বিবেক মানে ধর্ম ও অধর্মের, পাপ ও পুণ্যের কিংবা উচিত ও অনুচিতের পার্থক্য নির্ণয়ে মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি বা বিচারবোধ] যেমন শরণাগত ব্যক্তির জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনে মিথ্যা বলা। একজন সনাতন ধর্মাবলম্বীর লক্ষণ[পরিচয়/ নিদর্শন] ।
সনাতন ধর্মের বাহ্য লক্ষণঃ-
সনাতন ধর্মের বাহ্য লক্ষণঃ-
धृति: क्षमा दमोऽस्तेयं शौचमिन्द्रियनिग्रह:।
শৌচমিন্দ্রিয়-নিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো
দশকং ধর্মলক্ষণম্॥
(মনুসংহিতা)
অর্থাত্
धीर्विद्या सत्यमक्रोधो दशकं धर्मलक्षणम्।। (मनुस्मृति ६.९२)
ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ংশৌচমিন্দ্রিয়-নিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো
দশকং ধর্মলক্ষণম্॥
(মনুসংহিতা)
অর্থাত্
★সহিষ্ণুতা
★ক্ষমা
★চুরি না করা
★শুচিতা
★ইন্দ্রিয়সংযম
★শুদ্ধ বুদ্ধি
★জ্ঞান
★সত্য
★ক্রোধহীনতা
এইটি দশটি লক্ষণের মধ্যে সনাতন ধর্মের বাহ্য লক্ষণ।
হিন্দুধর্মে ৩৩ কোটি দেবতার ধারণা-
সংস্কৃতে কোটি শব্দের দুটি অর্থ, একটি হল 'প্রকার' এবং অপরটি হল 'কোটি' (Crore)।
শতপথ ব্রাহ্মণ এবং অন্যান্য গ্রন্থে এটি পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অথর্ব বেদের দশম অধ্যায় সপ্তম সুক্তের ত্রয়োদশ শ্লোকে বলা হয়েছে-
যস্য ত্রয়স্ত্রিংশদ্ দেবা অঙ্গে সর্বে সমাহিতাঃ।
স্কম্মং তং ব্রুহি কতমঃ স্বিদেব সঃ।।
অর্থাৎ, পরম ঈশ্বরের প্রভাবে এই তেত্রিশ জন দেবতা বিশ্বকে বজায় রেখেছেন।
ঋগ্বেদে শুরুর অধ্যায়ে তিন (৩) দেবতার কথা বলা হয়েছে। অগ্নি, বায়ু এবং সূর্য্য। ঋগ্বেদের পরবর্তী অধ্যায়ে তেত্রিশ (৩৩) রকমের দেবতার কথা বলা হয়েছে ।এরা হলেন দ্বাদশ আদিত্য+একাদশ রুদ্র+অষ্টবসু+দুই অশ্বিন=তেত্রিশ।
এনাদের মধ্যে এগারো জন পৃথিবীতে, এগারো জন বায়ুতে এবং বাকি এগারো জন মহাকাশ বা অন্তরিক্ষে অবস্থান করছেন।
এই তেত্রিশ জন হলেন
দ্বাদশ আদিত্য:-
ভাগবত পুরাণ অনুসারে এই দ্বাদশ আদিত্য হলেন:-
1.বিবস্বান্
2.অর্যমা
3.পূষা
4.ত্বষ্টা
5.সবিতা
6.ভগ
7.ধাতা
8.বিষ্ণু (দ্বাদশ আদিত্যের অধিপতি)
9.বরুণ
10.মিত্র
11.ইন্দ্র
12.অংশুমান
একাদশ রুদ্র:-
এই একাদশ রুদ্র হলেন মহাদেব শিবের বিভিন্ন রূপ
1.মন্যু
2.মনু
3.মহিনস
4.মহান
5.শিব
6.ঋতুধ্বজ
7.উগ্ররেতা
8.ভব
9.কাল
10.বামদেব
11.ধুতব্রত
অনেক গ্রন্থ অনুসারে একাদশ রুদ্র হলেন মানব শরীরের দশ চালিকা শক্তি এবং এক আত্মা। বৃহদারন্যক উপনিষদে একাদশ রুদ্র হলেন
প্রাণ(নিঃশ্বাস)
অপান(প্রশ্বাস)
ব্যন
সমান
উদাম
নাগ
কুর্ম্ম
কৃকল
দেবদত্ত
ধনঞ্জয়
আত্মা
অষ্টবসু:-
মহাভারত অনুসারে অষ্টবসু হলেন
1.ধরা (পৃথিবী)
2.অনল (অগ্নি)
3.অনিল (বায়ু)
4.অহ (ব্যপ্ত)
5.প্রত্যুষ
6.প্রভাষ
7.সোম
8.ধ্রুব
দুই অশ্বিন:-
● নাসত্য ● দস্র।
অর্থাৎ দ্বাদশ আদিত্য+একাদশ রুদ্র+অষ্টবসু+দুই অশ্বিন=তেত্রিশ।
সবাই ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন। সমগ্র মানব জাতি ও জীব জন্তুর কল্যাণ হোক। শান্তির জয় হোক,সত্যের জয় হোক,মানবতার জয় হোক ,সনাতন ধর্মের জয় হোক।
ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণ হিতায় চ।
জগদ্ধিতায় শ্রী কল্কি নাথায় নমো নমঃ।।🙏
হে প্রভু আমাকে শুধু জ্ঞান দাও , ভক্তি দাও আর শক্তি দাও🙏
পরম ব্রহ্ম |